জামালপুর সব আসনে জয় চায় আ.লীগ, প্রস্তুত হচ্ছেন বিএনপি প্রার্থীরাও

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৩৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৫, ২০২৩

আসছে জাতীয় নির্বাচন। এই কাছাকাছি সময় সারাদেশেই বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কর্মকাণ্ডে মুখর হয়ে উঠছে জামালপুরের পাঁচটি সংসদীয় আসনের প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা। এই জামালপুরের আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদ খুব বেশি নেই। সেই সুযোগ পাচ্ছে উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন এ দলটি। দেশ স্বাধীনের পর দু-এক বার অন্য রাজনৈতিক দলের কেউ কেউ নির্বাচিত হয়েছেন। তবে বেশির ভাগ সময় পাঁচটি আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। জয়ের এ ধারা ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সবার কর্মাকণ্ডে মুখর হয়ে উঠছে এসব এলাকা। এদিকে এ আসন নিজেদের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে বিএনপি।

সেই সাথে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন বিএনপি প্রার্থীরা। আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের অংশীদার হিসেবে আসন ছাড়ের প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছে জাতীয় পার্টি।

জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ) :

এ আসনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ। তিনি এখান থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আবুল কালাম আজাদ ছাড়াও এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নূর মোহাম্মদ। তিনি এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তরুণ প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী এম এ সাত্তারের ছেলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার। তিনি এলাকায় গণসংযোগের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এবং দুস্থ মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মো. মোখলেসুর রহমান আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে সক্রিয় আছেন। শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে মহিলা দল নেত্রী সাহিদা আক্তার রিতাও মাঠে রয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম ও রশিদুজ্জামান মিল্লাতের ছেলে ব্যারিস্টার শাহাদাত বিন জামান শোভনও মনোনয়নপ্রত্যাশী। জামালপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি ও বাণিজ্যমন্ত্রী এম এ সাত্তার, দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল হকও জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী। দলের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের বকশীগঞ্জ উপজেলা সভাপতি মাওলানা আবদুল মজিদ।

জামালপুর-২ (ইসলামপুর) :

এ আসনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, বর্তমান সংসদ সদস্য ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ ফরিদুল হক খান দুলাল। তিনি এ আসন থেকে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এবং চতুর্থবারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এ ছাড়া এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) খালেদ মোশাররফের মেয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মেহজাবীন খালেদ, বিমানবন্দর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শাহজাহান আলী মণ্ডল ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বেগম হুসনে আরা। এ আসনের বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মাহমুদ বাবু এলাকায় একসময় সরব ছিলেন। তার পরও ইসলামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সুলতান মাহমুদ বাবু এখানে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী। তিনি ছাড়াও এ আসনে জেলা বিএনপির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নবী নেওয়াজ খান, উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মনোয়ার হোসেন বিএসসি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং জামালপুর জেলা ও ইসলামপুর উপজেলা আহ্বায়ক মোস্তফা আল মাহমুদ।

Nagad

জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) :

এখানে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন দলেল কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। তিনি এ আসনে ১৯৯১ সাল থেকে টানা ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। নিজের নির্বাচনী এলাকা ছাড়াও জেলা সদরে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি জামালপুরের উন্নয়নের রূপকার খেতাব পেয়েছেন। জামালপুরে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, ইকোনমিক জোন, কালচারাল ভিলেজ, শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, টেক্সটাইল কলেজ, শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, উড়ালসড়ক, একাধিক বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্প একনেকে পাস করিয়েছেন তিনি। এর বেশির ভাগ প্রকল্পই এখন দৃশ্যমান। এখানে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন মেলান্দহ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতা হিসেবে পরিচিত বাবুল তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। তিনি নিয়মিত দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখার পাশাপাশি সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করছেন।

জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) :

এ আসনের আলোচিত সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। তার কিছু কর্মতৎপরতা এবং বক্তব্যের কারণে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হলেও সম্প্রতি তিনি দলীয় সভানেত্রীর কাছে লিখিতভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন। তিনি আবারও দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ ছাড়া এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুর রশিদ, সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশা, সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের পানিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান হেলাল।

এ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জামালপুর জেলা ও উপজেলা বিএনপি সভাপতি ফরিদুল কবীর তালুকদার শামীম। তিনি বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারের ভাতিজা। জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ জোয়ার্দার ও মোখলেছুর রহমান।

জামালপুর-৫ (সদর) :

জামালপুর সদর আসনটি আওয়ামী লীগের দলীয় আসন হিসেবেই পরিচিত। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মো. মোজাফ্ফর হোসেন। এলাকায় তিনি একজন ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি ছাড়াও বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত বিচরণ রয়েছে তার। দ্বিতীয় দফায় মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি, জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক আহমেদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম রেজনু, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাক আ ব ম জাফর ইকবাল জাফু ও এইচ আর জাহিদ আনোয়ার দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। জামালপুর সদরে বিএনপির একাধিক প্রার্থী নির্বাচন করতে প্রস্তুত। তারা হলেন ময়মনসিংহ বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও জামালপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন, মহিলা দল নেত্রী ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিলোফার চৌধুরী মণি ও সাবেক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী সিরাজুল হক। এখানে জাতীয় পার্টি থেকে একক প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন জামালপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন খান। দলের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের জামালপুর জেলা শাখার নেতা ডা. ইউনুছ আলী। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।