গ্রেপ্তারকৃতরা নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য : জঙ্গিবাদ ভুল, বাড়ি ফেরা নিলয়
জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে কুমিল্লা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া চার তরুণসহ সাতজনকে মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তাররা হলেন, হোসাইন আহম্মদ, মো. নেসার উদ্দিন ওরফে উমায়ের, বণি আমিন, ইমতিয়াজ আহমেদ রিফাত, মো. হাসিবুল ইসলাম, রোমান শিকদার ও মো. সাবিদ।
তাদের কাছ থেকে নব্য জঙ্গি সংগঠনের তিন ধরণের প্রচারপত্র, বিস্ফোরক তৈরির নির্দেশিকা সম্বলিত পুস্তিকা, নব্য জঙ্গি সংগঠনের কর্মপদ্ধতি (খসড়া মানহায), উগ্রবাদী বই ‘’নেদায়ে তাওহীদের’’ ৪ কপি, জিহাদী উগ্রবাদ ভিডিও সম্বলিত একটি ট্যাব উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের দাবি, দেশের সংবিধান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি ক্রোধ ও ক্ষোভ জাগিয়ে তুলে সমাজ থেকে বাইরে নিয়ে এসে তাদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে আগ্রহী করে তোলে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িতরা।
এছাড়া মুসলমানদের উপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞান দেওয়া হতো তরুণদের। ধাপে ধাপে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের সেইফ হাউজে পটুয়াখালী ও ভোলার বিভিন্ন চর এলাকায় সশস্ত্র হামলা, বোমা তৈরি, শারীরিক কসরত ও জঙ্গিবাদবিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।.
এদিকে খালাতো ভাইয়ের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্য তরুণদের সঙ্গে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন শারতাজ ইসলাম নিলয় (২২)। পরে তাকে প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বাইরে জঙ্গি মতবাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়। পটুয়াখালি যাওয়ার পর নিলয় বুঝতে পারেন ভুল পথে আছেন তিনি।
নিলয় বলেন, পরিবার ছেড়ে হিজরতের কথাটা যখন আসে তখন থেকে এটা আমি মেনে নিতে পারিনি। যাওয়ার পর বিষয়টি বুঝতে পারি। অনেকটা বাধ্য হয়ে আমি সেখান থেকে বের হবার চেষ্টা করি। পরে সুযোগ বুঝে বাড়ি ফিরি। বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে কারওয়ান বাজারে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
জানা যায়, গত ২৩ আগস্ট সকাল ১০টায় নিলয়সহ নিখোঁজ ৫ তরুণ নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে কুমিল্লা টাউন হল এলাকায় আসে। পরবর্তীতে সোহেলের নির্দেশনায় তারা দুই ভাগ হয়ে লাকসাম রেল ক্রসিংয়ের সামনের হাউজিং স্টেট এলাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। নিলয়, সামি ও নিহাল একসঙ্গে রওনা হলেও ভুলবশত তারা চাঁদপুর শহর এলাকায় চলে যায়।
পরে তারা ভুল বুঝতে পেরে রাত্রিযাপনের উদ্দেশ্যে চাঁদপুরের একটি মসজিদে অবস্থান করলে সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ তাদের সন্দেহজনক আচরণের কারণে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
পরে পুলিশ তাদেরকে পাশের একটি হোটেলে রেখে যায় এবং পরদিন বাসায় চলে যেতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু তারা রাতেই হোটেল থেকে কৌশলে পালিয়ে পূর্ব নির্ধারিত জায়গায় যায়। সেখানে সোহেল ও অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তাদেরকে লাকসামের একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। ওই বাড়িতে আগের থেকেই অবশিষ্ট তিনজন অবস্থান করছিল।
পরে নিলয়, নিহাল, সামি ও শিথিলকে কুমিল্লা শহরের একটি মাদরাসার মালিক নিয়ামত উল্লাহর কাছে পৌঁছে দেয় সোহেল। সেখানে নিয়ামতের তত্ত্বাবধানে একদিন থাকার পর সোহেল চারজনকে নিয়ে ঢাকায় আসেন এবং নিহাল, সামি ও শিথিলকে অজ্ঞাত ব্যক্তির নিকট বুঝিয়ে দিয়। সেখান থকে নিলয়কে পটুয়াখালী পাঠায়। পরে পটুয়াখালীতে গ্রেফতার বনি আমিন নিলয়কে গ্রহণ করে স্থানীয় এক মাদরাসায় নিয়ে যান। সেখানে গ্রেফতার হুসাইন ও নেছার ওরফে উমায়েরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। বণি আমিন নিলয়কে ৩ দিন তার বাসায় রাখেন। তার বাসায় অতিথি আসায় পরবর্তীতে নিলয়কে হুসাইনের মাদরাসায় রেখে আসেন। সেখান থেকেই নিলয় পালিয়ে নিজ বাড়িতে আসেন।