বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে কোনো ‘ফিজিক্যাল ড্যামেজ’ হয়নি : বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৩:৪০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৬, ২০২২

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছেন, গ্রিড বিপর্যয় অস্বাভাবিক ঘটনা না, এ রকম টেকনিক্যাল ফল্ট হতেই পারে। বিশেষ করে বহু পুরোনো সাব-স্টেশনগুলোর ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটেতেই পারে। তবে জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ে গ্রিড সিস্টেম এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে কোনো ‘ফিজিক্যাল ড্যামেজ’ (অবকাঠামোগত ক্ষতি) হয়নি।

বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ৪ অক্টোবর দুপুর ১টায় ১১ হাজার ১৯৮ মেগাওয়াট এবং দুপুর ২টায় ১১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে যথাক্রমে ১০ হাজার ১৯২ মেগাওয়াট এবং ১০ হাজার ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছিল। কিন্তু দুপুর ২টায় জাতীয় গ্রিডে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় গ্রিডের পূর্বাঞ্চলের পুরো অংশে বিদ্যুৎ বিভ্রাট শুরু হয়। এর ফলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও সিলেট জোন একযোগে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে।

ঘটনার পরপরই বিদ্যুৎ সংযোগ পুনর্বহাল কার্যক্রম শুরু হয় জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘটনার ৩২ মিনিটের মধ্যে ২টা ৩৬ মিনিটে সিরাজগঞ্জের আশুগঞ্জে ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন এবং ২টা ৪৩ মিনিটে ঘোড়াশাল জিআইএস থেকে ঘোড়াশাল এআইএস ২৩০ কেভি লাইন চালু করা হয়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে গণভবন ও ৫টা ৪০ মিনিটে বঙ্গভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হয়। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে পিজিসিবি (পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ)।

তিনি বলেন, রাত ৯টার মধ্যে সম্পূর্ণ পূর্বাঞ্চলের গ্রিডে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করা হয়। রাত ৯টার চাহিদার বিপরীতে সারা দেশে ৮ হাজার ৪৩১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ রেকর্ড করা হয়, যা রাত ১২টায় বেড়ে প্রায় ১০ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়। প্রকৌশলীদের কর্মতৎপরায় ৭ ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণ রিস্টোরেশন (সংযোগ পুনর্বহাল) কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ উদঘাটনে দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, কমিটির সদস্যরা ৫ অক্টোবর ঘোড়াশাল ও আশুগঞ্জে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট গ্রিড উপকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। ঘটনার প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, ওই সময়ে পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ চাহিদার তুলনায় উৎপাদনে ঘাটতি থাকায় এবং পশ্চিমাঞ্চলে বাড়তি উৎপাদন থাকায় পশ্চিমাঞ্চল থেকে পূর্বাঞ্চলে ১১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হচ্ছিল।

Nagad

নসরুল হামিদ বলেন, আমরা জানি, এই বিপর্যয়ের কারণে গ্রাহকদের বিরাট অসুবিধা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। অনেক সময় অনেক ঘটনা ম্যান মেইড থাকে, অনেক সময় থাকে না। বিষয়গুলো ভেরি টেকনিক্যাল। যে প্রবলেমগুলো থাকে আমরা সেগুলো সলভ করার চেষ্টা করি।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত তো গ্রিড আনস্টেবল হয়নি। প্রতিবেদনে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেছে, পরবর্তীতে আরও জানা যাবে। এই ঘটনার পরে দ্রুততার সঙ্গে, ১ ঘণ্টার মধ্যে স্টেবল করা শুরু হয়েছে। গত ২ বছরে আমরা অনেক পিছিয়ে গিয়েছি। এই ঘটনা আমাদের সতর্ক বাণী হিসেবে কাজ করবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, অতীতের বিভ্রাটের পরে যে তদন্তগুলো আমরা আগে করেছিলাম, সেগুলো মাথায় রেখে স্টেবল করার জন্য কাজ চলছে। আমরা আস্তে আস্তে অটোমোশনের দিকে যাচ্ছি। যত দ্রুত আমরা অটোমোশনের দিকে যাব, তত দ্রুত এ সব সমস্যা কমে আসবে।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন লাইন বিভ্রাটের পর ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। ওই দিন দুপুর ২টার দিকে এ বিপর্যয় ঘটে। এরপর থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট অঞ্চল বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।