মাংসের অস্বাভাবিক দাম, জালিয়াতি ঠেকাতে মাঠে গোয়েন্দা সংস্থা

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৩২ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৯, ২০২৩

বেশ কয়েক সপ্তাহ মুরগির বাজারের মাত্রাতিরিক্ত দামে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছিলো সীমিত আয়ের মানুষ। সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কারণে লাফিয়ে বাড়তে থাকা ব্রয়লার মুরগির দামের দৌড় অবশেষে কিছুটা থেমেছে। দু’দিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম কমেছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। এতো গেলো মুরগির মাংসের কথা, অন্যদিকে গরু-খাসির মাংস ও এখন সবার বিলাসী খাবারের তালিকায়। কিন্তু কেন বাড়লো, হঠাৎ করে কেন এমনটা হলো?

বিভিন্ন প্রতিবেদন ও বাজার মনিটরিং সংস্থা গুলো বলছে, সিন্ডিকেট করে কারসাজির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে ব্রয়লার মুরগির বাজার। সিন্ডিকেটের সদস্যরা যখন ইচ্ছে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়াচ্ছে। আবার লাভের আশার ক্ষুদ্র খামারিরা যখন মুরগির পালন করছে, বাজারজাতের ঠিক আগ মুহূর্তে ইচ্ছে করে দাম কমিয়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

এ বিষয়ে আরও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান গণমাধ্যমকে আরও বলেন, বড় উদ্যোক্তা হওয়ায় কম দামে মুরগি বাজারে ছাড়লেও তারা তেমন একটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। কারণ তাদের উৎপাদন খরচ কম। কিন্তু উৎপাদন খরচ প্রান্তিক পর্যায়ে বেশি হওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নিরুৎসাহিত হচ্ছে পোল্ট্রি শিল্পে। মূল ব্যবসাটা চলে যাচ্ছে বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানি গুলোর কাছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্রয়লার মুরগির বাজারের কারসাজির মূল হোতাদের খুঁজে বের করতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থা।

এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাঁচদিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজিতে ৮০-৯০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। পোলট্রি খাতের শীর্ষস্থানীয় চার প্রতিষ্ঠান খামার পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ১৯০-১৯৫ টাকা নির্ধারণের পরেই বাজারে এমন নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে-বলছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়, যা গতকাল সোমবার ছিল ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। অর্থাৎ একদিনের ব্যবধানে দাম কমেছে কেজিতে ২০ টাকা। এ দাম রোজা শুরুর আগের দিন (২৩ মার্চ) ৩০০ টাকা ছুঁই ছুঁই করছিল।

এদিকে অস্বাভাবিক এই দাম বাড়া, বাজার অস্থিরতা নিয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, চলতি মাসের শুরুতে ব্রয়লার মুরগি যখন ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি শুরু হয়, তখন (৫-৬ মার্চ) আমরা সারা দেশে অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানের তথ্যের ভিত্তিতে ৯ মার্চ আমরা পোল্ট্রি সেক্টরের সকল পর্যায়ের স্টেক হোল্ডারদের ডেকে পাঠাই। সেখান থেকে জানতে পারি, বড় কোম্পানিগুলোর প্রতিকেজি মাংসের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। আর বড় ফার্মগুলোর কন্ট্রাক্টের বাইরের প্রান্তিক খামারিদের ১৬০ টাকা। সেই মিটিংয়ের পর আমরা সরকারে কাছে ৮ দফা সুপারিশ করি। পরদিন দেখি দাম আরও বেড়ে গেছে! ফার্ম গেট থেকে ২২০-২৩০ টাকা বিক্রি করা হয়েছে।

এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে বড় চার কোম্পানিকে শোকজ করা হয়। পরে বড় কোম্পানিগুলো ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা ব্রয়লার মুরগি বিক্রির ঘোষণা দেয়। কিন্তু রোববার রাত থেকে দাম কমিয়ে ১৫৩ টাকায় বিক্রি শুরু করে তারা।

Nagad

এ পরিস্থিতিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিভাবে দেখছে জানতে চাইলে এ এইচ এম শফিকুজ্জামান জানান, বড় কোম্পানি গুলোগত রাতে ১৫৩ টাকায় ব্রয়লার বিক্রি করেছে। এতে ক্ষুদ্র খামারিরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আমরা গোয়েন্দা সংস্থাকে বলেছি, বাজারকে কারা ম্যানুপুলেট করার চেষ্টা করছে, কারসাজি কারা করছে, কেজিতে ৭০-৮০ টাকা নিয়ে গেলো কারা-এগুলো খুঁজে বের করতে। তাদের প্রতিবেদন হাতে পেলে আমরা সরকারের কাছে আমাদের সুপারিশ গুলো তুলে ধরবো।