শাকিবের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে যা বললেন নিপুণ

বিনোদন ডেস্কবিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: ২:১৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৬, ২০২৩

ছবি- সংগৃহীত

ঢাকাই সিনেমার সুপারস্টার শাকিব খানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দপ্তরে গুরুতর অভিযোগ দায়ের করেছেন নির্মাণাধীন ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার অন্যতম প্রযোজক।

বিষয়টি নিয়ে শাকিব খান এখনও কোনও মন্তব্য না করলেও কথা বলেছেন শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তার। স্পষ্ট করেই তিনি গণমাধ্যমকে বললেন, “এই ইস্যুতে আমরা আমাদের আর্টিস্টকে প্রায়োরিটি দেব।”

নিপুণ আরও বলেন, “যে কেউ সমিতিতে অভিযোগ দিতে পারেন। এটাও তেমনই একটি অভিযোগ। আমরা সেটা রিসিভ করেছি। আপনারা জানেন, আমাদের সভাপতি এখন দেশের বাইরে। তিনি দেশে আসলেই আমরা বিষয়টি সাংগঠনিক টেবিলে বসে পর্যালোচনা করব। আমরা শাকিব খানের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করব। পুরো বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করব।”

নিপুন বলেন, “শাকিব খান ইন্ডস্ট্রির একজন সুপারস্টার। আমরা তার সাথে পুরো বিষয়টি আলাপ করব। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করব। মোট কথা আমরা আমাদের আর্টিস্টকে প্রায়োরিটি দেব। এরপর যিনি অভিযোগ করেছেন, তার সাথেও কথা বলব। তারপর একটা সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে।”

এর আগে গতকাল (১৫ মার্চ) বুধবার বিকেলে শাকিব খানের বিরুদ্ধে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী প্রযোজক রহমত উল্ল্যাহ। সেখানে তিনি অপেশাদার আচরণ, চুক্তিভঙ্গ ও এক নারী সহ-প্রযোজককে ধর্ষণের মতো অভিযোগ তুলেছেন শাকিব খানের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ পত্রটি পাঠাকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

Nagad

“২০১৭ সালে পূর্ব চুক্তি মোতাবেক অভিনেতা শাকিব খান ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নামক সিনেমার কাজে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। আমি সেই চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রযোজক। তার মতো একজন বিখ্যাত অভিনেতাকে নিজের চলচ্চিত্রে অভিনয় করাতে পারব জেনে পুলকিত ছিলাম। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেলে ব্যবসাসফল হবে সেই বিশ্বাস ছিল। ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ মুক্তি পেলে সেটি হতো অস্ট্রেলিয়ায় অভিনীত প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র। আমার এবং এটার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের আশা ছিল সিনেমাটির হাত ধরে অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্কে নতুন একটি অধ্যায় রচিত হবে।

শাকিব খান একজন বিখ্যাত অভিনেতা। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের দর্শক চাহিদা অনেক। তাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল তিনি আমাদের সাথে পেশাগত আচরণ করবেন। অথচ, আজ পর্যন্ত এই সিনেমার কাজ তিনি শেষ করেন নাই। ২০১৭ সালে অপারেশন অগ্নিপথের চিত্রায়নের সময় তিনি যে সকল ক্ষতিকর কাজ করেছিলেন তার সংক্ষিপ্ত তালিকা নিম্নে দেয়া হল-

১. আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেয়া সত্ত্বেও কোনো রকমের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শুটিং বাতিল করে দিতেন।

২. তার খাদ্যাভ্যাসজনিত চাহিদা ছিল এমন যে হঠাৎ করে তিনি অদ্ভুত রকমের খাবার খেতে চাইতেন; আর তাতেই পুরো শুটিং ইউনিট নিয়োজিত হতো তার পছন্দের খাবার খুঁজে বের করার জন্যে। এতে করে শুটিংয়ের কাজে যেমন ব্যাঘাত হতো, তেমনি চলচ্চিত্রের নির্মাণ বায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে গিয়েছিল।

৩. তিনি শুটিং করতে আসতেন নিজের ইচ্ছা মতো সময়ে। অনেক সময় এমন হতো যে অত্যন্ত ব্যয়বহুল সেট বানিয়ে আমরা তার জন্যে অপেক্ষা করতাম। তিনি হয়ত শেষ বেলায় দুই এক ঘণ্টা অভিনয় করার জন্য আসতেন। এভাবে শুটিং না করেও সকলের বেতন দিয়ে আমরা শুধু অপেক্ষা করতাম তিনি আসবেন বলে।

৪. এখন বর্ণনা দিচ্ছি তার ব্যয়বহুল যৌনাচারের। তাকে নিয়মিত পতিতালয়ে নিয়ে যেতে হতো, আর তা না হলে তার হোটেল কক্ষে অস্ট্রেলিয়ান যৌনকর্মীদের নিয়ে আসতে হতো। এই ব্যাপারটি ছিল প্রতিদিনের রুটিন। কখনো কখনো একাধিকবার। এই সকল যৌনকর্মীদের মোটা অংকের পারিশ্রমিক আমাদেরকেই দিতে হতো

৫. একবার শাকিব খান আমাদের একজন নারী সহ-প্রযোজককে কৌশলে ধর্ষণ করে বসলেন। ভুক্তভোগী এই নারীকে তিনি অত্যন্ত পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করলেন। গুরুতর জখমসহ রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। নির্যাতিতা তখন এই ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। (মামলা নং: NSW Police reference no: E 62494959) নির্যাতিতা নিজেও একজন বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত নারী। আমি সেই ফৌজদারি অভিযোগের সাক্ষী ছিলাম। এই ঘটনার পর তিনি এবং তার পরিবার সামাজিকভাবে যেই গ্লানি এবং কুৎসার স্বীকার হন, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে একটা পর্যায়ে তার নিজের এবং তার পরিবারের টিকে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। ওইদিন আমরা যখন সহকর্মীকে নিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত, শাকিব খান সেইদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে চুপিসারে চলে যান।

এরপর থেকে শাকিবের সাথে বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে তিনি আবার অস্ট্রেলিয়ায় আসলে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্ততার হন। সামাজিক চাপে এবং আরও নিগ্রহের ভয়ে নির্যাতিতা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি না হওয়ায় শাকিব সেই যাত্রায় ছাড়া পেয়ে যান।

উল্লেখ্য, ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার পরিচালনা করছিলেন আশিকুর রহমান। এই সিনেমাটি ২০১৭ সালে শুটিং শুরু হলেও এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। এতে শাকিবের নায়িকা হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন সিবা আলী খান। তাদের পক্ষ থেকে অবশ্য কোনও অভিযোগের খবর প্রকাশ্যে আসেনি।

সারাদিন/১৬ মার্চ/এমবি