কারচুপি করে ভারতীয় শেয়ার বাজারে দর বাড়ানোর অভিযোগ আদানির বিরুদ্ধে

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৮:১৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩

ছবি- সংগৃহীত

ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির সংস্থা আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কারচুপি করে শেয়ার দর বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণাকারী সংস্থা ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’-এর রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে ‘জালিয়াতি’ করে ধনী হয়েছেন আদানিরা।

আমেরিকান সংস্থার রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই ভারতের শেয়ার বাজারে শোরগোল পড়ে গেছে। রাতারাতি মুখ থুবড়ে পড়েছে আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলোর শেয়ার। সেনসেক্সও নেমে গেছে অনেকখানি।

হিন্ডেনবার্গ জানিয়েছে, গত দুই বছর ধরে তারা আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার এবং ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ের উপর নজর রেখেছে। খুঁটিনাটি তদন্ত চালিয়ে কারচুপির তথ্য জানতে পেরেছে তারা। তার পর তা প্রকাশ করা হয়েছে।

কিন্তু সমস্ত অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থার রিপোর্ট ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছে তারা। সেই সাথে আদানিদের পাল্টা অভিযোগ, বাজারে তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যই এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। এভাবে লগ্নিকারীদেরও বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।

আদানি গোষ্ঠী জানিয়েছে, হিন্ডেনবার্গ মোট ৮৯টি প্রশ্ন করেছিল। আদানিদের দাবি, হিন্ডেনবার্গের প্রশ্নাবলীর মধ্যে অন্তত ২১টি প্রশ্ন এমন ছিল, যার উত্তরকে কোনও ২ বছরব্যাপী তদন্তের ফলাফল হিসাবে দাবি করা যায় না। কারণ ২০১৫ সাল থেকে সর্বজনীন নথিতেই সেই প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়া ছিল।

আদানিরা আরও জানান, হিন্ডেনবার্গের তালিকাভুক্ত ৯টি সংস্থার মধ্যে ৮টিতে অন্তত ৬টি বড় অংশীদার রয়েছে। সংস্থাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডেলয়িট হ্যাসকিন্স অ্যান্ড সেলস, শাহ ধানধারিয়া অ্যান্ড কো., এসআরবিসি অ্যান্ড কো., ওয়ালকার চ্যান্ডিওক অ্যান্ড কো., কেএস রাও অ্যান্ড কো. ইত্যাদি।

Nagad

আদানিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা কৃত্রিম ভাবে শেয়ারের দর বাড়িয়েছেন। শেয়ারের দর কয়েক গুণ বাড়িয়ে আদানিরা বিশাল সম্পদ তৈরি করেছেন। এভাবে গত ৩ বছরে আদানির শেয়ার সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৮০০ শতাংশের বেশি।

সেই অভিযোগ উড়িয়ে গোষ্ঠীর পাল্টা দাবি, তাদের যে সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার সবগুলোর ক্ষেত্রেই এনএসই-র নিয়ম মানা হয়েছে। ফলে দর বাড়ানোর তত্ত্ব ভিত্তিহীন।

ভারতের শেয়ার বাজারের এই টালমাটাল পরিস্থিতির মাঝে গৌতম আদানির বিশাল সম্পত্তিহানি হয়েছে। শনিবার (২৮ জানুয়ারি) পর্যন্ত এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির সম্পদের পরিমাণ ৭ লক্ষ ৫৫ হাজার কোটি রুপি।

সম্প্রতি আদানি অন্তত ১ লক্ষ কোটি রুপির ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় এক ধাক্কায় ৪ ধাপ নেমে গিয়ে সপ্তম স্থানে চলে এসেছেন তিনি। চলতি অর্থবর্ষে আদানির ২ লক্ষ কোটি রুপির বেশি সম্পত্তি কমেছে।

আদানিদের শেয়ার বাজারেও দর কমেছে। গত বুধ এবং শুক্রবার আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলোর শেয়ারমূল্য কমেছে ৪.১৭ লক্ষ কোটি রুপিরও বেশি।

শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) ‘আদানি টোটাল গ্যাস’ খুইয়েছে ৭৯ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। ‘আদানি গ্রিন এনার্জি’-এর ৫৭ হাজার ৮৭৬ কোটি রুপির ক্ষতি হয়েছে। ‘আদানি ট্রান্সমিশন’ হারিয়েছে ৫২ হাজার ৫৩১ কোটি রুপি।

এছাড়া শুক্রবার ‘আদানি পাওয়ার’ এবং ‘আদানি উইলমার’-এর শেয়ার দর পড়েছে ৫ শতাংশ। ‘আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন’-এর শেয়ার দর পড়েছে ২৩ শতাংশ। হিন্ডেনবার্গের অভিযোগের প্রভাবেই শেয়ারবাজারে এই পতন বলে মনে করা হচ্ছে।

আমেরিকার সংস্থা দাবি করেছে, মরিশাস, আরব আমিরশাহির মতো কিছু দেশে আদানি পরিবারের মালিকানাধীন কিছু ভুয়ো সংস্থা রয়েছে। ওই দেশগুলোতে আয়কর ছাড়ের সুবিধা পাওয়া যায়। অভিযোগ ওই ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে বেআইনি লেনদেন, কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।

হিন্ডেনবার্গ এ-ও জানিয়েছে, আদানিদের ব্যবসা নিয়ে গবেষণা চালাতে তারা আদানি গোষ্ঠীরই কয়েক জন প্রাক্তন উচ্চপদস্থ কর্তার সাথে কথা বলেছেন। সেই সাথে কয়েক হাজার নথি পর্যালোচনা করা হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখেই প্রকাশিত হয়েছে তাদের রিপোর্ট।

আমেরিকান সংস্থার অভিযোগের পাল্টা যুক্তি খাড়া করল আদানি গোষ্ঠীও। শেয়ার বাজারে আবারও দর বাড়াতে মরিয়া গৌতম আদানিরা।

এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি আদানি গোষ্ঠীর মুখ্য অর্থনৈতিক কর্মকর্তা (সিএফও) জুগেশিন্দর সিংহ বলেন, “হিন্ডেনবার্গ এমন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করার আগে আমাদের সাথে কোনও রকম যোগাযোগের চেষ্টা করেনি দেখে আমরা বিস্মিত। ওদের উচিত ছিল আগে তথ্য যাচাই করে নেওয়া।” তিনি আরও বলেন, “হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টটি ভুল তথ্য এবং পুরনো, ভিত্তিহীন ও অসম্মানজনক কিছু অভিযোগের সমন্বয়ে গঠিত। এই অভিযোগগুলো ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে আগেই নাকচ করে দেওায়া হয়েছে।” সূত্র- আনন্দবাজার

সারাদিন/২৯ জানুয়ারি/এমবি