ভূমি অপরাধ সহ তিনটি বিল সংসদে উত্থাপনে ভূমিমন্ত্রীর আশা প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক:নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৬:৫০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২, ২০২৩

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী আশা প্রকাশ করেছেন যে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩’ সহ মোট তিনটি ভূমি বিষয়ক আইনের খসড়া আগামী সোমবার(০৪ সেপ্টেম্বর) সংসদে বিল আকারে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা সম্ভব হবে। অপর দুটি আইনের খসড়া হচ্ছে, ‘ভূমি সংস্কার আইন, ২০২৩’ এবং ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন, ২০২৩’।

প্রসঙ্গত, আগামীকাল রবিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) তারিখ থেকে একাদশ জাতীয় সংসদের ২৪তম অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

আজ শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর উদ্যোগে রাজধানীতে অবস্থিত ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ এবং বাংলাদেশে টেকসই নগরায়ন’ শীর্ষক সেমিনারে (আলোচনা সভায়) প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এই আশা প্রকাশ করেন।

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এসময় আরও আশা প্রকাশ করেন যে, প্রযোজ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন সহ তিনটি বিলই আইন হিসেবে সংসদে পাস করা সম্ভব হবে।

ভূমিমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, সম্প্রতি শুরু হওয়া বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে সম্পন্ন হলে পূর্বের জরিপে হওয়া অনেক সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে। মন্ত্রী বলেন ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনার ফলে সীমা বহির্ভুত অতিরিক্ত জমির মালিক হওয়ার সুযোগ এখন আর নেই। তিনি এই সময় বলেন, আমরা চাই ঘরে বসেই মানুষ যেন ভূমিসেবা গ্রহণ করতে পারেন, একান্ত জরুরী প্রয়োজন ছাড়া যেন কারো ভূমি অফিসে না যেতে হয়। যত ‘হিউম্যান টু হিউম্যান কানেকশন’ কম হবে, সেবা গ্রহণ তত ভালো হবে বলে মন্ত্রী মনে করেন।

অনুষ্ঠানে আলোচকবৃন্দ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, পরিবেশ সংরক্ষণে, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি জমি সুরক্ষা, সারাদেশে সুবিন্যাস্ত নগরায়ন, রাজধানী ঢাকার উপর চাপ কমানোর কৌশল ও ক্ষেত্র সমূহ নিয়ে আলোচনা করেন।

Nagad

আলোচনায় উঠে আসা সরকারি পরিষেবা সংস্থাগুলিতে বেসরকারি অংশীজন থেকে প্রতিনিধি থাকার বিষয়ে ভূমিমন্ত্রী একমত পোষণ করে বলেন যে, এতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কাজের সুবিধা হতে পারে। আইনি দিক অনুসরণ পুর্বক করে প্রতিনিধির বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। মন্ত্রী আরও জানান তিন ফসলী কৃষি জমি সুরক্ষায় সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। এই সময় ভূমিমন্ত্রী গণমাধ্যম এবং সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠনকে দায়িত্বশীল ‘ওয়াচডগ’-এর (নজরদারির) ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

প্রসঙ্গত, কৃষিজমি সুরক্ষা, অকৃষি জমির সর্বোচ্চ সীমার বিধান, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাসের উদ্দেশ্যে করা ‘ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন, ২০২৩’-এর খসড়া চূড়ান্তকরণের কাজ করছে ভূমি মন্ত্রণালয়।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী মোঃ ওয়াসিম উদ্দিন এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ও স্থপতি ইকবাল হাবিব সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সেমিনারটি সভাপতিত্ব করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার।

সেমিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত স্থাপত্য অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, রিহ্যাবের সহসভাপতি প্রকৌশলী মুহাম্মদ সোহেল রানা, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন এবং নতুনধরা এসেটস্ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাদী-উজ-জামান।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, পেশাজীবি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

বিল আকারে সংসদে উত্থাপন হতে যাওয়া উল্লিখিত তিনটি ভূমি বিষয়ক খসড়া আইন:

ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩-এ প্রধান বৈশিষ্ট্যে হচ্ছে ভূমি সম্পর্কিত বেশকিছু অপরাধকে চিহ্নিত করে তা ফৌজদারী অপরাধের আওতায় নিয়ে আসা। সেসব অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে এই আইনে। এতে নাগরিকেরা নিজ-নিজ মালিকানাধীন ভূমির নিরবচ্ছিন্ন ভোগ-দখলের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করতে পারবেন। এই আইনে ভূমি বিষয়ক প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্রগুলো সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং একইসাথে প্রতিরোধ, দমন ও প্রয়োজনে প্রতিকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই আইন ভঙ্গ করলে জরিমানা ও কারাদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডের বিধান রাখা আছে।

ভূমি সংস্কার আইন, ২০২৩-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ব্যক্তি ক্ষেত্রে কৃষি জমি মালিকানার সর্বোচ্চ সীমা ৬০ বিঘার বিধান। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইনটিকে শিথিল করা হয়েছে। সমবায় সমিতির মাধ্যমে চা, কফি ও রাবার বাগান, শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম, রপ্তানীমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আইনটি শিথিল থাকবে। এই আইনে বাস্তুভিটার অধিকার, বর্গাচুক্তি ও উৎপন্ন ফসলের ন্যায্য ভাগের কথাও বলা হয়েছে।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন, ২০২৩ -এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কোনো ফসলি জমি থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ করার বিধান। এ ছাড়া নদীর নাব্য নষ্ট হতে পারে এমন স্থান থেকেও বালু উত্তোলন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের যন্ত্র জব্দ করা যাবে। বালু পরিবহনে রাস্তার কোনো ক্ষতি হলে ইজারাদার কর্তৃপক্ষকে রাস্তা আবার মেরামত করে দিতে হবে এই আইনের আওতায়।

সারাদিন. ২ সেপ্টেম্বর