সাবিনা-মাসুরার গ্রামে আনন্দের বন্যা

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাসাতক্ষীরা সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১:৫১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২

সংগৃহীত

সাফ চ্যাম্পিয়ন্সশিপে প্রথমবারের মতো শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছেন বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা। এই নারী ফুটবল দল এখন সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চ্যাম্পিয়ন। গত সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে পরাজিত করেছে বাংলাদেশ।

এটিই বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য অনেক বড় অর্জন। আর এই দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ও মাসুরা পারভীনের বাড়ি সাতক্ষীরায় বইছে আনন্দের জোয়ার। ওই দিন বিকেল থেকেই শহরের সবুজবাগে সাবিনাদের বাড়িতে খেলা দেখছেন এলাকার অনেক মানুষ।

ফাইনালে গোল না পেলেও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার গৌরবে গৌরবান্বিত সাবিনার পরিবারসহ ফুটবলের সাথে সংশ্লিষ্টরা। শিরোপা জেতায় এবং মানুষের অভিনন্দন পেয়ে আনন্দিত সাবিনার মা-বোনরা।

সাবিনার মা মমতাজ বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ নারী দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে- কী যে আনন্দ লাগছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এই দলে আমার মেয়ে রয়েছে এর চেয়ে গর্বের কিছু হতে পারে না। আমার মেয়ের ধ্যান-জ্ঞান ফুটবলকে নিয়ে। টুর্নামেন্টে আট গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ায় আমাদের আনন্দের অন্ত নেই। তিনি আরও বলেন, ওর বাবা বেঁচে থাকলে কী যে খুশি হতো, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

২০২০ সালে সাবিনার বাবা মো: সৈয়দ আলী গাজী মারা গেছেন। পাঁচ বোনের বড় দুই বোন লেবাননে থাকতেন। বাবা মারা যাওয়ার পর বড় বোন সালমা খাতুন দেশে থেকে গেছেন। সাবিনার পরিবারের দেখভাল করেন বড় বোন সালমা খাতুন।

অপরদিকে, সাতক্ষীরা সদরের বিনেরপোতায় নারী ফুটবল দলের অপর খেলোয়াড় মাসুরার বাড়ি। সেখানেও চলছে জয়ের উৎসব। বাবা রজব আলী মাসুরাকে খেলতে দিতে চাইতেন না। কিন্তু স্থানীয় কোচ আকবার আলী ও মা ফাতেমা খাতুনের উৎসাহে জায়গা করে নিয়েছেন মাসুরা।

Nagad

মাসুরার বাবা মো: রজব আলী কথায় উঠে আসে মাসুরা ওরফে মুক্তার সংগ্রামী জীবনের গল্প। মাসুরার বাবা রজব আলীর বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কয়লা ইউনিয়নের আলাইপুর গ্রামে।

রজব আলী অল্প বয়সে সাতক্ষীরায় এসে আর ফিরে যাননি। শহরের বিভিন্ন এলাকার ভাড়া বাসায় থাকেন। শহরের নানা জায়গায় চায়ের দোকান চালান। ভ্যানে করে ফল-সবজি বিক্রি করেছেন। শ্বাসকষ্ট ও হৃদ্রোগের সমস্যায় এখন সেভাবে কাজ করতে পারেন না তিনি। মাসুরারা তিন বোন। সবার বড় মাসুরা। মেজ মেয়ে সুরাইয়াকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে সুমাইয়া অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।

মাসুরার মা ফাতেমা খাতুন বলেন, আমরা গরিব মানুষ। ছোটবেলা থেকে মাসুরার খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ দেখে আমি তাকে খেলা চালিয়ে যেতে বলেছিলাম। কোচ আকবর আলীই আমার মেয়েকে এই পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন। দুর্ভাগ্য হলো, এত বড় জয় আকবর আলী দেখে যেতে পারলেন না। গত দুই মাস আগে তিনি মারা গেছেন।

সাতক্ষীরা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আরিফ হোসেন প্রিন্স বলেন, নারী ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় গর্ব অনুভব করছি। সাবিনা ও মাসুরার মতো খেলোয়াড়রা সাতক্ষীরার মাটি থেকে আজ জাতীয় দলে শক্ত জায়গা করে নিয়েছে। তাদের এই সফলতার ধারা অব্যাহত থাকুক।

সারাদিন/২১ সেপ্টেম্বর/এমবি