ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডব, বেশি ক্ষয়ক্ষতি টেকনাফ-কক্সবাজারে

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৯:৫১ পূর্বাহ্ণ, মে ১৫, ২০২৩

ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে কক্সবাজারে দুই হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১০ হাজার ঘরবাড়ি। গতকাল রোববার (১৪ মে) বিকেল ৩টার দিকে আঘাত করে সন্ধ্যায় উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করে ঘূর্ণিঝড়টি। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি টেকনাফ-কক্সবাজারে।

ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, ‘যত তীব্রতায় আঘাত হানার কথা ছিল, আঘাতের তীব্রতা তত নয়। আঘাতের সময় সেন্ট মার্টিনে বাতাসের গতিবেগ ১৪৭ কিলোমিটার ছিল বলে জানিয়েছে আবহওয়া অধিদপ্তর।’

ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানে ভাটার সময়। দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুটের বেশি উচ্চতায় প্লাবিত হয়েছে। সারা দেশে হতাহতের বড় কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি, ফসল ও গবাদি পশুর ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার মোখায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলা আবহাওয়া অফিসের প্রধান আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, ‌‘বিকাল ৩টার দিকে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়টি। এতে সেসব এলাকার ঘরবাড়ি, গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটিসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ভেঙে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্র বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করে মিয়ানমারের দিকে যাচ্ছে। ঝড়ের ব্যাস বড় হওয়ায় পুরোপুরি অতিক্রম করতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় লাগবে। বাংলাদেশের উপকূলে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০-৫৫ কিলোমিটার। যা ক্ষতি হয়েছে, এর চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই। ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আমাদের যে বড় বিপদের শঙ্কা ছিল, এখন তা আর নেই।

এরও আগে ভোরে কক্সবাজার ও উত্তর মিয়ানমারের উপকূল অতিক্রম শুরু করে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’। সকাল ৯টায় যার কেন্দ্র ছিল কক্সবাজার বন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে।

Nagad

সেসময় ৭৪ কিলোমিটারের ভেতরে বাতাসের একটানা সর্বাধিক গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার। দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে যা ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার কথা ছিল। তবে সকালে ভাটা থাকায় তা সেরকম প্রবল হয়নি।

সেন্ট মার্টিনের পর টেকনাফের মোখার আতঙ্ক সবচেয়ে বেশি ছিল। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘৩০ হাজার মানুষকে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়েছেন। মোট আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১০৬টি। তবে বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিছু বাড়ি-ঘর ও গাছপালা উড়ে গেছে। জনপদে জলোচ্ছ্বাস হয়নি।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান সন্ধ্যা ৬টার দিকে বলেন, “কোনো হতাহতের খবর আমরা পাইনি। প্রাথমিক তথ্য যা পেয়েছি, তাতে এ পর্যন্ত কক্সবাজার জেলার টেকনাফসহ ভিন্ন এলাকায় কাঁচা ও আধাপাকা দুই হাজারের মতো ঘর-বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হজারের মতো ঘরবাড়ি। তবে গবাদি পশুর হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি।”

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (২৮৯ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে।

অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে