৩ বছরের কারাদণ্ডের পর ইমরান খান গ্রেপ্তার

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৪:২৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৫, ২০২৩

ছবি- সংগৃহীত

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। একই সাথে ইমরান খানকে ১ লাখ রুপি বা প্রায় ৪৫১ লার জরিমানারও আদেশ দিয়েছেন আদালত। এরপরই তাকে অতিসত্বর গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোরও আদেশ দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার সময় যেসব উপহার পেয়েছিলেন, সেগুলো বিক্রি করে পাওয়া অর্থ সম্পর্কে ঘোষণা না দেওয়ার কারণে ইসলামাবাদের একটি আদালত এই রায় দেয়। যদিও ইমরান খান এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ইমরান খানের আইনজীবী ইনতাযার হুসেইন বার্তা সংস্থা রয়টার্স-কে জানান, এই রায়ের কিছু পরই ইমরান খানকে লাহোরের জামান পার্ক এলাকার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে পাঞ্জাব পুলিশ ।

ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের এক টুইট বার্ত উদ্ধৃত করে ডন পত্রিকা জানায়, তাকে কোট লাখপাত কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এই রায় ঘোষণার সময় ইমরান খান আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তার আইনজীবীরা জানান, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।

তোশাখানা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল যে, রাষ্ট্রীয় পদে থাকার সময় পাওয়া উপহার বিক্রি করে তিনি যে লাভ করেছেন, সেই বিষয়ে তিনি বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি।

Nagad

বর্তমান ক্ষমতাসীনদলের আইনপ্রণেতারা গতবছর এই অভিযোগ তুলেছিলেন। যদিও মি. খান বরাবরই এসব অভিযোগ করে আসছেন।

সেনাবাহিনীর নির্বাচন ‘ভীতি’
একদিন আগে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিবিসি হার্ডটক অনুষ্ঠানে বলেছেন, চলতি বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচন নিয়ে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ‘প্রচণ্ড ভীত’ হয়ে পড়েছে।

ইমরান খান বলেন, পাকিস্তান ‘অঘোষিত সামরিক আইনে’ চলছে এবং অভিযোগ করেন যে ‘ফ্যাসিবাদীরা’ একে ‘অন্ধকার যুগের’ দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

২০১৮ সালে ইমরান খান নির্বাচিত হবার পর চার বছরেরও কম সময় ক্ষমতায় ছিলেন। সংসদীয় অনাস্থা ভোটে গত বছর তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই কেবল স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে।

হার্ডটক উপস্থাপক স্টিফেন স্যাকার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পর্ক শীতল হওয়ার পর থেকেই কি রাজনীতিতে ‘সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ’ নিয়ে তার সমালোচনা শুরু হয়েছে?

অভিযোগ অস্বীকার করে ইমরান খান বলেন, “তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পাকিস্তানের একমাত্র দল যেটি সামরিক একনায়কদের দ্বারা তৈরি হয়নি।” আর এ কারণেই দলটি ভেঙেগ দিতে তারা তৎপর হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

অনেক সমালোচকই মনে করেন, ইমরান খান ক্ষমতাসীন হবার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সমর্থন পেয়েছিলেন। তবে উভয় পক্ষই এই অভিযোগ অস্বীকার করে।

পাকিস্তানের রাজনীতিতে দেশটির সেনাবাহিনী সবসময় সামনে থেকে কিংবা পর্দার আড়ার থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে করেছে।

গত কয়েক মাসে ইমরান খানের দল পিটিআই ছেড়েছে অনেকে এবং অনেকে আটক হয়েছে। তবে ইমরান খানের দাবি তার দল অক্ষত রয়েছে। “রাষ্ট্রযন্ত্র প্রকাশ্যে আমাদের বিরুদ্ধে গেলেও, আমাদের ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করলেও, সরকার থেকে বেরিয়ে আসার পর উপ-নির্বাচনে কীভাবে আমরা ৩৭টির মধ্যে ৩০টিতে জয়লাভ করলাম?”

সেনাবাহিনীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনাকারীদের আশা ছিল তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের পর তার দল দুর্বল হয়ে যাবে। ইমরান খান বলেন, “সাধারণত কিছু সময়ের জন্য ক্ষমতার বাইরে থাকলে এটিই ঘটে। কিন্তু যা ঘটেছিল তারপর উল্টো দলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।”

“তারা সব ধরনের চেষ্টা করেছে। নারী ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীসহ তারা দশ হাজার মানুষকে জেলে ঢুকিয়েছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহ, সন্ত্রাসবাদ এবং হত্যায় মদদ দেওয়াসহ প্রায় ২০০টি অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে।

গত মে মাসে আদালতের ভেতর থেকে তাকে গ্রেপ্তারের ঘটনা দেশব্যাপী বিক্ষোভের জন্ম দেয়। এতে কোথাও কোথাও সহিংসতাও ছড়িয়ে পড়ে।

সহিংসতার মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর জন্য তিনি বৈরী পরিবেশ তৈরি করেছিলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ও রাজনীতিবিদ বলেন, তিনি এবং তার দল কখনও সহিংসতাকে সমর্থন করেননি এবং সবসময় শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করেছেন।

তিনি বলেন, সামরিক ভবনগুলোতে হামলার ঘটনার সাথে তাদের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। একইসঙ্গে এই মামলাগুলো আলাদাভাবে তদন্ত করা দরকার বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ইমরান খান জোর দিয়ে বলেন, পুলিশের পরিবর্তে তাকে গ্রেপ্তারে সেনা পাঠানোর মতো ঘটনাই বিশৃঙ্খলা উস্কে দিয়েছিল। “যখন সমর্থকরা দেখবে যে সেনাবাহিনী, একজন কমান্ডার আমাকে সেখান থেকে তুলে নিচ্ছে, তখন তারা কী করবে? সেখানে কি প্রতিবাদ হবে না?”

লাহোর থেকে বিবিসি’র সাথে কথা বলার সময় ইমরান খান বলেন, “সত্যি হল যে দেশ একটি বড় বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে। আমার মনে হচ্ছে আমরা অন্ধকার যুগের দিকে যাচ্ছি। “পাকিস্তানের একমাত্র সমাধান হল অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এটিই এই বিশৃঙ্গখলা থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায়।”

এ সময় তিনি প্রস্তাবিত নতুন আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন এই আইন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ব্যাপক পরিমাণে অগণতান্ত্রিক ক্ষমতা দেবে।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই ইমরান খান নতুন সরকারের একজন সোচ্চার সমালোচক হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্যবশত ফ্যাসিস্টরা দেশটা দখল করে নিয়েছে, একইসঙ্গে তারা নির্বাচনের ভয়ে ভীত। আমি ভুগছি কারণ তারা জানে যে নির্বাচনে আমরা জয়ী হব। আর এই কারণেই তারা গণতন্ত্রকে টুকরো টুকরো করে ফেলছে।” তথ্যসূত্র- বিবিসি

সারাদিন/০৫ আগস্ট/এমবি