হোলি আর্টিসানে হামলার হাইকোর্টের রায় আজ
বিচারিক আদালতের রায়ের প্রায় চার বছর পর আজ সোমবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার রায় দেবেন হাইকোর্ট। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করবেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর হাইকোর্টের রায় আজ।
রায় ঘোষণার পর জানা যাবে কোন আসামির বিরুদ্ধে কী দণ্ড।
এর আগে রাজধানীর গুলশানের হোলি আর্টিসান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলা মামলায় সাতজনের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) এবং আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি শেষ হয়। পরে এ বিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য ৩০ অক্টোবর দিন ঠিক করেন হাইকোর্ট। তারই ধারাবাহিকতায় রায় ঘোষণার জন্য হাইকোর্ট বেঞ্চের সোমবারের কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) মামলাটি এক নম্বর ক্রমিকে রয়েছে।


চলতি বছরের জানুয়ারিতে মামলাটির শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ওঠে। এরপর গত ৩ মে থেকে শুনানি শুরু হয়। পরে গত ১১ অক্টোবর শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৩০ অক্টোবর দিন রাখা হয়েছিল।
আদালতে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আরিফুল ইসলাম ও আমিমুল এহসান।
এর আগে মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি। সে অনুযায়ী এটি কার্যতালিকায় আসে।
গতকাল রোববার অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, বিচারিক আদালত যে রায় দিয়েছেন, আশা করি সে রায় বহাল থাকবে।
কূটনৈতিক জোন হিসেবে পরিচিত গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে ২০১৬ সালের ১ জুলাই হামলা চালায় জঙ্গিরা। ওই হামলায় জঙ্গিরা হত্যা করে ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে। যাঁদের মধ্যে ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি, ১ জন ভারতীয় ও ৩ জন বাংলাদেশি। ওই ঘটনায় সন্ত্রাস দমন আইনে করা মামলায় ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই চার্জশিট দাখিলের পর ২৬ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিচারকাজ।
শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর আদালত হামলায় জড়িত থাকার দায়ে ৭ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—রাকিবুল ইসলাম রিগ্যান ওরফে রাফিউল ইসলাম, রাজীব গান্ধী ওরফে জাহাঙ্গীর আলম, মোহাম্মদ আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মোহাম্মদ হাদিসুর রহমান সাগর ওরফে সাগর, মামুনুর রশিদ রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী তা পাঠানো হয় হাইকোর্টে।
অন্যদিকে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ পান আসামিরা। সে অনুযায়ী এই মামলার নথি উচ্চ আদালতে আসে এবং আপিল করেন আসামিরাও। নথি এলে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক তৈরির জন্য বিজি প্রেসে পাঠানো হয়। পেপারবুক প্রস্তুত হয়ে বিজি প্রেস থেকে ফেরত এলে বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য পাঠান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
হাইকোর্টের রায়ের পর সংক্ষুব্ধ পক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। আপিল নিষ্পত্তির পর রিভিউ আবেদন করার সুযোগ পাবেন সংক্ষুব্ধরা। রিভিউতেও মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে আসামি চাইলে সবশেষ রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন না করলে বা সেই আবেদন নাকচ হলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারবে সরকার।
ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার দাস। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির মামলাটি তদন্ত করে ২০১৮ সালের ১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে।