ঝিনাইদহের বিস্ময়কর যমজ দুই ভাই ঠান্ডু-মন্টু

এমন মিল খুব কমই দেখা মেলে । মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধানে জন্ম হলেও তাদের বেড়ে ওঠা, স্কুল, কলেজ এমনকি চাকরিও করেছেন একই কর্মস্থলে । অবসর জীবনও কাটাচ্ছেন একই সাথে । দুই ভায়ের ৬১ বছরের জীবনে কখনই হয়নি কোন মনোবিরোধ। গ্রামের মানুষরাও তাদের অন্তরঙ্গতায় অবাক-বিস্ময় প্রকাশ করেন ।

দুই ভাইয়ের সাথে কথা বলে জানাযায়, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পাগলাকানাই ইউনিয়নের বানিয়াকান্দর গ্রাম। এ গ্রামের বিশারত আলী রাহেলা খাতুন দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় যমজ দুই ভাই । ১৯৬২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধানে জন্ম নেয় যথাক্রমে হানজিলার রহমান ওরফে ঠান্ডু মিয়া ও তানজিলার রহমান ওরফে মন্টু মিয়া। চেহারা এক হওয়ায় স্কুল, কলেজ এমনকি কর্মস্থলেও সবসময় তাদের পোশাক ছিল একই রকম । ১৯৭৭ সালে এসএসসি পাস করেন ঠান্ডু ও মন্টু মিয়া। সেখানেও তাঁদের দুজনের প্রাপ্ত নম্বর ছিল একই। ঝিনাইদহ সরকারি কেজি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন ১৯৭৯ সালে। এরপর তাঁরা একই কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। এরপর ১৯৮৬ সালে দুজনই একসঙ্গে পরিসংখ্যান অধিদপ্তরে চাকরি করেন । রিটায় করেছেন ৩৫ বছরের চাকুরী জীবন শেষে।

যমজ দুই ভাইয়ের মা রাহেলা নেছা বলেন, ছোট থেকেই দুই ভাইয়ের মধ্যে অনেক মিল ছিলো। তারা দুই ভাই কোন কাজ করতে গেরে দুজনে পরামর্শ করেই কাজগুলো করে। ওরা যখন বাড়ির বাইরে থাকে তখন আমার খুব চিন্তা হয়। কাগজ কলমে ওদের নাম হানজিলার ও তানজিলার আর ডাক নাম ঠান্ডু ও মন্টু। দুই ভাইয়ের একসাথে দেখে আমার খুব ভালো লাগে।

গ্রামের বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, ঠান্ডু ও মন্টু মিয়ার মিলের কোনো শেষ নেই। অনেক যমজ রয়েছে, তবে এতটা মিল কোথাও দেখা যায় না।

৮নং বানিয়াকান্দর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আবু কাক্কা এই যমজ দুই ভাই সম্পর্কে বলেন, একজীবনে একে অপরের সঙ্গ ছাড়েননি তারা। অনেক সময় দুই ভাইকে গুলিয়ে ফেলেছেন অনেকে।

তানজিলার রহমান ওরফে মন্টু মিয়া বলেন, ছোট থেকেই একই রকম পোশাক পড়েছি। স্কুলে পড়েছি, কলেজে পড়েছি, ডিগ্রী পাস করেছি সব একই সাথে। চাকুরীও পেয়েছি একই দিনে একই সাথে। আবার চাকুরী থেকে অবসরেও গেছি একই সাথে। পড়ালেখা শেষে তাঁরা চার বছর বাড়িতে কৃষিকাজ করেছেন। এরপর ১৯৮৬ সালে দুজনই একসঙ্গে পরিসংখ্যান অধিদপ্তরে চাকরির আবেদন করেন। চাকরিতে মৌখিক পরীক্ষার সময় ঠান্ডু পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে আসলে তিনি ভেতরে যান। তাঁকে দেখে উপস্থিত কর্মকর্তারা বিস্মিত হয়ে জানতে চান, ‘এইমাত্রই তো সাক্ষাৎকার দিয়ে গেলেন, আবার কেন এসেছেন? তখন তিনি বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন। এরপর একই চিঠিতে দুই ভাইয়ের চাকরি হয়। ওই বছরের ৮ এপ্রিল ঢাকায় একসঙ্গে চাকরিতে যোগ দেন। চাকরিজীবনে দেশের বিভিন্ন স্থানে একই অফিসে কাটিয়েছেন দুই ভাই। ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সহকারী পরিসংখ্যান কর্মকর্তা হিসেবে একসঙ্গে অবসরে যান। তিনি বলেন, জীবনে অনেক মানুষের ভালো বাসা পেয়েছেন। দুই ভাই একই সাথে মুখ মিলায়ে হারিকেনের আলোই একটি বই পড়েছি। দুই মিলে অনেক মজাও হয়েছে।

Nagad

হানজিলার রহমান ওরফে ঠান্ডু মিয়া বলেন, ১৯৬৭ সালে দুই ভাইকে এক গ্রাম পরে কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন বাবা। এরপর তারা প্রতি শ্রেণিতে হয় ১ম থেকে তৃতীয় হয়েছেন। কখনো কখনো দুই অথবা তিন, আবার কখনো তিনি ৩য় এবং মন্টু ২য় হয়েছে। এভাবে ১৯৭১ সালে পঞ্চম শ্রেণি অটো পাস করি। এরপর ১৯৭২ সালে বেড়বাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিদ্যালয়টি তখন নিম্ন-মাধ্যমিক ছিল। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় একটি বার্ষিক পরীক্ষায় দুই ভাই একই নম্বর পাই। এরপর বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক তাঁদের দুজনকে অফিস কক্ষে ডেকে আনেন। এরপর দুজনের সম্মতিতে প্রধান শিক্ষক ছোট ভাইকে প্রথম ঘোষণা করেন।

তারা আরো জানান, দুই ভাই ২০২০ সালে অবসরে যান একই সাথে । অবসরের পর ঠান্ডু ও মন্টু মিয়ার বাড়িতেই মিনি পার্ক তৈরি করেছেন। এখন ওই পার্কের গাছপালা দেখভাল করে সময় কাটান। ঠান্ডু মিয়ার দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। মন্টু মিয়া তিন মেয়ের বাবা।