নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ৫০০ নতুন কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৬:৫৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৬, ২০২২

বক্তব্য রাখছেন সবুজ আন্দোলনের উপদেষ্টা ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মেজবাউদ্দীন মোঃ জীবন চৌধুরী। ছবি: শাহজালাল রোহান

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য নতুন করে সারা বাংলাদেশে ৫০০ কোল্ড স্টোর নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন-পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার।

তিনি বলেন, বীজ সংরক্ষণে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে প্রশিক্ষণ এবং সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমান সময়ে ভেজাল খাদ্য বাজারের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে তবে মনিটরিং ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় জনগণ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। বর্তমান এবং আগামী প্রজন্মকে ভঙ্গুর স্বাস্থ্য অবস্থার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করতে হবে। খাদ্যমন্ত্রী সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে । নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বাজার নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কাছে ধরাশায়ী।

আজ রোববার (১৬ অক্টোবর) বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে এ পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলন উদ্যোগের-‘নিরাপদ খাদ্য দৃষ্টিতে উন্নত বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও ভেজাল প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক’ আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার উদ্যোগ রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জীবন চৌধুরী মিলনায়তনে -এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার গুলোর প্রথম চাহিদা খাদ্য। ১৯৮১ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে বিশ্ব খাদ্য দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে সারা পৃথিবী জুড়ে নিরাপদ খাদ্য চরম আকার ধারণ করেছে। অনিরাপদ খাদ্য ঝুঁকিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৭ম। যদিও বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ রয়েছে পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৫ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে খাদ্যে ভেজাল দেয়ার জন্য যে আইনটি করা হয়েছে তার সংশোধন ও জরুরী। খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা দরকার।

ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটির সদস্য মোঃ ওলি উল্লাহর সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সবুজ আন্দোলনের উপদেষ্টা ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মেজবাউদ্দীন মোঃ জীবন চৌধুরী।

Nagad

তিনি বলেন, , নৈতিকতার অভাবে মানুষ খাদ্যে ভেজাল দেয়। পরিবার থেকে নৈতিক শিক্ষা শুরু করে রাষ্ট্রের সর্ব অবস্থায় তা প্রয়োগ করতে হবে। রাজনীতিবিদরা সৎ ও সুন্দর হলে জনগণকে নিরাপদ খাদ্য উপহার দেয়া সম্ভব।

এই খাদ্যে ভেজাল রোধ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, নৈতিকতা সবার মাঝে তৈরি করতে হবে। যার জন্য সবচেয়ে উত্তম পরিবেশ হলো পরিবার। পরিবার থেকেই নৈতিক শিক্ষা শুরু করে রাষ্ট্রের সর্ব অবস্থায় তা প্রয়োগ করতে হবে। রাজনীতিবিদরা সৎ ও সুন্দর হলে জনগণকে নিরাপদ খাদ্য উপহার দেয়া সম্ভব।

পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার।

অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক দৈনিক স্বদেশ বিচিত্রার প্রকাশক ও সম্পাদক কবি অশোক ধর বলেন, সমাজের সর্বক্ষেত্রে ভেজাল একটি অন্যতম সমস্যা। যা এখন সর্বত্র বিদ্যমান। সামান্য স্বার্থের কারণে-স্বার্থান্বেষী মহল খাদ্যে ভেজাল দিয়ে আমাদের জিবনী শক্তি নষ্ট করে দিচ্ছে। তাদের রুখতে হবে।

জাতীকে অনিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে জানার দিতে সবুজ আন্দোলনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা এখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সরকার ঝটিকা অভিযান চালিয়ে জরিমানা করছে। যাতে দেখা যায়; অপরাধীর সংখ্যা বেশি নয়। কঠোর হলেই তাদের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

আমাদের গণমাধ্যমগুলোতে নিরাপদ খাদ্যের গুরুত্ব বেশি করে তুলে ধরতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাবে জনগণ খাদ্যে ভেজাল দেয়। কৃষকদের জীবনমান উন্নয়ন এবং কেমিক্যাল সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে।

বিশেষ অতিথি ছিলেন সবুজ আন্দোলন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক জাফর আহমেদ রাজু, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য মিথিলা রোয়াজা, যুব সংহতির নেতা মোঃ জিল্লুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উত্তরের সদস্য আমিনুর রহমান আমিন।

সংগঠনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়:
১/ সারা দেশে নতুন করে ৫০০ কোল স্টোরেজ তৈরি করা এবং পরিচর্যার জন্য লোকবল নিয়োগ করতে হবে।
২/ নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৫ সংশোধন করে ভেজাল খাদ্যে শাস্তি স্বরূপ মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখতে হবে।
৩/ প্রান্তিক কৃষকদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা এবং গ্রামভিত্তিক কৃষক ক্লাব প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৪/ কৃষকদের জন্য উন্নত যন্ত্রপাতি সরবরাহ, সঠিক তথ্য প্রদান, গণমাধ্যমে সরকারিভাবে বিজ্ঞাপন প্রচার এবং “আদর্শ কৃষক পুরষ্কার” চালু করে প্রত্যেকটি ইউনিয়ন পরিষদে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫/ বন্যা থেকে রক্ষা পেতে আগাম ধান উৎপাদন, সংরক্ষণ ও উন্নত গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন প্রজাতির বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ পদ্ধতি আবিষ্কার করতে হবে।
৬/ জনপ্রতিনিধিদের সার বণ্টন পদ্ধতির ক্ষেত্রে স্বজন প্রীতি বন্ধ, সারের দাম কমানো, কেমিক্যাল সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।
৭/ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সকল প্রকার দুর্নীতি বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে।

এছাড়াও মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন সবুজ আন্দোলন ছাত্র পরিষদের সহ দপ্তর সম্পাদক শফিকুল আলম সায়েম , ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য আজিম মাহমুদ, ফাতেমাতুজ জোহরা, উম্মে ফাতেমা সিথী, মেহেরুন্নেসা, নাজমুল হক, মোঃ মাহফুজুর রহমান, মোঃ জাহিদুল ইসলাম, রেহেনুমা আক্তার উর্মি, আনিকা তাহসিন প্রিন্তু, নুসরাত জাহান নিহা, শামসুল আলম প্রমুখ।