সংসদে বিরোধী দলের ব্যাপক সমালোচনার মুখে বাণিজ্যমন্ত্রী

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৮:৪৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩

ফাইল ছবি

ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নিয়ে ফের সংসদে বিরোধী দলের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে ‘বাণিজ্য সংগঠন (সংশোধন) বিল’ পাসের জন্য তোলা হলে সেটা নিয়ে আলোচনার সময় বিরোধী দলের এমপিরা মন্ত্রীর সমালোচনা করেন।

বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের সমালোচনার জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে জিনিসপত্রের দাম ও সিন্ডিকেট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বলা হয়েছে আমি নিজে একজন সিন্ডিকেটের লিডার। আমি ব্যবসায়ী। দুর্ভাগ্য হচ্ছে এই সংসদে আমার অনেকবার বলতে হয়েছে যে, আমি ব্যবসায়ী হওয়ার অনেক আগে থেকেই রাজনীতি করি। আমি রাজনীতি শুরু করার ২০ বছর পরে ব্যবসা শুরু করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসা করাটা যদি অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে আমি সেই অপরাধে অপরাধী। হয়তো ব্যবসা না করলে এদিক-সেদিক থেকে চাঁদা নিয়ে আমাকে বাঁচতে হতো। আমি যে ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত তা দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। আমি বিদেশে রপ্তানি করি।’

বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নাম আসলে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যায়। দেশের মানুষ জানে— ঈদের আগে কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, আদার দাম কতগুণ বেড়েছিল। এটা বাড়ার কোনও কারণ ছিল না, এসব জিনিস রাশিয়া বা ইউক্রেন থেকে আসে না।’

দেশে আলু পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত থাকার পরেও দাম অনেকটা বেড়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কারণ একটাই— এখানে সিন্ডিকেট। তারা এইভাবে এক একটা জিনিসকে টার্গেট করে এবং মানুষের পকেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা কেটে নিয়ে যায়। বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ী মানুষ, তিনি ব্যবসাটা ভালোই বুঝেন। সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি বহুবার সিন্ডিকেটের কথা অস্বীকার করেছিলেন। মানুষ যখন বলতে শুরু করেছিল, বাণিজ্যমন্ত্রী সিন্ডিকেটের হোতা, তখন সত্য কথা বলতে শুরু করলেন তিনি (বাণিজ্যমন্ত্রী), সিন্ডিকেটে হাত দেওয়া যাবে না।’

মোকাব্বির খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য কাঁচা মরিচ শুকিয়ে রাখা, ডিম সিদ্ধ করে ফ্রিজে রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিচ্ছেন। এ পরামর্শগুলো আমরা আগে পেলে খুবই উপকৃত হতাম। কারণ চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে।’

Nagad

বৈশ্বিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি এবং কয়েকটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম কখনো কখনো বাড়ে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই কখনো হঠাৎ হঠাৎ করে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেন। ডিমের কথা যদি বলি এটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তৈরিও করে না, এর সঙ্গে সম্পৃক্তও না। এটি প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দেশের হাজার হাজার মানুষ মুরগি পালন করে, সেই মুরগি ডিম দেয়। পারিবারিকভাবে ছোট আকারে মুরগি পালন হয়। আবার কিছু বড় ব্যবসায়ীও আছেন। এই লাখ লাখ ডিম উৎপাদনকারীকে আমরা কন্ট্রোল করবো কীভাবে? মুক্তবাজার অর্থনীতি হচ্ছে বাস্তবতা।’

টিপু মুনশি বলেন, ‘আমরা ডিমের ব্যাপারে একটি দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি আজ। যদি সেই দামে না পাই তাহলে দু-একদিনের মধ্যে ডিম আমদানি করবো। আমরা ভোক্তাদের দিকে লক্ষ্য রাখবো।’

মন্ত্রী জানান, তাদের চেষ্টার ত্রুটি নেই। তিনি সংসদ সদস্যদের পরামর্শও নেবেন। কিন্তু যে চেষ্টা করছেন সেটার স্বীকার করে উৎসাহ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

পরে বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। নির্ধারিত সময়ে বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাচন করা না গেলে অতিরিক্ত ছয় মাস সময় পাওয়া যায়। বিলে সংশোধনী এনে এখন সেটি আরও ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে।