‘কোনো সংকট নাই, তবে সবসময় রিজার্ভ ধরে রাখার চেষ্টা করি’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৬:৫১ অপরাহ্ণ, মে ১৫, ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা রিজার্ভ নিয়ে কথা বলতে বলতে সবার মাথায় এটা ঢুকে গেছে। তবে আমাদের রিজার্ভ এখনো যা আছে তাতে অন্তত এটুকু বলতে পারি, আমাদের কোনো সংকট নাই। তবে আমরা সবসময় রিজার্ভ ধরে রাখার চেষ্টা করি।

সোমবার (১৫ মে) বিকেল ৪টায় গণভবনে ত্রিদেশীয় (জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য) সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রিজার্ভ নিয়ে দেশে তেমন কোনো সংকট নেই। তিন মাসের খাদ্য কেনার মতো ডলার যেন হাতে থাকে, সেটা নিয়েই আমাদের চিন্তা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডলার সংকট তো সারা বিশ্বেই রয়েছে। করোনার সময় আমাদের জাতীয় কেনাকাটসহ সবকিছু বন্ধ ছিল, তাই ডলার কম খরচ হয়েছে। সে জন্য তখন ডলারের মজুত বেশি ছিল। করোনার পর বৈশ্বিক অর্থনীতি খুলে গেছে। আমাদের ক্রয় বেড়েছে, ডলার খরচ হয়েছে। তিন মাসের খাদ্য কেনার মতো ডলার যেন আমাদের হাতে থাকে, সেটা নিয়েই আমাদের চিন্তা। রিজার্ভ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। আমাদের তিন মাসের খাদ্য ক্রয়ের টাকা থাকলেই হয়।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আন্দোলন করুক কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু জ্বালাও-পোড়াও এবং মানুষ হত্যা করলে তাহলে তাদের ছাড়ব না। মানুষের ক্ষতি আর করতে দেব না।’ প্রধানমন্ত্রীকে এসময় নির্বাচনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন আসছে, ভয় পাব কেন? আমি জনগণের জন্য কাজ করেছি। জনগণ যদি চায়, আমরা আছি, না চাইলে নেই।’

‘আজকে বাংলাদেশ ডেভোলপমেন্ট দেশের মর্যাদা পেয়েছে’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ব্রিটেনে যেভাবে ইলেকশন করে, আমরাও সেভাবে ইলেকশন করব। পার্লামেন্টে যে সদস্যরা আছে, তারা যদি নির্বাচনকালীন সরকারে আসতে চায়; তাহলে আমরা আছি। এর আগেও আমরা নিয়েছি। এমনকি, ২০১৪ সালে খালেদা জিয়াকে আহ্বান করেছি, তাও তো তিনি অসেনি। তারাও (বিএনপি) তো এখন পার্লামেন্টে নেই। তারা মাইক লাগিয়ে বলে সরকার হটাবে। আমরা তো তাকে কিছু বলছি না, আমাদের সময় কি নামতে দিয়েছে?’

Nagad

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রেনেড হামলা করেও হত্যার চেষ্টা করেছে। আমাদের ২১ হাজার নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। নির্বাচন ঠেকাতে ৫০০ স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে। সাড়ে তিন হাজার লোক আগুনে পোড়া, তিন হাজার ৮০০ গাড়ি পুড়িয়েছে, ২৭টি রেল পুড়িয়েছে, ৯টি লঞ্চ পুড়িয়েছে এবং ৭০টি সরকারি অফিস পুড়িয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তারা তো জ্বালাও-পোড়াও, ওই গুলো করে গেছে। আমি বলে দিয়েছে—আন্দোলন করুক কোন আপত্তি নেই। কিন্তু জ্বালাও-পোড়াও যদি করে, মানুষ হত্যা করে, তাহলে তাদের ছাড়ব না। মানুষের ক্ষতি আর করতে দেব না। সেই পোড়া মানুষদের যন্ত্রণা ও চেহারা দেখলে আপনাদের কষ্ট হয় না? একটা পরিবার কী দুরবস্থায় আছে, কেউ কি খবর রাখেন? নিজের সন্তানকে কোলে নিতে পারে না, নিজের সন্তানের চেহারা দেখতে পারে না। কী বিভৎস অবস্থার সৃষ্টি করেছে বিএনপি জামায়াত।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনের তাদের ২০ দলীয় ঐক্যজোট সিট পেল ২৯টা। আর দালালি! কার পয়সায় এই আন্দোলন করছে? কোথা থেকে এই টাকা পাচ্ছে? বাংলাদেশের মানুষ কি অন্ধ হয়ে গেছে, চোখে দেখে না?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হাজার হাজার টাকা লুট করে নিয়ে গেছে, আর কাদের মদদে করছে সেটা একটু খোঁজ নিন। এত টাকা কোথায় পাচ্ছে, এই যে এত এত লোক নিয়ে আসে, আর প্রতিদিন মাইক লাগিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছে, এটা তো এমনি এমনি বিনা পয়সায় হচ্ছে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু ইনফ্লেশন কিছু বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা সেই জায়গায় আবার কতটুকু পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া যায় সেই চিন্তা-ভাবনা করছি। কমিশন কর, এটা কর, সেটা কর, এতে খুব বেশি লাভ হয় না। কিছু লোক বঞ্চিত হয়ে যায়, আর কিছু লোক লাভবান হয়। এ জন্য প্রতি বছরের হিসাব মতো ইনফ্লেশন যত বাড়বে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা বেতন বাড়াব। তাছাড়া অনেক সুযোগও দিয়েছি। বৈশাখী ভাতা থেকে শুরু করে ফ্ল্যাট কেনার লোন, গাড়ি কেনার লোনসহ অনেক সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বেতন যেভাবে বাড়িয়ে দিয়েছিলাম সেটা কিন্তু সবার জন্যই। তাই আমাদের মহার্ঘ্য ভাতার দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। যেহেতু ইনফ্লেশন বেড়ে গেছে, তাই ক্রয় ক্ষমতা অনুযায়ী এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন যেন বাড়তে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।বেসরকারি খাতের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা তাদের বিষয়। এটা সরকারের ব্যাপার না। বেসরকারি খাত করোনা ভাইরাসের সময় যেন বিপদে না পড়ে তার জন্য প্রণোদনা দিয়েছি। তাদেরকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হয়েছে। সেখানে আমরা ভর্তুকিও দিয়েছি। এই ভর্তুকিটা বাজেটে বিপদে ফেলেছে।

তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে এমন ভর্তুকি দেয় না। বিদ্যুতে ভর্তুকি দেওয়ায় কে বেশি লাভ পায়? যে সবচেয়ে বেশি এয়ারকন্ডিশন চালায় তার লাভ হয়। গরীব মানুষের তো লাভ হয় না। আসলে লাভবান হচ্ছেন বিত্তশালীরা। সব জায়গায় জ্বালানি তেল, পরিবহন এত বেড়েছে। এটা টানা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। যে দামে উৎপাদন হবে সেই দামে কিনতে হবে। যে যতটুকু পারবেন ততটুকু কিনবেন। সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে এসব জায়গায় ভর্তুকি দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই।

এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাতীয় সংসদের উপনেতা ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ।