তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৪৩৬৫ মরদেহ উদ্ধার

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৯:৫৬ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৩

ছবি- সংগৃহীত

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। তুরস্ক ও সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৬৫ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তুরস্কেই মারা গেছেন ২ হাজার ৯২১ জন। আর সিরিয়ায় এক হাজার ৪৪৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দুই দেশে আহত হয়েছেন ১৭ হাজারের বেশি মানুষ।

কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান এ খবর প্রকাশ করেছে।

দুই দেশে এখন পর্যন্ত আহত হয়েছেন ১৭ হাজারের বেশি মানুষ। ভূমিকম্পে তুরস্কে অন্তত ৫ হাজার ৬০৬টি ভবন ধ্বংস হয়েছে।

তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, তুরস্কে মৃতের সংখ্যা কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ২ হাজার ৩৭৯ থেকে বেড়ে ২ হাজার ৯২১ জনে পৌঁছেছে।

সিরিয়ায় সর্বশেষ এক হাজার ৪৪৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। দুই দেশ মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৬৫ জনে পৌঁছেছে।

তুরস্কের দুর্যোগ পরিষেবা বিভাগের প্রধান ইউনুস সেজারের তথ্যমতে, তুরস্কে কমপক্ষে ২ হাজার ৯২১ জন নিহত এবং ১৫ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।

Nagad

প্রতিবেশী সিরিয়ায় অন্তত ১ হাজার ৪৫১ জন নিহত হয়েছে। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা জানায়, সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ৭১১ জন মারা গেছে। তাদের বেশির ভাগই আলেপ্পো, হামা, লাতাকিয়া ও তারতুস অঞ্চলের বাসিন্দা।

তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর কাহরামানমারাসের ২৩ বছর বয়সী সাংবাদিক মেলিসা সালমান বলেন, এবারই প্রথম আমরা এ ধরনের কিছু দেখছি। এটি মহাবিপর্যয়।

সিরিয়ার ন্যাশনাল আর্থকোয়েক সেন্টারের প্রধান রায়েদ আহমেদ এটিকে ‘ইতিহাসে তাদের রেকর্ড করা সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প’ বলে অভিহিত করেছেন।

সোমবার প্রথমে ভূমিকম্পের পর কয়েক ডজন আফটারশক হয়েছে। এর মধ্যে একটি ছিল ৭ দশমিক ৫ মাত্রার কম্পন, যা অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজ চলাকালে অঞ্চলটিকে ঝাঁকুনি দেয়।

তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর দিয়ারবাকিরের ৩৫ বছর বয়সী হ্যালিস আকতেমুর বলেন, আমরা তিনজনকে বাঁচাতে পেরেছি, কিন্তু দুজন মারা গেছে।

তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নেমে যাওয়া সত্ত্বেও শহরটির আতঙ্কিত বাসিন্দারা উষ্ণতার জন্য আগুনের ব্যবস্থা করে রাস্তায় রাত কাটানোর প্রস্তুতি নেয়।

এদিকে, ভূমিকম্পের ঘটনায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরেদোয়ান সাত দিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। এরদোয়ান টুইটারে বলেন, আমাদের সরকারি ও বিদেশি সব দপ্তরে ১২ ফেব্রুয়ারি সূর্যাস্ত পর্যন্ত পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।

৮৪ বছরের মধ্যে তুরস্ক এত শক্তিশালী ভূমিকম্প দেখেনি। সবশেষ ১৯৩৯ সালে উত্তর-পুর্ব তুরস্কে এমন ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল। তখন প্রায় ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এ ছাড়া ১৯৯৯ সালে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ইজমীতে ৭ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গাজিয়ানতেপ শহরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ওই ভূমিকম্পের পর আরো অন্তত ৭৭টি আফটারশক (পরাঘাত) অনুভূত হয়, যার মধ্যে তিনটি ছিল রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার বেশি। আবার একটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫। এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে উদ্ধারকারী দল তুরস্কে এসেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তুরস্ককে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়াও জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীনসহ বিশ্বের বহু দেশ সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

সূত্র : এএফপি, আল জাজিরা, সিএনএন