বরিশালে নেই লার্ভা শনাক্তের মেশিন

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৭:৫৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ১১, ২০২৩

ছবি- সংগৃহীত

প্রতিদিনই দক্ষিণাঞ্চল তথা বরিশাল বিভাগের হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা। ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানানো পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যবস্থায় নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। তবে এরইমধ্যে বরিশালে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবং একজনের মৃত্যু অনেকটাই ভাবিয়ে তুলেছে।

তাই বর্তমানে প্লাটিলেট আলাদা করার কোনো ব্যবস্থা গোটা দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে না থাকায়, রোগীর অবস্থা সংকটের দিকে গেলেই ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ২০ হাজারের নিচে প্লাটিলেট নেমে গেলেই সেই রোগীকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকছে না স্বজনদের।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০২২ সালে প্লাটিলেট সেপারেটর মেশিন চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছিল, এবারও বিষয়টি জানানো হয়েছে, আশা করি দ্রুত মেশিনটি পাওয়া যাবে। তাতে পরবর্তীতে আর কোনো রোগীকে ঢাকায় পাঠাতে হবে না।

অপরদিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের পৌরসভাগুলোতে নেই ডেঙ্গুর লার্ভা শনাক্তের কোনো মেশিন। তাই মশক নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে লার্ভা ধ্বংসের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।

বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) এর পরিচ্ছন্নতা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, সাধারণ মশা নিধনে আমাদের বছর জুড়েই কর্মকাণ্ড থাকে। তবে গত এক মাস আগে মশক নিধনে আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। যার মাধ্যমে মশার বংশ বিস্তার রোধে বিভিন্ন স্থানে তরল ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া দেওয়া হচ্ছে।

মশার লার্ভা শনাক্তে বরিশালে কোনো ল্যাব নেই জানিয়ে রেজাউল করিম বলেন, এর বাইরে আমাদের একাধিক টিম ওয়ার্ডগুলোতে ঘুরে ঘুরে কাজ করছে। যেখানেই মশার লার্ভা দেখা যাচ্ছে, সেখানেই তরল ‍ওষুধের মাধ্যমে তা ধ্বংস করা হচ্ছে। তবে আমাদের ডেঙ্গুর লার্ভা শনাক্তের মেশিন নেই। তাই এডিস, অ্যানোফিলিস কিংবা অন্য যে কোনো মশাই হোক না কেন, আমাদের কর্মসূচির আওতায় সব মশার লার্ভাই ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।

Nagad

এডিসের লার্ভা শনাক্তে ছোট ল্যাব ও কিট দরকার জানিয়ে সিটি করপোরেশনের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. রবিউল ইসলাম বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশন বা অন্য কোনো পৌরসভায় এ ল্যাব বা কিট আছে বলে আমার জানা নেই।

এদিকে নিয়মিত স্প্রে ও ঝোপ-জঙ্গল, পরিত্যক্ত পানি ও জলাশয় পরিষ্কার করার মাধ্যমে মশার উপদ্রব কমানোর কাজ করে যাচ্ছে বাকেরগঞ্জ, বানারীপাড়া, উজিরপুর, গৌরনদী, পিরোজপুর, স্বরুপকাঠীসহ বিভাগের অন্যান্য পৌরসভাগুলো।

পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক জানান, সাধারণ মশার আর এডিস মশার লার্ভা শনাক্তে কোনো যন্ত্র নেই তাদের। তবে পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে নিয়মিত মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করছেন তারা।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. খন্দকার মনজুরুল ইমাম বলেন, গত দুই বছর বরিশালে ডেঙ্গুর তেমন প্রকোপ ছিল না। এজন্য আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর) থেকেও কোনো প্রতিনিধি এ বছর আসেনি। গত দুই বছর যারা এসেছেন তারা বরিশালে এডিসের লার্ভা পায়নি। এখন পর্যন্ত যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন তারা সবাই ‘ট্রাভেল পেশেন্ট’। আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকায়। ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন। সেখানে অন্যরাও সংক্রমিত হয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। তবে এবার আগেভাগেই হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। তাই জ্বর হলে প্রথমেই ডেঙ্গু পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা।

ঢাকা থেকে আসা বাস, লঞ্চসহ যানবাহনে এডিস মশার বিস্তৃতি ঘটতে পারে জানিয়ে ডা. শ্যামল কৃষ্ণ বলেন, ২০১৯ সালে প্রথম ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয় বরিশালে। তারপর থেকে প্রতিবছরই ডেঙ্গুরোগী পাওয়া যাচ্ছে। এবারেও ঈদুল আজহার পর ডেঙ্গুর ব্যাপক বিস্তৃতি দেখা দিয়েছে। আর এসব রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই ঢাকা থেকে আসার পরে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে বলেও তারা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সম্মিলিত উদ্যোগ ও সচেতনতা প্রয়োজন। বিশেষ করে এডিস মশার বিস্তার রোধ, লার্ভা ধ্বংস করতে হলে সবাইকে সচেতন হতেই হবে। যেমন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে যেন নতুন কোনো মশায় না কামড় দেয় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। কারণ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে যে মশা কামড়ে দেয়, সেটিও এডিসবাহী হয়ে বংশবিস্তার ঘটাতে পারে। এজন্য ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে মশারির মধ্যে রাখতে বলা হয়। এছাড়া জমে থাকা পানি অপসারণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সর্বক্ষেত্রে প্রয়োজন, যা নিশ্চিত হলে মশার বংশবিস্তার রোধ হবে এবং আমরাও সুস্থ থাকবো।

প্রসঙ্গত, বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে বরিশালে বিভাগের ছয় জেলায় এ পর্যন্ত সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে এক হাজার ৮৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৮৪৮ জন সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে বর্তমানে হাসপাতালে রয়েছেন ২৩৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। তথ্যসূত্র-বাংলানিউজ

সারাদিন/১১ জুলাই/এমবি