বাংলা চলচ্চিত্রে দাপুটে বাবারা

বিনোদন ডেস্কবিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৫:৪৫ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২৩

বাংলা চলচ্চিত্রে দাপুটে বাবারা

একটি সিনেমা শুধু নায়ক ও নায়িকা দিয়ে সম্পূর্ণ হয় না। সাধারণত নায়ক, নায়িকা, পরিচালক নিয়ে বেশি চর্চা হয়। আর অন্যরা আড়ালেই চিরকাল রয়ে যান। চিত্রনাট্যে যাদের উপস্থিতি ছাড়া একটি পারিবারিক সিনেমা সম্পূর্ণ হয়না, তারা হলেন চলচ্চিত্রের বাবারা।

দুই বাংলার চলচ্চিত্রে বাবাকে নানাভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। রূপালি পর্দায় যে বাবাদের দেখা যায় তারা কখনও কঠোর, কখনও স্নেহময়, কখনও আদর্শবাদী আবার কখনও তারা বিপথগামী। তবে বাবা অথবা সন্তান যেই বিপথগামী হোক না কেন সিনেমার শেষ পর্যায়ে তারা ফিরে আসে একে অন্যের কাছে। হয়তো যে কোনো একজন বা দুইজনের মৃত্যুতে তাদের দ্বন্দ্বের পরিসমাপ্তি ঘটে। আবার কখনও মধুরেন সমাপয়েৎ ঘটে।

আজ রোববার (১৮ জুন) ‘বিশ্ব বাবা দিবস’। প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ববাসী বাবা দিবস পালিত হচ্ছে। পৃথিবীর সব বাবার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকেই যার শুরু।

বাংলা চলচ্চিত্রে বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন যেসব শ্রদ্ধেয় কিংবদন্তি অভিনেতারা তাদের সেইসব আইকনিক চরিত্রগুলো নিয়ে। তবে এদের অনেকেই যৌবনে নায়ক রোলেও পার্ট করেছেন। এছাড়া বাংলা চলচ্চিত্রে বাবা-ছেলের ভূমিকায় দ্বৈত অভিনয় করেছেন উত্তম কুমার, রাজ্জাকসহ অনেক অভিনেতা। আবার অনেকে বাস্তবজীবনে বাবা ও সন্তান চলচ্চিত্রেও রয়েছেন।

নায়করাজ রাজ্জাক
বাবা কেন্দ্রিক বাংলাদেশি সিনেমা নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই মনে পড়ছে ‘বাবা কেন চাকর’ সিনেমাটির নাম। এখানে আদর্শবাদী এবং বৃদ্ধ বয়সে সন্তান দ্বারা নিপীড়িত বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলা চলচ্চিত্রে কিংবদন্তি অভিনেতা আব্দুর রাজ্জাক। ১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি ব্যবসাসফল হয়। সিনেমাটির পরিচালক ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক এবং প্রযোজনায় ছিল রাজলক্ষী প্রোডাকশন।

এছাড়া রাজ্জাক-শাবানা অভিনীত ‘আগুন’ সিনেমায় বাবা-ছেলের দ্বৈত ভূমিকায় ছিলেন রাজ্জাক। সুপারহিট এই সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৬ সালে। বাবা ও ছেলের কণ্ঠে ‘মুন্না আমার লক্ষ্মীসোনা’ গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পায় সেসময়।

Nagad

বুলবুল আহমেদ
বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে দাপুটে অভিনেতা বুলবুল আহমেদ। ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ সিনেমায় স্ত্রীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন বুলবুল আহমেদ একক বাবা হিসেবে শিশু সন্তানকে বড় করে তোলেন। সিনেমাটিতে বাবা-সন্তানের বেশ কিছু আবেগঘন দৃশ্য রয়েছে। এই সিনেমাটির ‘বাবা বলে গেল’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায় আশির দশকে। ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ সিনেমাটি ১৯৮১ সালের একটি বাংলাদেশি চলচ্চিত্র। এটি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশের খ্যাতনামা চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন। সিনেমাতে অভিনয় করেছেন বুলবুল আহমেদ, ববিতা, আনোয়ারা, প্রবীর মিত্র ও সুমিতা দেবী। এছাড়া ১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ‘দীপু নাম্বার টু’। এই সিনেমায় একক বাবা বুলবুল আহমেদের সাথে তার সন্তানের সম্পর্ককে তুলে ধরা হয়েছে। জাফর ইকবালের ১৯৮৪ সালের কিশোর ক্ল্যাসিক অবলম্বনে নির্মিত ‘দীপু নাম্বার টু’ সিনেমাটি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন মোরশেদুল ইসলাম। সিনেমাটির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অরুণ।

জহর গঙ্গোপাধ্যায়
ওপার বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনেতা ও নাট্যব্যক্তিত্ব জহর গঙ্গোপাধ্যায় একসময় নায়করূপে বহু সিনেমাতেই অভিনয় করেছেন। ‘মানময়ী গার্লস স্কুল’ জহর-কানন (দেবী) আইকনিক হিট। পরবর্তীকালে তাকে আমরা বাবার ভূমিকায় বেশি পেয়েছি। মধ্যবিত্ত বাঙালি পিতার রোলে জহর গাঙ্গুলি ছিলেন অব্যর্থ। মনে পড়ছে, বিজয় বসুর ‘আরোগ্য নিকেতন’ সিনেমাতে সন্ধ্যা রায়ের সেই জমিদার পিতা জহর গাঙ্গুলিকে। যিনি মৃত্যুভয়ে আতঙ্কিত ছিলেন। গ্রামের খ্যাতিমান আয়ুর্বেদ চিকিৎসক বিকাশ রায় জহর গাঙ্গুলির নাড়ি দেখে নিদান দিয়েছিলেন অল্পদিনের মধ্যেই তিনি মারা যাবেন। তখন জহর গাঙ্গুলির মুখখানা দেখার মতো। কারণ জহর সিনেমাতে জমিদার, তিনি মদ্যপানে আসক্ত ছিলেন।

ছবি বিশ্বাস
ওপার বাংলা চলচ্চিত্রে দাপুটে অভিনেতা ছবি বিশ্বাস। বাংলা সিনেমার আইকনিক ফাদার ফিগার। যার অভিজাত জমিদারি দাপট একসময় নকল করতেন প্রতিটি বাঙালি বাড়ির বাবারা। বিশেষ করে মেয়ের বাবারা তো পাড়ার ছেলেদের উৎপাত থেকে মেয়েকে বাঁচাতে ছবিবাবুকেই নকল করে কথাবার্তা বলতেন। তাতে দাপটটা বেশি দেখানো যেত।

ছবি বিশ্বাস একসময় নায়কের রোল করলেও উত্তম কুমার-সুচিত্রা সেনের যুগ থেকে তিনি বাংলা সিনেমার আল্টিমেট বাবা। উত্তম-সুচিত্রা জুটির বেশিরভাগ সিনেমাতেই ছবি বিশ্বাস আর পাহাড়ি সান্যাল বাবার ভূমিকায় থাকবেনই। কখনও বা দাপুটে শ্বশুরের ভূমিকায়। কিন্তু যে চলচ্চিত্রে ছবি বিশ্বাসের বাবার চরিত্র সবথেকে প্রধান তা হল ‘শশীবাবুর সংসার’। নামভূমিকায় ছবি বিশ্বাস। তাকে ঘিরেই গল্প। যিনি অবসরগ্রহণের পর কীভাবে সময় কাটাবেন বুঝে পাননা। তার মিলিটারি শাসনের ঠেলায় নিজের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, বৌমা সবাই অতিষ্ঠ। শেষ অবধি নিজেই একা স্টোভ জ্বালিয়ে রান্না করে খান শশীবাবু। ওই যে দাপট সেটা ছবি বিশ্বাস ছাড়া ভাবা যায়না।

পাহাড়ি সান্যাল

ওপার বাংলা চলচ্চিত্রে আরেক অভিনেতা পাহাড়ী সান্যাল। ছবি বিশ্বাস আর পাহাড়ি সান্যাল একে অপরের পরিপূরক। যেমন ‘শশীবাবুর সংসার’ সিনেমাতে ছবি ও তার শ্যালক পাহাড়ির যত আড়ি তত ভাব সম্পর্ক যেন বাস্তব চরিত্র মনে হয়। এই দুইজনের বোঝাপড়া সব সিনেমাতেই থাকত, যেমন ‘সদানন্দের মেলা’। ‘বিপাশা’তেও ছবি-পাহাড়ি অনবদ্য। আসলে পাহাড়ি সান্যালের ইমেজটা ছিল ছবি বিশ্বাসের ঠিক উল্টো। ছবির শাসনের উল্টোপিঠ পাহাড়ির স্নেহমাখা সোহাগ। তবে পাহাড়ি সান্যালও শাসন করতেন কিন্তু সেটা ছবি বিশ্বাস বা কমল মিত্রের মতো কড়া নয়। পাহাড়ির ভেতর একটা সাহেব কালচার ছিল। যেমনই ভালো ইংরাজি উচ্চারণ তেমনই ভালো গানের গলা।

কমল মিত্র
বিশিষ্ট বাঙালি অভিনেতা কমল মিত্র। ‘দেয়া-নেয়া’ সিনেমাতে কমল মিত্র-উত্তম কুমার বাবা-ছেলের বাকবিতণ্ডা তো আজও সামাজিক মাধ্যমে ভীষণভাবে জনপ্রিয়। কমল মিত্রের কণ্ঠস্বরই তার দাপট বুঝিয়ে দিত। তিনি এমন বাবা যিনি হেঁটে গেলেও পিনড্রপ সাইলেন্স। কমল মিত্রের হাসির সিনেমা খুব কম পাওয়া যায়। তাকে হাসতেও পর্দায় খুব একটা দেখা যায়নি। হেসেছেন মহিষাসুর রূপে। যার কাছে ছেলে-মেয়ে কখনই মাই ডিয়ার নয় বরং আপনি সম্বোধনেই দূরত্ব ও সম্মান প্রদর্শন করে চলতে হবে। যা তিনি বুঝিয়ে দিতেন তার ব্যক্তিত্বে।

কানু বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঙালি মঞ্চ ও চলচ্চিত্র অভিনেতা কানু বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা চলচ্চিত্রে দারিদ্র্যের মুখ কানু বন্দ্যোপাধ্যায়। সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালি’, ‘অপরাজিত’র হরিহর বা তপন সিনহার ‘উপহার’-এর সেই কৃপণ বাপ, সমস্ত সিনেমাতেই অসহনীয় দারিদ্র্য-যন্ত্রণা কানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয়ে ফুটে উঠেছে। এছাড়া ‘আলো আমার আলো’ সিনেমাতে সুচিত্রা সেনের দরিদ্র বাবা কানু। যার টাকার অভাবে স্ত্রী ভারতী দেবীর চিকিৎসা হয়না অন্যদিকে বড় মেয়ে অতসী বেহাত হয়ে যায় শহুরে প্রতিপত্তিওয়ালা বাবুদের হাতে। একে দারিদ্র্য তার উপর মেয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার অপবাদ সব সইতে থাকা কানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই মুখ দেখে চোখ ফেটে পানি আসবেই দর্শকের। এত গরিব বাবার রোল করেছেন কিন্তু তার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অভিনয়ের ধারা সবসময় সমালোচক মহলে প্রশংসিত হয়েছে।

উৎপল দত্ত
আরেক বিশিষ্ট অভিনেতা ও নাট্যকার উৎপল দত্ত। তাকে মজার বাবার বিভাগে রাখাই যেত। কারণ টলিউড, বলিউডে বেশিরভাগ চরিত্রই তিনি তেমন করেছেন। যে প্রথমে কানে ভুল শুনে, কিছুক্ষণ পর ঠিকটা শোনেন। এই দাপট, এই আবার সারল্য। কিন্তু এত মজার বাবার চরিত্র করেও সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে ‘সাহেব’ সিনেমাতে উৎপল দত্তর চিন্তাগ্রস্ত পিতার অভিনয়। যিনি বলেন, “আমায় বাঁচতেই হবে বড় বৌমা, বুল্টি আর সাহেবের জন্য বাঁচতে হবে।” যিনি ছেলে মেয়েদের মায়ের অভাব কোনদিনও বুঝতে দেননি। সেই পিতা উৎপল দত্ত অসামান্য।

কালী বন্দ্যোপাধ্যায়
বাংলা চলচ্চিত্রে খ্যাতনামা অভিনেতা কালী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সত্যজিৎ-মৃণাল-ঋত্বিকের সিনেমার হিরো। অথচ অঞ্জন চৌধুরী ঘরানাতেও তিনি বাবার রোলে থাকা মানে সিনেমা হিট। দর্শক আবেগে ভাসবেই। অঞ্জন চৌধুরী তার সিনেমাতে নতুনভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে আনলেন কালী বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আর সেই সিনেমা ‘গুরুদক্ষিণা’। শিক্ষকমশাইরাও তো আমাদের পিতা। ঠিক সেই স্নেহমাখা পরশ জড়িয়ে থাকত একটু পাগলাটে কালী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে বাদ দিয়ে যে গুরুর রোলে কালী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নেন অঞ্জন চৌধুরী। কারণ কালী বন্দ্যোপাধ্যায়কে মেক আপ দিতে হতনা। তিনি গুরু হয়েই এসেছিলেন।

এরপর পরের পর অঞ্জন চৌধুরীর সিনেমাতে বাবার রোলে অকৃত্রিম কালী বাবু ‘অভাগিনী’, ‘মহাজন’, ‘বিধিলিপি’, ‘মেজো বউ’। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় ‘ছোট বউ’-এর শ্বশুর কালী বন্দ্যোপাধ্যায়। যার প্রতিটা সংলাপ আইকনিক হিট। তখন বাজারে ‘ছোট বউ’-এর ডায়লগের ক্যাসেট হটকেক। যেন সিনেমার বিবেক তিনি। যৌথ পরিবারের সব চরিত্রগুলোর মাঝে বিবেক হয়ে দাঁড়াচ্ছেন অন্ধ শ্বশুর কালী। বিশেষ করে তার দজ্জাল স্ত্রীর বিরুদ্ধে অন্ধ কালীর ডায়লগগুলো যেন যোগ্য জবাব “আমার পা টিপে দিতে হবেনা ছোট বউ, বরং তোমার শাশুড়ির গালগুলো ভালো করে টিপে দাও। যাতে সকাল হলেই উনি আবার মুখ ঝামটা দিয়ে চেঁচাতে পারেন।”

সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়
পশ্চিমবঙ্গের বাংলা চলচ্চিত্রের অভিনেতা সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়। খুব রোগা জীর্ণ চেহারা, মাথায় টাক এবং দুটো অসহায় চোখ। এই হল তার ইমেজ। উৎপল দত্তের গ্রুপে নাটক করতেন। ইন্ডাস্ট্রিতে দুজন সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় থাকায় এনাকে ‘পিএলটি’ বলে চেনানো হত। আশির, নব্বইয়ের দশকে তিনি একচেটিয়া মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত বাবা। যিনি বারবার মেয়ের বিয়ে নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত বাবার চরিত্র করে গেছেন একের পর এক। প্রথমেই বলতে হয় মৃণাল সেনের ‘একদিন প্রতিদিন’। সংসারের একমাত্র রোজগেরে মেয়ে রাতে বাড়ি না ফেরায় বাবার চিন্তা, সেই অভিনয় তো আন্তর্জাতিক মঞ্চে আইকনিক হয়ে আছে।

হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়
ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনেতা হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়। বাবা কিংবা শ্বশুর মানেই যে সবসময় ভালো তা নয়। নেতিবাচক চরিত্র থাকে সংসারে। ঠিক যেমন ‘শ্বেত পাথরের থালা’-র অত্যাচারী শ্বশুর হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি ছেলের মৃত্যুর পর সদ্য বিধবা পুত্রবধূর থেকে ছেলের প্রভিডেন্ড ফান্ডের টাকাটাও ছিনিয়ে নেন। আবার যিনি বৌমা আর নাতিকে বলেও দেন ‘যেমনি মা তার তেমনি ছা’। বিধবা বৌমা বিধবা ব্রত পালন করছে না দোহাই দিয়ে বৌমার দায়িত্ব ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলেন তারা। অথচ এরাই এই পুত্রবধূকে একদিন পছন্দ করে ঘরে এনেছিলেন।

‘পূজা’ সিনেমাতেও জাঁদরেল শ্বশুর হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সোনার ভরির ওজনে ছেলের বৌ ঘরে তোলেন। তবে শেষজীবনে ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ সিরিয়াল বা ‘চাঁদের বাড়ি’, ‘ক্রান্তিকাল’ সিনেমাতে বৃদ্ধ দাদাশ্বশুরের স্নেহশীল অভিনয় দিয়ে হারাধন দর্শকের সব ঘৃণা পার করে ভালোবাসা আদায় করে গেছেন।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
পশ্চিমবঙ্গের বাংলা চলচ্চিত্রে কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। রাজা সেনের ‘আত্মীয় স্বজন’ সিনেমাতে একান্নবর্তী পরিবারের কর্তা বাবা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যে জীবনের প্রতি হতাশ। ছেলে-মেয়ে মানুষ করে তার উপলব্ধি সন্তানরা তাকে ব্যবহার করছেন নিজেদের সুখের জন্য। সংসারের প্রতি কোন টান নেই যে বাবার। তাই তিনি নিজের শ্রাদ্ধ নিজেই মৃত্যুর আগে করে যাচ্ছেন। এরপর সুইসাইড করে নিজে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছেন এবং স্ত্রীকেও একই কাজের শরীক করছেন।

অঞ্জন চৌধুরী গ্ল্যামরাস শ্বশুরের রোলেও দারুণ ব্যবহার করেছেন সৌমিত্রকে। যেমন ‘মেজো বৌ’-এর সেই বেড টি ইস্যু নিয়ে এক্স জজ সৌমিত্রর বিচারসভা। এছাড়াও ‘অভাগিনী’, ‘চৌধুরী পরিবার’ সহ বহু সিনেমাতে দাপুটে শ্বশুরের ইতিবাচক চরিত্রে অনবদ্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

নির্মল কুমার
ভারতীয় বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনেতা নির্মল কুমার। আশি, নব্বইয়ের দশক জুড়ে নির্মল কুমার স্ত্রৈণ নির্বিবাদী মামার চরিত্র করে এসেছেন। কখনও বা একই ধাতুতে গড়া বাবা। অনাথা ভাগ্নীর মামাই বাবার স্বরূপ। অথচ যে মামার দজ্জাল স্ত্রীর উপর কথা বলার ক্ষমতা বা সাহস কোনটাই নেই। বেশিরভাগ সিনেমাতেই তার স্ত্রী হতেন গীতা দে। মামার সংসারে বাপ-মা মরা অনাথা ভাগ্নীর উপর মামিমা গীতার অত্যাচার। নির্মল এমনই মামা যিনি স্ত্রীর আড়ালে ভাগ্নীকে সোহাগ দেন কিন্তু স্ত্রীর উপরে কথা বলার ক্ষমতা নেই।

এছাড়া এপার বাংলার সিনেমায় নায়করাজ রাজ্জাকের দুই ছেলে বাপ্পা রাজ ও সম্রাট সিনেমায় এসেছেন। সোহেল রানার ছেলে ইয়ুলও অভিনয় করছেন সিনেমায়। বাবা গোলাম মুস্তাফার পদাঙ্ক অনুসরণ করে অভিনয়ে এসেছেন সুবর্ণা মুস্তাফা। আবুল হায়াত এবং বিপাশা হায়াত দুইজনেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। বাবা আলী যাকেরের পথে অভিনয়ে এসেছেন ইরেশ যাকের। শহীদ বুদ্ধিজীবী ও চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হানের সন্তান অনল রায়হান, বিপুল রায়হান এবং তপু রায়হান চলচ্চিত্র জগতের সাথে যুক্ত। বিপুল ও অনল নাট্য নির্মাতা এবং তপু অভিনেতা। প্রখ্যাত অভিনেতা ও নির্মাতা আমজাদ হোসেনের ছেলে সোহেল আরমান অভিনেতা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা।

ওমর সানী-মৌসুমীর ছেলে ফারদীনও চিত্রপরিচালক হিসেবে সিনেমা জগতে আত্মপ্রকাশ করেছেন। ইনামুল হক ও লাকি ইনামের সন্তান হৃদি হক অভিনয় জগতে এসেছেন। রামেন্দু মজুমদার ও ফেরদৌসী মজুমদারের কন্যা ত্রপা মজুমদার অভিনেত্রী হিসেবে খ্যাত।

সারাদিন/১৮ জুন/এমবি