মধুমতি ও তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু উদ্বোধন, খুললো নতুন দুয়ার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৬:০৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১০, ২০২২

সংগৃহীত ছবি-

মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত মধুমতি সেতু এবং শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমান তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার (১০ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত মধুমতি সেতু এবং শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত এ ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমান তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু’-র উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের চামেলী হল থেকে ভার্চ্যূয়ালি এ অনুষ্ঠানে তিনি যুক্ত হন।

এসময় তিনি বলেন, শীতলক্ষ্যা সেতু এটা নাসিম ওসমানের নামেই দিয়েছি কারণ সে আমার ভাই কামালের বন্ধু ছিল এবং তার বাবা জোহা সাহেব আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। তার দাদাও ওসমান সাহেব, বলতে গেলে আওয়ামী লীগের একটা ঘাঁটি ছিল তার বাড়ি। কাজেই তাদের পরিবারটা সবসময় অবদান রেখেছে আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধে। এমনকি নাসিম ওসমানের বাবা জোহা সাহেদ ৭১ সালে যখন আমার মা এবং আমরা সবাই ১৮ নম্বর রোড বর্তমানে ৯ নম্বর রোড ধানমন্ডি বাসায় আমরা বন্দি, ১৬ ডিসেম্বর যখন পাক হানাদার বাহিনী সারেন্ডার করে তখন কিন্তু আমরা মুক্তি পাইনি। সে সময় জোহা সাহেদ ভেবেছিলেন আমরা বোধহয় মুক্তি পেয়েছি, তাই তিনি ওই রাস্তা দিয়েই আসেন। পাকিস্তানি সেনারা আমাদের ওই বাসায় গুলি করলে তার গায়েও লাগে। কিন্তু তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন। তাকে আমি স্মরণ করি। ৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর যখন আমরা দিল্লিতে রিফিউজি, তখন তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, বন্দি ছিলেন। মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ছুটে গিয়েছিলেন দিল্লিতে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুটি সেতু উদ্বোধনের ফলে উন্নয়নে গুরুত্বপূন অবদান রাখবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বাড়াবে।’

ছয় লেনের সেতুটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আরও একটি স্বপ্ন পূরণ করতে যাচ্ছে। খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার এই সেতুটি ঢাকার সঙ্গে ১০০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরত্ব কমিয়ে দেবে।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে ৯৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে মধুমতি নদীর ওপর ৬৯০ মিটার দীর্ঘ মধুমতি সেতু নির্মিত হয়েছে যা স্থানীয়ভাবে কালনা সেতু নামে পরিচিত।

Nagad

গত ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা এবং নড়াইল জেলার অন্তর্গত লোহাগড়া উপজেলার মধ্যে মধুমতি সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অঞ্চলের মানুষ এখন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট হয়ে ঢাকা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক ব্যবহার করে ফলে তাদের যশোর থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে আরও ১০০ কিলোমিটার বেশি ভ্রমণ করতে হয়। এ সেতুর ফলে এখন আর সেই দূরত্ব কমে যাবে।

সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর (সওজ) নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী ও কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক আশরাফুজ্জামান বলেন, ৯৬০ কোটি টাকায় নির্মিত মধুমতি সেতু দেশের প্রথম ছয় লেইনের সেতু, যার প্রস্থ ২৬ দশমিক ১ মিটার। সেতুর উভয় পাশে ৬ লেইনের সংযোগ সড়ক রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলার মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগে চালু হলো তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু, যা বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমান সেতু বলে নাম পেয়েছে।

সেতুটি চালুর মধ্য দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের দূরত্ব অন্তত ২০ কিলোমিটার কমবে বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস। তিনি বলেন, এখন থেকে ওই দুই পথের যাত্রীদের ঢাকা হয়ে চলাচল করতে হবে না। সেই কারণে অন্তত দুই ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হবে যাত্রীদের।

ঢাকাকে পাশ কাটানোর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, দক্ষিণের যাত্রীরা পদ্মা সেতু দিয়ে মুন্সীগঞ্জ হয়ে শীতলক্ষ্যা সেতু দিয়ে মদনপুর হয়ে চট্টগ্রাম কিংবা সিলেট যেতে পারবেন।

রোববার দুপুরে সেতুটি পরিদর্শনকালে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজও বলেন, এই সেতু চালুর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর সাথে সংযোগ হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের। এছাড়া যারা খুলনা, যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া এলাকার মানুষ তারা পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা শহরে প্রবেশ না করেই সরাসরি কিন্তু চট্টগ্রাম যেতে পারবে। সেক্ষেত্রে একটা বড় দূরত্ব কমে যাবে।