‘স্বাধীন শেরপুরের ঘোষণার মাধ্যমেই বাংলাদেশে স্বাধীনতা আসে’
৭ই ডিসেম্বর ১৯৭১ শেরপুর জেলার দ্বারোগালি পার্কে পাক বাহিনীর জেনারেল অরোরার কাছে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে শেরপুর জেলা পাকহানার মুক্ত হয়। এর আগে ৪ ডিসেম্বর ঝিনাইগাতী ৬ ডিসেম্বর শ্রীবরদী এবং ৭ই ডিসেম্বর শেরপুর মুক্ত হয়। বর্তমান নকলা উপজেলা ৯ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেরপুর জেলা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শেরপুর জেলাপাকহানার মুক্ত দিবস নিয়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনুষ্ঠানটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ক্যাফেটোরিয়াতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখাখে এসব কথা বলেন বক্তরা।


আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে সাবেক সচিব ও ঢাকাস্থ শেরপুর জেলা সমিতির সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, ৭ই ডিসেম্বর শেরপুরে জেনারেল অরোরার কাছে পাকহানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করার মাধ্যমে শেরপুর স্বাধীন হয়। আত্মসমর্পণ কালে জেনারেল অরুণা তার বক্তব্যে বলেন আর এক সপ্তাহের মধ্যে দেশ স্বাধীন হবে হবে বাংলাদেশ নামে আরেকটি স্বাধীন রাষ্ট্র। তাই শেরপুরেরের ঘোষণার মাধ্যমে মূলত স্বাধীন বাংলাদেশের আরেকটি ভিত্তি রচিত হয়। শেরপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শেরপুর জেলার পাশাপাশি সারা দেশবাসীরও জানা উচিত। এজন্য আগামীতে এনে এই প্রোগ্রাম আরো ব্যাপক পরিসরে করার অঙ্গীকার প্রদান করেন। নজরুল ইসলাম আরো বলেন, ধানুয়া কামালপুরের গোলার শব্দ এখনো কানে বেজে ওঠে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক অতিরিক্ত সচিব দিলদার আহমেদ বলেন, ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা শেরপুর শহরে প্রবেশ করতে থাকে যখন আমি কেবল ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। সেই মিছিল এবং আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আমিও উপস্থিত ছিলাম। এত সুশৃংখলভাবে আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠান আর দেশের কোথাও হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড টেরিফ কমিশনের সাবেক সদস্য এবং যুগ্ন সচিব আল বেরুনী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা শিশু মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য আদান-প্রদান এবং চিঠি দেওয়া নেওয়ার কাজে যুক্ত ছিলাম। আমরা মুক্তিযোদ্ধা সনদের স্বীকৃতি পাবার চেষ্টা করিনি। দেশ স্বাধীন হয়েছে এটাই আমাদের বড় গৌরবের বিষয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক পক্টর প্রফেসর ড. গোলাম রাব্বানী শেরপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিশদ বর্ণনা দেন। অরোরার কাছে আত্মসমর্পণের সময় তার পিতা উপস্থিত ছিলেন যে ছবি এখনো ইতিহাস হয়ে রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা এখনো তৈরি হয়নি। তিনি আরে বলেন শেরপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের এখন আসি ঠিক সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি যারা যুদ্ধের সময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। নালিতাবাড়ীর সোহাগ পল্লীর বিধবারা বীরঙ্গনা সম্মান পেয়েছেন এর জন্য সরকারের কাছে তিনি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি আরো বলেন শপথ অনুষ্ঠানে মাইকে ভেসে আসে তোমরা লোটেরারদের মালামাল জমা দাও। শেরপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি শহিদুল ইসলাম বলেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা এখনো শেরপুরে নেই। অনেক ভয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকা বদ্ধ হয়েছেন যা দুঃখজনক। সোহাগ পল্লীর বিধবাদের আরো অনেক কিছু করা দরকার।
সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানোর জন্য এ ধরনের অনুষ্ঠান অত্যন্ত জরুরী। আমরা আগামীতে এই ধরনের কর্মসূচি আরও ব্যাপকভাবে অনুষ্ঠিত করব। স্বাধীনতার বিকৃত ইতিহাস যাতে কেউ উপস্থাপন না করতে পারে এবং স্বাধীনতা যাতে বাণিজ্যে রূপান্তর না হয় তার জন্য মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সবার সামনে তুলে ধরা দরকার।
শেরপুরে এখনো অনেক মুক্তিযোদ্ধা তালিকা বদ্ধ হয়নি তাদেরকে মুক্তিদের মুক্তিযোদ্ধার সম্মান দিতে হবে। শেরপুর জেলা অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়েছে সেখানে শেরপুর জেলার সূর্য সন্তানদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে শেরপুর জেলার উন্নয়নে কাজ করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন গৌরব ৭১ এর সাধারণ সম্পাদক বিএফ শাহীন, নজরুল সেন্টার এর চেয়ারম্যান খান আতাউল্লাহ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মনিরুজ্জামান শাস্বত মনির। আরো উপস্থিত ছিলেন শেরপুর জেলার বিভিন্ন নাগরিকবৃন্দ।