আত্মসাৎ করা ২৭ লাখ টাকা দিয়ে রেহাই পেলেন জমির উদ্দিন
রাষ্ট্রের ২৭ লাখ ৮৬ হাজার ৩৬৪ টাকা ফেরত দেওয়ায় সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকারকে পাঁচটি দুর্নীতি মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। এই টাকা তিনি স্পিকার থাকাকালে চিকিৎসার জন্য তুলেছিলেন।
আজ রোববার (৯জুলাই) জমির উদ্দিনের আইনজীবী ব্যাংকের পেমেন্ট স্লিপ জমা দিলে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক প্রদীপ কুমার রায় মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন।


সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১৪ মার্চ জমির উদ্দিন সরকার সোনালী ব্যাংক সুপ্রিম কোর্ট শাখায় টাকা জমা দেন। এরপর আদালত ৯ জুলাই আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন। আজ আদালত ভিন্ন ভিন্ন আদেশে পাঁচ মামলা থেকে অব্যাহতি দেন জমির উদ্দিন সরকারকে।
জমির উদ্দিন সরকারের আইনজীবী আব্দুল হান্নান জানান, ২৭ লাখ ৮৬ হাজার ৩৬৪ টাকা চালান রসিদের মাধ্যমে টাকা জমা দেওয়ার কারণে জমির উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে আর মামলা চলমান থাকল না। আদালত অব্যাহতি দিয়েছেন।
জমির উদ্দিন সরকার স্পিকার থাকা অবস্থায় ২০০৬ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালে হৃদ্রোগ চিকিৎসা করেন। চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে তিনি চিকিৎসার খরচ বাবদ ২৭ লাখ ৮৬ হাজার ৩৬৪ টাকার বরাদ্দের অনুমতি চেয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন না দিয়ে জাতীয় সংসদ সচিবালায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে স্পিকার নিজ ক্ষমতা বলে বিলটি পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেন।
তাঁর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়ে জাতীয় সংসদের তৎকালীন প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম বিল পরিশোধ করেন। এই দুজনে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওই টাকার বিল অনুমোদন ও উত্তোলন করে অবৈধভাবে লাভবান হয়ে অপরাধ করেছেন বলে দুদকের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান খান ও উপসহকারী পরিচালক এস এম খবীরউদ্দিন ২০১০ সালের ২৮ ডিসেম্বর শেরেবাংলা নগর থানায় পাঁচটি মামলা দায়ের করেন।
২০১২ সালের ৭ নভেম্বর পাঁচ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এই পাঁচ মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন জমির উদ্দিন সরকার। হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ পৃথক সিদ্ধান্ত দেওয়ায় পরে অন্য একটি বেঞ্চে প্রেরণ করা হয়। ওই বেঞ্চ জমির উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে মামলা চলবে বলে রায় দেন। তিনি ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে গত বছরের ২৫ আগস্ট আপিল বিভাগ পাঁচটি মামলায় বাতিল করেন। তবে জমির উদ্দিন সরকারকে তাঁর উত্তোলনকৃত টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন।
নির্দেশে বলা হয়, আপিল বিভাগের আদেশের কপি বিচারিক আদালতে পৌঁছানোর পর ছয় মাসের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে হবে। বিশেষ জজ আদালত-৭-এ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশ পৌঁছায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি। এরপর জমির উদ্দিন সরকার টাকা ফেরত দেন।
উল্লেখ্য, এসব মামলার অপর আসামি জাতীয় সংসদের তৎকালীন প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে।