পিঠে বড়শি বিঁধে শূন্যে ঘুরানো হলো ৬ সন্ন্যাসীকে, ভক্তের ঢল

বড়শিতে গাথা জ্যান্ত তাজা মানুষ। চড়ক গাছে ঝুলিয়ে প্রায় ২৫/৩০ ফুট শূন্যে ঘুরাতে ঘুরাতে সন্ন্যাসী ভিম কুমার হালদার ছুড়ে দিচ্ছেন বাতাসা। শুধু ভিম কুমার হালদার নয় একে একে ৬ সন্ন্যাসীর পিঠে বড়শী বিধে শূন্যে ঘুরে পালন করলেন শিব পুজারই অংশ চড়ক উৎসব। গাঁ শিউরে উঠা এই দৃশ্য দেখলেন প্রায় ২০ হাজার নারী- পুরুষ। ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের বকুলতলায় প্রতি বছরের ন্যায় বিকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে চড়ক উৎসব।

মহেশপুর শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমের একটি গ্রাম ফতেপুরের বকুলতলা বাজার। হিন্দু ধর্মাবলীরা উৎসব আয়োজনে এ পুজা করে থাকেন। প্রতি বছর এই পূজার মুল আকর্ষণ থাকে ৬/৭ জন সন্ন্যাসীর পিঠে বড়শি বিদ্ধ হয়ে শূন্যে ঘোরা। এবার এক জন সন্ন্যাসী অসুস্থ থাকার কারণে ৬ জন সন্ন্যাসী বড়শি (বান) ফোড়ালেন ।

স্থানীয়রা জানায়, প্রায় দুই শো’ বছর ধরে চলে আসছে এ চড়ক পূজা। আর এ পূজাকে ঘিরে বকুল তলা বাজারে ৫ দিন ধরে চলছে বর্ণাঢ্য লোকজ মেলা। ফতেপুরের এ চড়ক মেলার মুল আকর্ষণ বড়শি বিদ্ধ হয়ে শূন্যে ঘোরানো (স্থানীয় ভাষায় বলা হয় বান ফোরানো) এ দৃশ্য অবলোকনের সাথে সাথে মেলায় কেনা কাটা করতে সকাল থেকে হাজির হয় প্রায় ২০ হাজার নারী-পুরুষ। দুপুরের পর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে মেলা প্রাঙ্গণে। বিকেলের মধ্যে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় পুরো এলাকা জুরে। পুরো এলাকা জুড়ে উৎসবের আমেজ। ঠিক বিকাল ৫ টা বাজার সাথে সাথে ৬ সন্ন্যাসী ফতেপুর গ্রামের মনা কর্মকতার,বিল্পক কর্মকার,কৃশচন্দ্রপুর গ্রামের বাসুদেব কুমার ও বৌচিতলা গ্রামের মহাদেব কুমার,অধির কুমার ফতেপুর বাওড়ে স্নান করেন। এরপর ৬ সন্ন্যাসী মাটির কলসে জল (পানি) ভরে মাথায় নিয়ে আসেন মেলা প্রাঙ্গণে চড়ক গাছের গোড়ায়। ঠিক ৪ টা ২৫ মিনিটে প্রথমে ভীম হালদারের পিঠে দুটি বড়শী বিদ্ধ করা হয়। এ সময় স্মরণ করা হয় মহাদেব শিব ঠাকুরকে। এরপর ভীমকে ১০/১৫ জন পুরুষ ধরাধরি করে ঝুলিয়ে দেন চড়ক গাছে। অপর গাছের অপর প্রান্তে থাকা কপিকলের বাঁশ জোরে জোরে ঘোরাতে থাকেন ২০/৩০ জন যুবক। চড়ক গাছে লটকে দেওয়ার সাথে সাথে কিছু মহিলা তাদের এক দেড় বছরের শিশু সন্তানকে তুলে দেন সন্ন্যাসীদের কোলে। তাকে নিয়েই শূন্যে ঘুরতে থাকে সন্ন্যাসীরা । এ অবস্থায় ছিটিয়ে দেওয়া হয় বাতাসা।এভাবেই বড়শীতে বিধে ৪/৫ পাক শূন্যে ঘুরে নেমে আসেন ভীম হালদার। এ নিয়ে ১৮ বার চড়ক গাছে চড়লেন তিনি।

ভীম হালদার জানান,এখানে হিন্দুর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। কিন্তু সবাই চড়ক গাছে উঠতে পারে না। এতে উঠতে গেলে মনের অনেক সাহস লাগে। ভীমের পর একে একে বান ফোড়ালেন বিল্পব কুমার,বাসুদেব কুমার,মহাদেব কুমার ও অধির কুমার। স্থানীয়রা জানান, আগে শুধুমাত্র পিঠে বান ফুরিয়েই ঝুলিয়ে দেওয়া হতো চড়ক গাছে। আর সে অবস্থাতেই ঘোরানো হতো।

সন্ন্যাসী মনা কর্মকার জানান, শিব ঠাকুরের সন্তুষ্টির জন্যই তারা প্রতি বছর চড়ক গাছে চড়ে থাকেন। তিনি আরো জানান, শরীরে বড়শী বিধার ফলে বড় ধরণের ক্ষতের সৃষ্টি হলেও সামান্যই রক্ত বের হয়। কিন্তু এর জন্য কোন ঔষধ লাগে না তাদের।

মিষ্টির দোকানী মোসলেম আলী বলেন, ১০/১২ রকমের মিষ্টি সাজিয়ে বিকিনিকি করছেন। তিনি এবার ১৫ বারের মত মেলায় আসলেও বেচাকেনা বেশ ভালোই হচ্ছে বলে জানান। কুষ্টিয়ার একতারপুরের সাখা সিঁদুর বিক্রেতা বিমল সরকারও বিকিনিকি করছেন তার পণ্য সম্ভার।

Nagad

পূজা ও মেলা কমিটির সভাপতি সুনিল ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক সুবোল কর্মকার জানান, চড়ক পূজা মূলত শিব পূজারই অংশ বিশেষ। নানা আনুষ্ঠানিকতায় তা সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।

সারাদিন. ১৮ এপ্রিল