হুমায়ুন ফরীদির ৭১তম জন্মদিন আজ

বিনোদন ডেস্কবিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩:৫৩ অপরাহ্ণ, মে ২৯, ২০২৩

ঢাকাই চলচ্চিত্র ও নাট্যাঙ্গনের কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির ৭১তম জন্মদিন সোমবার (২৯ মে)। ১৯৫২ সালের আজকের এই দিনে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া ইউনিয়নের চুয়ারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শক্তিমান এই অভিনেতা। তার বাবার নাম এ টি এম নূরুল ইসলাম ও মা বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।

১৯৬৫ সালে পিতার চাকরির সুবাদে মাদারীপুরের ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হুমায়ুন ফরীদি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন নাট্যাঙ্গনের সাথে।

পরে ১৯৭৬ সালে নাট্যজন সেলিম আল দীন-এর উদ্যোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় নাট্যোৎসব। আর হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন এর অন্যতম প্রধান সংগঠক। আর এই উৎসবে ফরীদির নিজের রচনায় এবং নির্দেশনায় মঞস্থ হয় ‘আত্মস্থ ও হিরন্ময়ীদের বৃত্তান্ত’ নামে একটি নাটক। ওই সময় নাটকটি সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।

১৯৮০ সালে ‘নিখোঁজ সংবাদ’-এর মাধ্যমে টেলিভিশন নাটকে অভিষেক হয় হুমায়ুন ফরীদির। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘নীল নকশার সন্ধ্যায়’ এবং ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’ নাটকে অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। তার অভিনীত ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’ আজও দর্শকের স্মৃতির পাতায় ভাস্বর। এতে কানকাটা রমজান চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যান।

আশির দশকেই তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে প্রথম পা রাখেন হুমায়ুন ফরীদি। পরবর্তীতে বাংলা সিনেমার জগতে নিজেই এক অধ্যায় হয়ে উঠেছেন তিনি। একে একে উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্র।

নব্বই দশকে বাণিজ্যিক সিনেমার পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘সন্ত্রাস’, ‘দিনমজুর’, ‘বীরপুরুষ’ ও ‘লড়াকু’ সিনেমাতে নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর দেশীয় চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্র পায় এক অন্যমাত্রা।

Nagad

দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত ও রোমান্টিক মানুষ হুমায়ুন ফরীদি আশির দশকের শুরুতে বেলি ফুলের মালা দিয়ে ফরিদপুরের মেয়ে মিনুকে বিয়ে করেন। তার এ বিয়ে সে সময় সারাদেশে বেশ আলোচিত ছিল। সে সংসারে দেবযানী নামে একটি কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। পরে হুমায়ুন ফরীদি সংসার শুরু করেন অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার সাথে। ২০০৮ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

এরপর থেকে একাকী জীবনযাপন করেছেন তিনি। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে হুমায়ুন ফরীদি তার অভিনয় দিয়েই মুগ্ধ করে রেখেছিলেন অগুনতি দর্শক-সমালোচককে।

২০০৪ সালে ‘মাতৃত্ব’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন হুমায়ুন ফরীদি। পরে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করেন।

হুমায়ুন ফরীদির অন্যতম জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলো হচ্ছে- ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘ভণ্ড’, ‘ঘাতক’, ‘ব্যাচেলর’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘টাকার অহংকার’, ‘অধিকার চাই’, ‘সন্ত্রাস’, ‘দহন’, ‘লড়াকু’, ‘দিনমজুর’, ‘বীর পুরুষ’, ‘বিশ্ব প্রেমিক’, ‘আজকের হিটলার’, ‘দুর্জয়’, ‘শাসন’-সহ অসংখ্য সিনেমা উপহার দিয়েছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রে।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন হুমায়ুন ফরীদি। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর।

সারাদিন/২৯ মে/এমবি