কে এই মুপন্না মল্লিকার্জুন খাড়গে?

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৯:১৭ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২০, ২০২২

১৩৭ বছরের রাজনৈতিক দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ৯৮তম সভাপতি হলেন মুপন্না মল্লিকার্জুন খাড়গে। মঙ্গলবার শশী থারুরকে ৬,৮২৫ ভোটে হারিয়ে বিদায়ী সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর উত্তরসূরি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৯,৩৮৫টি। তার মধ্যে মল্লিকার্জুন খাড়গে পেয়েছেন ৭,৮৯৭ ভোট। শশীর ঝুলিতে গিয়েছে ১,০৭২টি ভোট। আর ৪১৬টি ভোট বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছে কংগ্রেসের ‘সেন্ট্রাল ইলেকশন অথরিটি’ (সিইএ)।

কর্নাটকের দলিত নেতা খাড়গে ‘গান্ধী পরিবারের অনুগত’ হিসেবে পরিচিত। একাধিক দফায় কেন্দ্র এবং কর্নাটক সরকারে মন্ত্রিত্ব সামলেছেন তিনি। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের শেষ ১১ মাস রেলমন্ত্রী ছিলেন খাড়গে।

৫৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনে মোট ১২বার ভোটে লড়েছেন খাড়গে। ৯ বার বিধানসভা এবং ৩ বার লোকসভায়। হেরেছেন মাত্র একবার— ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে, কর্নাটকের গুলবর্গা কেন্দ্রে।

২০১৯-এর লোকসভা ভোটে পরাজয়ের পর গান্ধী পরিবারের আনুকূল্যেই রাজ্যসভায় ঠাঁই হয় খাড়গের। ২০২১-এর ফেব্রুয়ারিতে গুলাম নবি আজাদের মেয়াদ শেষের পর খাড়গেকে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মনোনীত করে কংগ্রেস।

‘গান্ধী পরিবারের অনুগত’ হিসেবে পরিচিত হলেও ১৯৭৭ সালে লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর ইন্দিরা গান্ধীকে ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন দেবরাজ আরসের শিবিরে। কিন্তু ‘হাওয়া’ বুঝে কিছু দিন পরই ফিরে এসেছিলেন কংগ্রেসের মূলস্রোতে।

Nagad

খাড়গের জন্ম ১৯৪২ সালে কর্নাটকের (তৎকালীন হায়দরাবাদ) বিদরে। ১৯৪৮ সালে নিজামের রাজাকার বাহিনী আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল তাদের বাড়িতে। বাবা মুপন্না কোনও ক্রমে ৭ বছরের মল্লিকার্জুন খাড়গেকে বাঁচাতে সক্ষম হলেও স্ত্রী এবং মেয়ে ওই ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন।

বিদরের শেঠ শঙ্করলাল লাহোটি কলেজে আইন পড়ার সময়ই কংগ্রেস রাজনীতির সঙ্গে খাড়গের যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল। পরবর্তীকালে কংগ্রেসপন্থী শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসিতে যোগ দেন তিনি।

মূল ধারার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর ১৯৬৯ সালে গুলবর্গা শহর কংগ্রেসের সভাপতি মনোনীত হন খাড়গে। ১৯৭২ সালে গুলবর্গার গুর্মিতকল বিধানসভা থেকে প্রথমবার ভোটে জেতেন।

২০০৪ পর্যন্ত গুর্মিতকল থেকে খাড়গে টানা আটটি বিধানসভা ভোটে জেতেন। ২০০৮-এর কর্নাটক বিধানসভা ভোটে জেতেন গুলবর্গার চিত্তপুর থেকে। ওই কেন্দ্রের বর্তমান বিধায়ক তার ছেলে প্রিয়ঙ্ক।

১৯৯৯, ২০০৪ এবং ২০১৩ সালে কর্নাটক বিধানসভা ভোটের পর খাড়গের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তিনবারই সুযোগ হাতছাড়া হয়। কংগ্রেস হাইকমান্ড বেছে নেয় এসএম কৃষ্ণ, এন ধর্ম সিংহ এবং সিদ্দারামাইয়াকে।

৯ বার বিধানসভা এবং ২ বার লোকসভা ভোটে জেতা ৮০ বছরের খাড়গে কর্নাটক রাজনীতিতে ‘সোলিল্লদা সরাদর’ নামে পরিচিত। কন্নড় ভাষায় যার মানে দাঁড়ায়, যে নেতা কখনও ভোটে হারেন না।

মাতৃভাষা কন্নড়ের পাশাপাশি ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু, মরাঠি, তেলুগু এবং তামিল ভাষার উপর দখল রয়েছে খাড়গের। তিনি সভাপতি হওয়ায় বিভিন্ন রাজ্যের দলের নেতাদের সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ সহজতর হবে বলে আশবাদী কংগ্রেস নেতৃত্ব।

১৯৯৮ সালের পর প্রথমবার কংগ্রেসের সভাপতি পদে গান্ধী পরিবারের বাইরের কেউ বসতে চলেছেন। সালে ওই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিহারের নেতা, প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী সীতারাম কেশরী।

খাড়গের আগে কর্নাটক থেকে কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছেন এস নিজলিঙ্গাপ্পা। ষাটের দশকে কংগ্রেসের অন্দরে ক্ষমতার কেন্দ্র হয়ে ওঠা ‘সিন্ডিকেট’-এর এই সদস্য ১৯৬৮ সালে দলের শীর্ষ পদে বসেছিলেন।

২০১৪ সালে কর্নাটকের লোকায়ুক্তের কাছে বিজেপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, খাড়গের ‘আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির’ অংক প্রায় ৫০ হাজার কোটি রুপি! তার মধ্যে ৩০০ একরের একটি কফি বাগান এবং আবাসন প্রকল্পের কথা বলা হয়েছিল।

প্রায় ৫,০০০ কোটি রুপির ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলাতেও জড়িয়েছে খাড়গের নাম। ওই পত্রিকার প্রকাশনা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস-এর মালিক ইয়ং ইন্ডিয়ার কর্ণধার খাড়গেকে গত আগস্টে টানা আট ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি। সূত্র: আনন্দবাজার