রুশ বাহিনীর কাছ থেকে দখলমুক্ত ইজিয়ামে গণকবরের খোঁজ, নিন্দা

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৬:৩৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২

ইউক্রেনের রুশ অধিকৃত শহর ইজিয়ামের বাইরে একটি গণকবর খুঁজে পাওয়া গেছে এবং বলা হয়েছে যে, সেখানে প্রায় সমস্ত মৃতদেহেই নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে। এ ঘটনায় পশ্চিমা নেতারা বৃহস্পতিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সম্প্রতি ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের পুনর্দখল করা একটি পাইন বনে এই গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। কবরগুলো দ্রুত খনন করে কর্মকর্তারা ৪৫০ জনের মৃত্যু সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। এ সব কবরের কোন কোনটিতে কাঠের ক্রস দিয়ে চিহ্নিত পাওয়া গেছে।

খারকিভ আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান ওলেগ সিনেগুবভ সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন, ‘আজকে যে সমস্ত মৃতদেহ উত্তোলন করা হয়েছে, এদের ৯৯ শতাংশের মধ্যে সহিংসভাবে হত্যার আলামত দেখা গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেশ কয়েকটি মৃতদেহের পিঠের পিছনে হাত বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং একজনকে গলায় দড়ি দিয়ে পেচানো অবস্থায় মাটিচাপা দেয়া হয়েছে।’

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘রাশিয়া শুধু হত্যা, নির্যাতন ও দুর্ভোগের চিহ্ন রেখে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, কিছু দেহাবশেষ তোলা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে শিশু এবং অনেক লোককে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে।

Nagad

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্লকের পররাষ্ট্র নীতির বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, প্রায় সাত মাসের দীর্ঘ যুদ্ধে রুশদের রেখে যাওয়া নতুন একটি গণকবর আবিষ্কারে আমরা ‘গভীরভাবে মর্মাহত’।

তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং জেনেভা কনভেনশনকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে রুশ বাহিনীর এই অমানবিক আচরণ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, কবরগুলি আরও প্রমাণ দিয়েছে যে রাশিয়া তার পশ্চিমপন্থী প্রতিবেশী দেশটিতে যুদ্ধাপরাধ করছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ইজিউমে যা ঘটেছে তা নৃশংসতা।

ম্যাক্রোঁ এক টুইটে ‘রুশ দখলে ইউক্রেনের ইজিয়ামে সংঘটিত নৃশংসতার তীব্র নিন্দা জানান।’
তিনি বলেন, যারা দায়ী ‘তাদের কাজের জবাব দিতে হবে। ন্যায় বিচার ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না।’
খারকিভ এবং ডোনেটস্ক থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রবল চাপের মুখে রাশিয়ান বাহিনী পিছু হটার পর এই গণকবর আবিষ্কার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।

উজবেকিস্তানে এক আঞ্চলিক সম্মেলনে পুতিনকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন এখন ‘যুদ্ধের সময় নয়’।

উজবেকিস্তান সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের একদিন পর এই গণকবর আবিষ্কার হলো। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমনের মাধ্যমে এই যুদ্ধের সূচনা ঘটে।

ব্লিঙ্কেন ওয়াশিংটনে বলেন, ‘আমি মনে করি আপনি চীন ও ভারতের কাছ থেকে যা শুনছেন, তা ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রভাব সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের প্রতিফলন।’

কিন্তু এই মাসে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণে তার বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার জোরালো প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও পুতিন অবিচল ছিলেন এবং ওয়াশিংটন কিয়েভের জন্য আরও ৬০০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে।

ইজিয়াম গণকবরের তদন্ত শুরু হওয়ার সাথে সাথে, জাতিসংঘ রাশিয়ার বিরোধিতাকে অতিক্রম করে জেলেনস্কিকে ভিডিওর মাধ্যমে আগামী সপ্তাহের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেয়ার অনুমতির পক্ষে ভোট দেয়।
১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১০১ টি দেশ সাধারণ পরিষদে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত না হয়ে জেলেনস্কিকে ‘একটি প্রাক-রেকর্ড করা বিবৃতি উপস্থাপন করার’ অনুমতি দেয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে। রাশিয়াসহ সাতটি সদস্য দেশ প্রস্তাাবের বিপক্ষে ভোট দেন এবং ১৯টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে।