রুপপুর পৌঁছেছে ইউরেনিয়ামের সপ্তম চালান

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৩০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১০, ২০২৩

সংগৃহীত ছবি

পাবনার ঈশ্বরদীর নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়ামের সপ্তম চালান রূপপুর পৌঁছেছে।

শুক্রবার (১০ নভেম্বর) কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া গোল চত্বর পার হয়ে ৭টা ৩০ মিনিটে রূপপুর প্রকল্পে পৌঁছায়।

বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার।

তিনি বলেন, ইউরেনিয়াম বহনকারী গাড়িকে ঘিরে মহাসড়কে কঠোর অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ে সড়ক পথে ইউরেনিয়াম রূপপুরে নিয়ে আসা হয়।

তিনি আরও বলেন, সড়কে যানজট এড়াতে শুক্রবার (১০ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে যান চলাচল বন্ধ ছিল। ইউরেনিয়াম বহনকারী গাড়ি প্রকল্প এলাকায় পৌঁছানোর পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) রাশিয়া থেকে সপ্তম চালানের ইউরেনিয়াম বিশেষ বিমানে ঢাকায় এসে পৌঁছায়। শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সপ্তম চালান রূপপুর প্রকল্পে পৌঁছায়।

Nagad

এছাড়া ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান রূপপুর প্রকল্পে পৌঁছায় ২৯ সেপ্টেম্বর, পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় চালান ৬ অক্টোবর, তৃতীয় চালান ১৩ অক্টোবর, চতুর্থ চালান ২০ অক্টোবর, পঞ্চম চালান ২৭ অক্টোবর, ষষ্ঠ চালান ৩ নভেম্বর রূপপুরে পৌঁছায়।

গত ৫ অক্টোবর ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জ্বালানি সনদ হস্তান্তর করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিটের প্রথম কংক্রিট ঢালাই উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর প্রথম এবং ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর এই কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লিপাত্র বা রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপনের কাজ গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

পাবনার ঈশ্বরদীতে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে প্রথম ইউনিটটি আগামী বছর চালুর কথা রয়েছে। রূপপুরে দুটি চুল্লিতে ৩২৬টি ফুয়েল অ্যাসেম্বলির মধ্যে ৮০ টন ইউরেনিয়াম জ্বালানি থাকবে। চুক্তি মোতাবেক প্রথম তিন বছরের এই জ্বালানি আসবে রাশিয়া থেকে। প্রতি ১৮ মাস পরপর এক-তৃতীয়াংশ ফুয়েল অ্যাসেম্বলি বদলানো হবে।

এদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সেবা গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে তৈরি হচ্ছে ছয়টি হাইভোল্টেজ সঞ্চালন লাইন। ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০০ কেভি ক্ষমতার ৬৪৮ সার্কিট কিলোমিটার আর ২৩০ কেভি ক্ষমতার ৪৪৬ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন তৈরি হচ্ছে।

এসব লাইনের ১৬ সার্কিট কিলোমিটার তৈরি হচ্ছে প্রমত্তা পদ্মা আর যমুনা পাড়ি দিয়ে। সঞ্চালন লাইন তৈরি করা সরকারি প্রতিষ্ঠান পিজিসিবির সূত্রমতে, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অবকাঠামোগত অগ্রগতি ছাড়িয়েছে ৮৬ শতাংশ।

উল্লেখ্য, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের সবচেয়ে আলোচিত ও বৃহৎ প্রকল্প। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে, সরকারের ব্যয় ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। আর রাশিয়া থেকে ঋণ সহায়তা হিসেবে আসছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করবে দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। আর ২০২৫ সালের মাঝামাঝি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিট চালু হতে পারে। দুটি ইউনিট চালু হলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। প্রথম ইউনিটের ভৌত এবং অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়ে গেছে ৯০ শতাংশের বেশি। আর দ্বিতীয় ইউনিটের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ।