‘সঠিক ইতিহাস জানতে দেওয়া হলে বিএনপি-জামায়াতের মিছিলে লোক যেত না’

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৮:৩৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৭, ২০২৩

দীর্ঘ ৩১ বছর বাঙ্গালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে দেওয়া হয়নি। সঠিক ইতিহাস জানলে বিএনপি-জামায়াতের মিছিলে লোক যেত না, জনসমাগম হতো না। সঠিক ইতিহাস জানতে দেওয়া হয়নি বলেই নতুন প্রজন্মের একাংশ আজ পথভ্রষ্ট, বিপথগামী হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু।

আজ বৃহস্পতিবার (১৭ অগাস্ট) বিকালে নগর ভবন প্রাঙ্গণে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে’ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ঢাদসিক) আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এ মন্তব্য করেন।

১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেন, “বঙ্গবন্ধু ১০ই জানুয়ারি দেশে ফিরে বলেছিলেন, রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমি অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে না পারি। অর্থনৈতিক মুক্তি দেওয়ার জন্য যখন তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তেই তাকে হত্যা করা হলো। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে দেওয়া হলো না। যদি মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানত, তাহলে বিএনপির মিছিলে লোক যেত না। ছাত্রদল কেউ করত না। যুবদল করার প্রশ্নই আসেনা। জামায়াতে ইসলামের আয়োজনে জনসমাগম হওয়ার কথা নয়। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলবে, সেই আয়োজনে জনসমাগম হবার কথা নয়। কিন্তু ২১ আর ১০ — ৩১ বছর একটানা পাকিস্তানের ২৩ বছরের যে ইতিহাস সেটা পড়ানো হয়েছে, তাতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে দেওয়া হয়নি, বুঝতে দেওয়া হয়নি। কিভাবে দেশটা স্বাধীনতা লাভ করলো, সেটা জানতে দেওয়া হয়নি। তাই আমাদের দেশে নতুন প্রজন্মের একাংশ পথভ্রষ্ট, বিপথগামী।”

বাঙালিকে স্বাধীনতা এনে দেওয়ার প্রতিহিংসায় সেদিন এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করা হয়েছিল উল্লেখ করে আমির হোসেন আমু বলেন, “স্বাধীনতাকে যারা সহ্য করতে পারেনি, সেই স্বাধীনতার যারা পরাজিত শক্তি — তারা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে একটি প্রতিবিপ্লব সংগঠিত করলো। বাংলাদেশকে স্বাধীন করার অপরাধে সেদিন জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্বংশ করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট কাল রাত্রিতে এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে পাকিস্থানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার চক্রান্ত পূর্ণতা পেয়েছিল।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য অ্যাড. কামরুল ইসলাম বলেন, “জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছেন। তার সন্তান তারেক রহমান আমার প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। আল্লাহর রহমতে পারে নাই।”

বঙ্গবন্ধু হত্যায় নেপথ্যের সকল কুশীলবদের বিচার দাবি করে অ্যাড. কামরুল ইসলাম বলেন, “যে কমিশন করা হবে সেই কমিশনের মাধ্যমে খুনি জিয়াউর রহমান, খুনি মোস্তাকসহ নেপথ্যে যারা জড়িত তাদের সকলের মুখোশ উন্মোচন করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে এবং যারা ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের মরণোত্তার বিচার সম্পূর্ণ করতে হবে।”

Nagad

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস খুনি জিয়াউর রহমান সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডে নেপথ্যের প্রধান কুশীলব বলে মন্তব্য করেছেন

ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, “জিয়াউর রহমানের সকল কর্মকাণ্ডই ছিল প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির পক্ষে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। স্বাধীনতা বিরোধী। তিনি রাজাকার, আল বাদর, আল শামসদের পুনর্বাসন করেছেন। তাদের গাড়িতে বাংলাদেশের রক্ত রঞ্জিত পতাকা উঠিয়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন। মন্ত্রী বানিয়েছেন। তিনি হত্যাকারী, খুনিদেরকে পুনর্বাসন করেছেন। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তাদেরকে পদোন্নতি দিয়েছেন, পদায়ন করেছেন, নিরাপত্তা দিয়েছেন। তিনি সংবিধান ভূলুণ্ঠিত করেছেন। সংবিধান কাঁটাছেড়া করেছেন। পঞ্চম সংশোধনী করে হত্যাকারীদের বিচারের আওতার বাহিরে রেখেছেন। এভাবে তিনি আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত করেছেন। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছেন, হত্যা করেছেন। তার সকল কর্মকাণ্ড ৪৮ বছর ধরে বিশ্লেষণ করলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, খুনি জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের নেপথ্যের প্রধান কুশীলব। নেপথ্যের প্রধান ষড়যন্ত্রকারী ও হত্যাকারী।”

খুনি জিয়া নিরপরাধ ও মুক্তিযোদ্ধা অনেক সেনা কর্মকর্তাকে ‘মার্শাল ল’ এর মাধ্যমে হত্যা করলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পুরষ্কৃত করেছিলেন মন্তব্য করে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “আমরা জানি, জিয়াউর রহমান মার্শাল ল আদালতে কত নিরীহ, নিষ্পাপ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে। সেই জিয়াউর রহমান মার্শাল ল এর মাধ্যমে বহু মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকদেরকে হত্যা করেছে। নিরীহ সেনা কর্মকর্তাদেরকে হত্যা করেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদেরকে মার্শাল ল’ এর আওতায় আনেন নাই। বরং খুনীদের বিভিন্নভাবে পুরষ্কৃত করা হয়েছিল।”

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, সংসদ সদস্যদের মধ্যে ঢাকা-৫ এর কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, সংরক্ষিত আসনের জিন্নাতুল বাকিয়া এবং করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।