ওয়াসা হবে স্মার্ট ওয়াসা: তাসকিন এ খান

নিজস্ব প্রতিবেদক:নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৪:০৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০২২

ঢাকা ওয়াসা ইতোমধ্যে ৯৪ ভাগ ডিজিটালাইজ হয়েছে জানিয়ে ঢাকা ওয়াসা – ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিন এ খান বলেন, আগামীতে সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের ঘোষণার সাথে মিল রেখে ওয়াসাকে স্মার্ট ওয়াসা বাস্তবায়নে আমরা কাজ ইতোমধ্যে শুরু করে দিয়েছি।

আজ মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ কর্তৃক আয়োজিত সুপেয় পানি প্রাপ্ত ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিন এ খান এসব কথা বলেন।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব পানীয় জলের সার্বজনীন অ্যাক্সেস সহ শিল্প, শক্তি, কৃষি এবং বাস্তুতন্ত্রের জন্য পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করার নতুন প্রবেশ তৈরি করেবে। পৃথিবীতে সরাসরি ব্যবহারযোগ্য সুপেয় পানির প্রায় ৯৮% ভূগর্ভস্থ পানি – যার কারণে আমরা একথা সহজেই বলতে পারি যে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ।

তাকসিম এ বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব পানীয় জলের সার্বজনীন অ্যাক্সেস সহ শিল্প, শক্তি, কৃষি এবং বাস্তুতন্ত্রের জন্য পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করার নতুন প্রবেশ তৈরি করেবে। এর সুফল আমরা কতটা নিতে পারব তা নির্ভর করবে আমাদের প্রয়োজনীয় দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি এবং সকল পানি ব্যবহার খাতের সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের উপর। ঢাকা ওয়াসা একক ভাবে এই কাজ করতে পারবে না। তবে ওয়াসার প্রস্তুতি আরও বেগবান করতে হবে এবং বিদ্যমান বিভিন্ন পরিকল্পনা আগামির পানি ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির সুযোগ কাজে লাগিয়ে এসব সমাধানের উপযোগী করতে হবে। প্রয়োজনীয় অর্থ প্রাপ্তি নিশ্চিত করে পানি সরবরাহ এবং ব্যবস্থাপনা খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলেই আগামীতে সার্বজনীন পানির অধিকার নিশ্চিত করা যাবে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও পানি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. কাজী মতিন আহমেদ। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে যে সমস্ত সমস্যা সমাধানে বিশ্বব্যাপী প্রয়াস চলছে তার অন্যতম হল সকলের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ এবং পয়নিষ্কাসন নিশ্চিত করা। অবাক করা বিষয় হল তিন ভাগের দুই গ পানিতে ভরা আমাদের এই গ্রহে আমরা পানি স্বল্পতা নিয়ে চিন্তিত। এই চিন্তার এই কারণে যে পৃথিবীর ৯৭.৫% পানিই হোল লবণ পানি যা আমাদের প্রয়োজনে সরাসরি ব্যবহার করা যায়না। মাত্র ২.৫% মিস্টি পানির বড় অংশ মেরু অঞ্চলের বরফে থাকায় তাও আমরা সরাসরি ব্যবহার করতে পারিনা। আমাদের পৃথিবীতে সরাসরি ব্যবহারযোগ্য সুপেয় পানির প্রায় ৯৮% ভূগর্ভস্থ পানি – যার কারণে আমরা একথা সহজেই বলতে পারি যে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। মানব সংখ্যা বাড়া, বেশী করে ফসল ফলানো, নগরায়নের উচ্চ হার এবং শিল্পায়নের কারণে পানির চাহিদা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে।

অন্যদিকে অতিব্যবহার, দূষণ, অসম প্রাপ্তির আর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মাথাপিছু পানির প্রাপ্তি প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে। এর ফলে সারা পৃথিবীর এই শতাব্দির অন্যতম প্রধান সমস্যা হোল সকলের জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত করা এবং আগামী প্রজন্মের জন্য পানির প্রাপ্তিতা সুরক্ষা করা।

Nagad

তিনি আরো বলেন, তিন ভাগের দুই ভাগ পানি দিয়ে পূর্ণ আমাদের গ্রহে যে সুপেয় পানির সংকট আছে এবং এটা আগামী দিনে আরও প্রকট হবে তা পৃথিবীর সকল মানুষের জানা দরকার। আমাদের বাংলাদেশেও যে সুপেয় পানির সমস্যা আস্তে আস্তে বাড়ছে এবং এখন থেকে সচেতন হয়ে পানি সংরক্ষণ আর ব্যবস্থাপনা না করলে আগামী প্রজন্ম আরও বেশী সমস্যার সম্মুখীন হবে তা আমাদের সকলের অনুধাবন করা প্রয়োজন। পানি নিয়ে ভাবনা শুধু পানি বিজ্ঞানী আর ব্যবস্থাপকদের কাজ না, এটা আমাদের সকলের ভাবনা হওয়া উচিত যাতে করে সবাই মিলে সঠিক ভাবে পানি ব্যবহার করে আমাদের বর্তমানের প্রয়োজনীয় পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি আগামী প্রজন্মের পানির অধিকার সুনিশ্চিত করতে পারি। শুধু আমাদের দেশেই নয়, সারা বিশ্বেই এখন সুপেয় পানি নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে এবং আগামীর পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য এখনকার করণীয় নিয়ে কথা হচ্ছে এবং কাজও শুরু হয়েছে।

ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে আলাদা উপস্থাপনায় ওয়াসার উপদেষ্টা সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, বিশ্বে বিরাজমান পানি সংকটের মধ্যেই আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে প্রবেশ করছি – এটা নিয়ে আমরা অনেক কথা বলছি এবং প্রস্তুতি নিচিত্র কিন্তু এর ফলে পানি সম্পদ এবং এর ব্যবস্থাপনার উপর কি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে খুব বেশী কথা হচ্ছে না আমাদের দেশে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের জন্য কি সংকট নিয়ে আসতে পারে অথবা কি নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিতে পারে তা নিয়ে বিশদ আলোচনা দরকার। দরকার সংকট সমাধান অথবা নতুন সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার এর জন্য যথাযথ প্রস্তুতি। আমাদের শিল্পখাতে আর পানি সবরাহ কাজে নিয়োজিত সংস্থাগুলির চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পাশাপাশি চতুর্থ পানি বিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করা এখনই প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শুরু হওয়া কর্ম পরিকল্পনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের দেশের উপযোগী নীতীমালা প্রণয়ন এবং প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির পদক্ষেপ বেগবান করা দরকার।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নিয়ে জার্মানে বসবাসকারী প্রকৌশলী প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সাইফুল্লাহ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাবনা এবং ওয়াসার করণীয় সম্পর্কে বেশ কিছু পরামর্শ তুলে ধরেন। প্রযুক্তিগত আলোচনার বিশ্লেষন করেন প্রযুক্তিবিদ মোঃ খায়রুল আলম সবুজ।

তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যে সারাদেশে ফাইবার অপটিকেল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের জন্য নাগরিকদেরকেও দক্ষভাবে গড়ে তুলতে হবে। আমরা কেবল মাত্র মোবাইল ডিভাইস ও কম্পিউটার ল্যাপটপের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছি। বাকি আরও চারটি অর্থাৎ শিল্প, নাগরিক সুবিধা ও সেবাসমূহকে একসাথে প্রযুক্তিবান্ধব গড়ে তুললেই স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ করা সম্ভব।