ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আ.লী‌গের সাধারণ সম্পাদক‌কে শোকজ

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২

সম্প্রতি রাজধানীর লালবা‌গে ওয়ার্ড কমিটির স‌ম্মেল‌নে নেতাকর্মী‌দের গা‌লিগালাজ করায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবিরকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। ১৫ দিনের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।

দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে গতকাল শুক্রবার বিকেলে চকবাজার থানায় দলীয় কর্মসূচি করার চেষ্টা করা এবং লালবাগ থানা সম্মেলনে সাংগঠনিক রীতি বহির্ভূত শব্দ ব্যবহার করায় দলের গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারা মোতাবেক তাকে শোকজ করা হয়। এতে কারণ দর্শানোর চিঠির জবাব ১৫ দিনের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, হুমায়ূন কবির শুক্রবার রাতে জে দপ্তরে এসে শোকজের চিঠি গ্রহণ করেছেন। বুধবার ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের লালবাগ থানা ইউনিটের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতেই বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের চার পক্ষ।

এ সময় বিশৃঙ্খলা থামাতে গিয়ে মাইক হাতে নিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ হুমায়ুন কবির ‘শুয়োরের বাচ্চা’ বলে গালি দেন বিশৃঙ্খলাকারীদের। সম্মেলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে মোট পাঁচ দফায় হাতাহাতি মারামারি হয়েছে।

মাইকে বারবার নির্দেশ দেওয়া হলেও থামেনি বিশৃঙ্খলা। বিশৃঙ্খলা থামাতে গিয়ে মাইক হাতে নিয়ে হুমায়ুন কবির বলেন, ‘স্লোগান বন্ধ করো। স্লোগান বন্ধ কর শুয়োরের বাচ্চারা।’ রাজধানীর লালবাগেই বাড়ি হুমায়ুন কবিরের।

Nagad

এ সময় আব্দুর রাজ্জাক মারামারি থামানোর জন্য নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘মারামারি থামানোর জন্য আহ্বান করছি। বিশৃঙ্খলা করবেন না, বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। থামুন আপনারা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আপনাদের মাঝে এসেছেন। এর গুরুত্ব উপলব্ধি করুন আপনারা।’

এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘লাফালাফি, বাড়াবাড়ি করবেন না। নির্বাচনের ১৪ মাস বাকি। অথচ শোডাউন দিয়ে শক্তি প্রদর্শন শুরু করেছেন। আপনারা কেউ এমপি হতে পারবেন না, নেতা হতে পারবেন না।’

এছাড়া, চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পূর্বনির্ধারিত তারিখ ছিল শুক্রবার বিকেল ৩টায়। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সেই সম্মেলন না করার জন্য বললেও নির্দেশ না মেনে সমাবেশ করে চকবাজার থানার অন্তর্গত বিভিন্ন শাখা আওয়ামী লীগ। সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

জানা গেছে, লালবাগ ও চকবাজার থানা নিয়ে ঢাকা-৭ আসন। এই আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থীদের নিয়ে নানা গ্রুপিং ও কোন্দল বিরাজ রয়েছে। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বহুল আলোচিত হাজী সেলিম। আগামী নির্বাচনে এই আসন থেকে নির্বাচন করতে চান প্রায় অর্ধডজন নেতা। মনোনয়ন প্রত্যাশী মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবীরও। ফলে যেকোনো দলীয় আলোচনা বা সম্মেলন ইস্যুতে একটি গ্রুপের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। বাকীরা নানা ইস্যুতে ওই আসনের দ্বিধা বিভক্তির চিত্র স্পষ্ট করেন। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবীরের মধ্যে থেকে দ্বিধা-বিভক্তি রয়েছে। বিগত সময়ের দুজনের অনুসারীরা ভাগ হয় হট্টগোল ও হাতাহাতি করতে দেখা গেছে। গত মঙ্গলবার লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই এসব নেতাদের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় মারামারি ও হট্টগোল হয়। মঞ্চে ধাক্কাধাক্কিও হয়। এমতাবস্থায় মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে অন্য গ্রুপের নেতাকর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন হুমায়ুন কবীর। যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।

এমতাবস্থায় শোকজ পেতে পারেন এমন আগাম খবরে শুক্রবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে হাজির হন হুমায়ুন কবীর। সেখানে তাকে একাকি বসে থাকতে দেখা যায়। জানতে চাইলে হুমায়ুন কবীর সাংবাদিকদের বলেন, শোকজ যে কাউকে দেওয়া যেতে পারে। এরপর আর তেমন কোনো কথা বলেননি তিনি।