সালতামামি ২০২২: বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশ, সম্রাটের বিদায়!

খেলাধুলা ডেস্কখেলাধুলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ৫:৫৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১, ২০২৩

বিদায়ী বছরের ফুটবল বিশ্বে ঘটে গেছে নানান ঘটনা। ২০২২ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে হয়ে গেছে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত ফিফা বিশ্বকাপের ২২তম আসর। ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে বিশ্বব্যাপী ভক্ত-সমর্থকদের উল্লাসে ভাসিয়েছেন লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।

আর বছরের একেবারে শেষ প্রান্তে ফুটবল বিশ্বকে কাঁদিয়ে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন ফুটবল সম্রাট পেলে। ক্যান্সারের সাথে দীর্ঘ দিনের লড়াই শেষে কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ব্রাজিলের এই কিংবদন্তি। এছাড়া বিদায়ী বছরে লাল-সবুজের ফুটবলের ঝান্ডা উড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের মেয়েরা।

বিশ্বকাপ নিয়ে কাতারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে ঝড় ওঠে বিতর্কের। মাঠে বা স্টেডিয়ামে আশেপাশে মদ-বিয়ার কেনাবেচা নিষিদ্ধ, প্রকাশ্যে চুম্বন নিষিদ্ধ, সমকামিতার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, নারীদের পোশাকে বাধ্যবাধকতা দেওয়া নিয়ে বেঁকে বসে পশ্চিমারা। তাদের সকল সমালোচনাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশ কাতারে হয়ে গেলো ইতিহাসের সেরা ও সফল ফিফা বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে এমন আসর আগে কখনোই দেখেনি বিশ্ব ফুটবল।

সৌদি আরবের কাছে হার দিয়ে শুরু করা আর্জেন্টাইনরাই বিশ্বকাপের শিরোপা উপহার দেন লিওনেল মেসি। এর মধ্যদিয়ে দীর্ঘ ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটলো আর্জেন্টিনার। ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টায় কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে নির্ধারিত সময়ে ২-২ এবং অতিরিক্ত সময়ে ৩-৩ সমতা শেষে টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে শিরোপা জিতে লিওনেল মেসি, ডি মারিয়ারা।

আবারও গ্রুপপর্ব থেকে জার্মানির বিদায়, মরক্কোর স্বপ্নীল যাত্রা, ব্রাজিলের হেক্সা মিশনে অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হওয়া, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ভুলে যাওয়া আসর, এমবাপ্পের জাত চেনানো, প্রযুক্তির মারপ্যাঁচ আর ফাইনালের রোমাঞ্চ মিলিয়ে বাইশের বিশ্বকাপ হয়ে রইলো অনেকের দেখা সর্বকালের সেরা বিশ্বকাপ।

২০২২ সালের শেষে ফুটবল সম্রাটের বিদায়! বিদায়ী বছরের ২৯ ডিসেম্বর ফুটবল বিশ্বকে কাঁদিয়ে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন ফুটবল সম্রাট এডসন অরান্তেস দো নসিমন্ত পেলে। ক্যান্সারের সাথে দীর্ঘ দিনের লড়াই শেষে ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ব্রাজিলের সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে ব্রাজিলের এই কিংবদন্তির বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। ক্যানসারের সাথে দীর্ঘদিন ধরেই লড়েছিলেন এই কিংবদন্তি। কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ চলাকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সেখানে থেকেই দেখেছেন কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের ছিটকে পড়া। মাঝখানে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটলেও তা স্থায়ী হয়নি। ক্যানসার ছাড়াও কিডনি ও হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন ফুটবলের কালো মানিক। সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার কেবল ব্রাজিলের ফুটবল নয়, বদলে দিয়েছিলেন বিশ্ব ফুটবলের চিত্রও। তিনি ছিলেন খেলাটিরও ঊর্ধ্বে। শুধু ফুটবল নয়, বিশ্ব ক্রীড়া দুনিয়ার এই মহাতারকার বিদায় বছরের শেষাংশে।

Nagad

উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে টানা তিনটি শিরোপা জয়ের ৪ বছর পর আবারও ক্লাব ফুটবলের সেরার তকমা পায় স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ। রেকর্ড ১৪তম শিরোপা জয়ের পথে ফাইনালে লিভারপুলকে ১-০ গোলে হারায় করিম মোস্তফা বেনজেমারা। মাদ্রিদের শিরোপা জয়ে ১৫ গোল করে অবদান রাখেন বেনজেমা।

২০২২ সালে দুর্দান্ত এক মৌসুম কাটানো রিয়াল মাদ্রিদের এতো সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় কারিগর ছিলেন ফরাসি স্ট্রাইকার করিম বেনজেমা। নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়া বেনজেমা পেয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম ব্যালন ডি’অরের দেখা। রিয়ালের হয়ে ৪৬ ম্যাচে করেছেন ৪৪ গোল। মৌসুম শেষে অবশ্য দুর্দান্ত ফর্মের পুরষ্কারটিও পেয়ে গেছেন করিম বেনজেমা। লিওনেল মেসি-ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর যুগে লুকা মদ্রিচের পর দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে জিতেছেন ব্যালন ডি’অর। ১৯৫৬ সালের পর সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় হিসেবে ব্যালন ডি’অর জেতেন ৩৪ বছর বয়সী করিম মোস্তফা বেনজেমা।

স্প্যানিশ লা লিগায় রেকর্ড ৩৫তম শিরোপা জয়ের স্বাদ পায় রিয়াল মাদ্রিদ। ২০২২ সালে বেশ দাপটের সাথে লিগ টাইটেল নিজেদের করে নেয় কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা। লিগে চার ম্যাচ হাতে রেখেই শিরোপা বগলদাবা করে মাদ্রিদ। মৌসুমে বাকি দলগুলো থেকে স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে রাজত্ব করে লস ব্লাংকোসরা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যানচেস্টার সিটি লিগ টাইটেল ধরে রাখলেও শিরোপা জিততে অপেক্ষা করতে হয়েছে একদম শেষ ম্যাচ পর্যন্ত। পেপ গার্দিওলার অধীনে টানা দ্বিতীয় টাইটেল জিতেছে সিটি। সর্বশেষ এই কৃতিত্ব ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের।

২০২২ সালে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা। বিদায়ী বছরে দেশের জন্য বয়ে এনেছে অনন্য এক অর্জন। হিমালয়কন্যা নেপালের দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিক নেপালকেই হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। যা এনে দিয়েছে নারী ফুটবলের প্রথম বড় শিরোপা। অসাধারণ এক মাইলফলকের ইতিহাস লিখে দেশে ফেরার পর সাবিনা খাতুন-শামসুন্নাহার-কৃষ্ণাদের ছাদখোলা বাসে বরণ করে নিয়েছিল দেশবাসী। সূর্যকন্যাদের হাত ধরে উন্মোচিত হয় নারী ফুটবলের নতুন দুয়ার।

২০০৩ সালের ছেলেদের সাফজয়ের ১৯ বছর পর ২০২২’এ এসে আবারও দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় তোলে বাংলাদেশের নারীরা। বছরজুড়ে গোলাম রব্বানীর দল সাতটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ছয়টিতেই পেয়েছে দাপুটে জয়। একমাত্র ড্র মালয়েশিয়ার সাথে। নেই কোনো হার।

সারাদিন/০১ জানুয়ারি/এমবি