দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম সার কারখানার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৩:০৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০২৩

দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ পরিবেশবান্ধব ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (১২ নভেম্বর) বেলা ১২টা ৪০ মিনিটে তিনি এই কারখানার উদ্বোধন করেন।উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী সার কারখানা স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করেন। এর আগে বেলা ১২টার কিছু আগে এখানে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে আমরা সরকারে আসতে পারিনি। আমরা ভোট বেশি পেয়েছিলাম, জনগণের সমর্থন আমাদের ছিল। নির্বাচনটা যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতো, তাহলে আওয়ামী লীগই সরকার গঠন করত। কিন্তু তখন আমি একটা বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হই। সেই বিষয়টি অনেকেই জানেন না। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমার কাছে বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রির একটি প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু আমি রাজি হইনি। আমি চেয়েছিলাম, আমার দেশের মানুষের জন্য এই গ্যাস ব্যবহার হবে। বিদ্যুৎপ্ল্যান্ট করব, সার কারখানা করব, দেশের মানুষের চাহিদা মেটাতে হবে এবং ৫০ বছরের রিজার্ভ রাখতে হবে। এরপর উদ্বৃত্ত যদি থাকে, সেটুকু আমরা বিক্রি করব, এর বাহিরে নয়।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশে দেশে এসেছিলেন। আমাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে সেই একই গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে যখন লতিফুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হন। তার বাড়িতে আমাদের দাওয়াত দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমি এবং দলের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান সাহেব গিয়েছিলাম। আর বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়া ও মান্নান ভূঁইয়া গিয়েছিলেন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার আসেন এবং আমাদের সেই একই প্রস্তাব দেন। সেখানেও আমি দেশের মানুষের জন্য গ্যাস রেখে উদ্বৃত্তটা বিক্রি করার কথা চিন্তা করব বলে জানিয়েছিলাম। কারণ দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে হবে- এমন দৈন্যতায় অন্তত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা ভোগে না। আমার কাছে ক্ষমতা বড় না। কিন্তু খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। আমার চোখের সামনেই জিমি কার্টার তার পিঠে হাত দিয়ে খুব বাহবাও দিয়েছিলেন। তখন আমি জিল্লুর রহমানকে বলেছিলাম, ‘চাচা এখন চলেন, আমরা বুঝতে পেরেছি কি হবে। কিন্তু আমি এটা কেয়ার করি না। আমার কাছে ক্ষমতা বড় না। আমার কাছে দেশের মানুষের স্বার্থ বড়।’

সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের নির্বাচনে (২০০১ সালের) হারানোর জন্য শুধু বিদেশিদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমার দেশেরও কিছু জ্ঞানী-গুণী মুরব্বী তারাও উঠে-পড়ে লাগলেন যে, কীভাবে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে হারানো যায়। আমাদের নেতাকর্মীরা কেউ ঘরে থাকতে পারেনি। তাদের উপর অকথ্য অত্যাচার শুরু হয়েছিল। সেইভাবে বলতে গেলে অনেকটা জোড় করেই আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসে কী করেছে? যেখানে আমরা আমাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছিলাম, বিনিয়োগ বাড়িয়েছিলাম। সেখানে তারা সেটিকে ধীরে ধীরে কমাতে শুরু করে।

উল্লেখ্য, নরসিংদীর পলাশে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ পরিবেশবান্ধব ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানায় এরই মধ্যে শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলক উৎপাদন। জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব এই কারখানায় বছরে ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে। দিনে উৎপাদন হবে ২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

Nagad

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৮ সালের অক্টোবরে কারখানার নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরু হলে প্রকল্পের অবকাঠামোর কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়। পরে একই বছরের ১৬ আগস্ট পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু হয়। যার দায়িত্ব পায় চীনের সিসি সেভেন এবং জাপানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মিৎসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এরপর ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

১১০ একর জমির ওপর নির্মিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার ৪ হাজার ৫৮০ কোটি ২১ লাখ টাকা আর জাপান ও চীনের ঠিকাদারদের যৌথ কনসোর্টিয়াম ব্যাংক অব টোকিও-মিৎসুবিশি ইউএফজে লিমিটেড ও দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন লিমিটেড ১০ হাজার ৯২০ কোটি টাকার ঋণ দেয়।