‘জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রথাগত ও অপ্রথাগত হুমকি মোকাবেলা করুন’

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৭:৫২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৩, ২০২২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাবের সাথে সাথে অপরাধের ধরণ পরিবর্তিত হওয়ার প্রেক্ষিতে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রথাগত ও অপ্রথাগত হুমকি মোকাবেলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ‘ট্রাডিশনাল সিকিউরিটি থ্রেট’ এর পাশাপাশি ‘নন ট্রেডিশনাল সিকিউরিটি থ্রেট’ সমূহ প্রতিহত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।”

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “এখন নিরাপত্তার বিষয়টি অনেক বদলে গেছে। ডিজিটাল ডিভাইস যেমন আমাদের অনেক সুযোগ করে দিয়েছে। তেমনি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ কিংবা অপরাধের ধারাটাও পাল্টে গেছে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে মিরপুর সেনানিবাসের ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) ‘ডিএসসিএসসি কোর্স ২০২২’ এর গ্রাজুয়েশন সেরিমনিতে শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে গ্রাজুয়েটদের মধ্যে সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেশে থাকুক, সেভাবেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি এবং আমাদের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষই এই ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে জানবে, ব্যবহার করবে।

শেখ হাসিনা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কল্যাণে অবিলম্বে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন, “আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সকল বিরোধ ও মতভেদ দূর করতে চাই।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে উন্নত ও শক্তিশালী করে চলেছে কিন্তু সেটা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য নয়। তিনি বলেন, “আমাদের পররাষ্ট্র নীতি, ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ খুব স্পষ্ট। আমরা জাতির পিতার গৃহীত পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসন নিয়ে তারা মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো বিবাদে জড়াননি।

Nagad

তিনি বলেন, “আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।” প্রধানমন্ত্রী প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়ে আলোচনার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে স্থল সীমানা সমস্যা সমাধান এবং বিশাল সমুদ্র এলাকা ও এর সম্পদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন।

তিনি আবারও দেশবাসীকে ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং তারল্য নিয়ে গুজবের বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেন, “একটি স্বার্থান্বেষী মহল ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং তারল্য নিয়ে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে, গুজবে কান দেবেন না।”তিনি ব্যাংকে পর্যাপ্ত বৈদেশিক রিজার্ভ এবং তারল্য থাকার বিষয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করেন।

তিনি বলেন, করোনা পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে স্যাংশনের প্রেক্ষাপটে বৃটেন নিজেদেরকে অর্থনৈতিক মন্দার দেশ ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো সে দুরবস্থায় পড়ি নাই। অন্তত আমি এটুকু আপনাদেরকে বলতে পারি। আমাদের সেই প্রচেষ্টা আছে। তিনি এ প্রসঙ্গে যার যতটুকু জায়গা আছে তাতে কিছু না কিছু উৎপাদন করার জন্য তাঁর আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন যাতে নিজেদের খাবারটা আমরা নিজেরা উৎপাদন করতে পারি, কারো কাছে হাত পেতে চলতে না হয়।

নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রো রেলসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা এমনভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করেছি যাতে বাংলাদেশের যেকোন অঞ্চল থেকে ৬/৭ ঘন্টার মধ্যে রাজধানীতে এসে পৌঁছানো যায়। সেই ব্যবস্থাটা আমরা করে দিয়েছি এবং কাজ চলমান আছে, চলমান থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী গ্রাজুয়েশন প্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে মাতৃভূমির ওপর সম্পূর্ণ নিবেদিতপ্রাণ হয়ে যার যার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের আহবান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ তার শিক্ষা-প্রশিক্ষণের উচ্চমানের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে। এ প্রতিষ্ঠানের গ্র্যাজুয়েটগণ তাঁদের অর্জিত জ্ঞান, ইচ্ছাশক্তি ও অঙ্গিকার সামনে রেখে দেশকে গৌরবময় অবস্থানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। পেশাদারিত্বের সঙ্গে ‘সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ ২০২২’ কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন ও পরিচালনা করার জন্য তিনি কমান্ড্যান্ট, ডিএসসিএসসিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।তিনি বিদেশ থেকে আগতদের ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব যেন অটুট থাকে সেজন্য আমাদের দেশের এক একজন দূত হিসেবে তাদেরকে নিজ নিজ দেশে কাজ করে যাবারও আহবান জানান। সূত্র: বাসস

সারাদিন. ১৩ ডিসেম্বর