ঝিনাইদহে ব্যতিক্রমী গরুর গাড়ির দৌড় প্রতিযোগিতা

ঝিনাইদাহ প্রতিনিধি:ঝিনাইদাহ প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ১০:০৫ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১০, ২০২৩

ঝিনাইদহে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গ্রাম বাংলার ঐহিত্যবাহী গরুর গাড়ির দৌড় প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতাকে ঘিরে সদর উপজেলা বাজার গোপালপুর নিমতলা পরিণত হয়েছিল উৎসবের গ্রামে। যা দেখতে ভিড় করে বিপুল সংখ্যক দর্শক।

সোমবার (৯ জানুয়ারী) দুপুরে ২নং মধুহাটি ইউনিয়নের বাজার গোপালপুর নিমতলা গ্রামের মাঠে এই দৌড় প্রতিয়োগীতার আয়োজন করেন সাবেক চেয়াম্যান ও স্থানীয় যুব-সমাজ।

সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোপালপুর গ্রামের নিমতলা মাঠে হাজির হয় ঝিনাইদহসহ আশপাশের জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক দর্শক। ভ্যান, রিকশা, মোটরসাইকেলসহ নানা বাহনে সেখানে জড়ো হয় নারী-শিশু ও বৃদ্ধরা। মঞ্চ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গরু ও গাড়ি নিয়ে চারটি সারিতে চলে দৌড়ের প্রস্তুতি। বাঁশিতে ফু দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়োয়ানদের হাতের ছোঁয়ায় যেন মুহূর্তে পাল্টে যায় চিত্র। একে অপরকে পেছনে ফেলতে ছুটতে থাকে বিদ্যুৎ গতিতে। রোমাঞ্চ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। যা দেখে উল্লাসে ফেটে পড়ে আগত হাজার হাজার দর্শক। চমৎকার এ প্রতিযোগিতাকে ঘিরে আয়োজন করা হয় আনন্দ মেলারও। ছিল নাগরদোলা, নানা পণ্য সামগ্রীর দোকান। এমন আয়োজন প্রতিবছর আয়োজনের দাবি দর্শকদের।

দিনভর উত্তেজনাপূর্ণ এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ঝিনাইদহ, যশোর এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে আসা ১০টি গরুর গাড়ি। গরুর গাড়ির দৌড় প্রতিযোগিতা উপলক্ষে মাঠে বসে গ্রামীণ মেলা। নানা পণ্যের পসরা বসে সেখানে। রোমাঞ্চকর এই প্রতিযোগিতা দেখে খুশি হয় দর্শকরা। তাই এ ধরনের আয়োজন প্রতি বছর করার দাবি তাদের। এবারের প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় মহেশপুর উপজেলার আশরাফুল ইসলাম। তাকে পুরস্কার হিসাবে দেওয়া হয় বড় একটি বাইসাইকেল। দ্বিতীয় হয় চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর এলাকার বিল্লাল হোসেন। তাকে ছোট একটি বাইসাইকেল ও তৃতীয় কোটচাঁদুপর উপজেলার রাকিবুল ইসলামকে দেওয়া হয় একটি মোবাইল ফোন সেট।

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ-কারী ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ঝনঝনিয়া গ্রামের ইসলাম উদ্দীন বলেন, সারা বছর চাষাবাদে ব্যস্ত থাকি। শীত মৌসুম আসলে যেখানেই খেলা হোক সেখানেই অংশ গ্রহণ করি। বিভিন্ন জায়গা থেকে আয়োজকেরা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য আমাদেরকে ফোন দিয়ে থাকে। এবছরও দুইজায়গাই অংশগ্রহণ করে প্রথম এবং দ্বিতীয় পুরস্কার জিতেছি।

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ-কারী চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার বদ্দিনাথপুর গ্রামের মোশারফ হোসেন জানান, তারা বিভিন্ন জায়গাই গরুর গাড়ি দৌড় প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে থাকি। এই মাঠে আমরা প্রথম এসেছি। যেখানেই যাই সেখানেই পুরস্কার জিতেআসি। যার কারনে এই খেলার প্রতি তাদের আলাদা আগ্রহ থাকে। মানুষকে আনন্দ দিয়ে আনন্দ লাভের জন্যই দূর থেকে আসেন তারা।

Nagad

চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা দর্শক ফেরদৌসি আক্তার বলেন, গরুর গাড়ি দৌড় প্রতিযোগীতা কখনো দেখিনাই। এবারি প্রথম এতো দূর থেকে এই খেলা দেখতে আসছি। ভাবছিলাম কেমন হবে? ভালো হবে কি না? তবে এখানে এসে গরুর গাড়ি দৌড় প্রতিযোগীতা দেখে আসলেই অনেক ভালো লাগছে।

দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শাহিন জানান, বড়দের থেকে গ্রাম বাংলার এই গরুর গাড়ির দৌড় প্রতিযোগীর কথা শুনে আসছেন অনেক দিন ধরে। কিন্তু কখনো বাস্তবে দেখেনি। এবারি প্রথম কয়েক বন্ধু মিলে এ দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে এসেছেন। খুব আনন্দ ও মজা পেয়েছেন তারা।

এইচ এস সি দ্বিয়ীত বর্ষের ছাত্র তাসনিম মোহাম্মদসহ তাদের বন্ধুরা জানান, তাদের বিনেদোনের তেমন কোন জায়গা নাই। সবসময় মোবাইল ফোনে পাবজী, ফ্রী ফায়ার খেলে সময় পার করেন। এখানে গরুর গাড়ি দৌড় প্রতিযোগীতা খেলা দেখে যতটা আনান্দ পাচ্ছেন, ততটা আনান্দ মোবাইল’এ গেম খেলে পাননি। তাই তাদের দাবী গ্রাম বাংলার এমন খেলা যেন প্রতিবছরই আয়োজন করা হয়।

আয়োজক ২নং মধুহাটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়াম্যান মোঃ ফারুক হোসেন জুয়েল বলেন, গ্রামবাংলার দীর্ঘদিনের ঐহিত্য আস্তে আস্তে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। এজন্য এলাকার যুবসজমাকে সাথে নিয়ে এই খেলার আয়োজন করা হয়েছে। চেষ্টা করছি গ্রামবাংলার এই ঐহিত্যকে ধরে রাখার জন্য, প্রতিবছরই এমন আয়োজন করার। তিনি আরো বলেন, বর্তমান প্রজন্ম মোবাইল ফোনে আশক্ত হয়ে বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত হচ্ছে, তারা যেন এই আয়োজন দেখে উদ্বুদ্ধ হয়, খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে এবং ইতিহাস ঐহিত্যকে ধারণ করতে পারে এটাই আমাদের লক্ষ এবং প্রাপ্তি।

গরুর গাড়ি দৌড় প্রতিযোগীতায় প্রধান অতিথি ঝিনাইদহ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড আব্দুর রশিদ বলেন, গরুর গাড়ি দৌড়, ঘোড় (ঘোড়া) দৌড়, নৌকা বাইচ এটা বাংলার কৃষ্টি কালচারের সাথে জড়িত। আমরা প্রতিনিয়ত বাংলার কৃষ্টিকালচার ধরে রাখার চেষ্টা করি। আয়োজোগদের প্রতি আহ্বান গরুর গাড়ি দৌড়, ঘোড় দৌড়, নৌকা বাইচ বাঙ্গালীর শিকড়। শিকড়কে হারাতে চাই না। আহওয়াবান বাংলার ঐহিত্যকে ধরে রাখতে হবে, বর্তমান প্রজন্মকে ইতিহাস সম্পর্কে জানাতে হবে।