প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দেড় হাজার কিডনি প্রতিস্থাপনের মাইলফলক

নিজস্ব প্রতিবেদক:নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ২:১৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দেড় হাজার কিডনি প্রতিস্থাপনের মাইলফলক স্পর্শ করলেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন অধ্যাপক কামরুল ইসলাম ও তার প্রতিষ্ঠান শ্যামলীর সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস (সিকেডি) অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতাল। তাঁর এই সফলতা পেতে এক হাজার কিডনি প্রতিস্থাপনে দীর্ঘ ১৪ বছর সময় লাগলেও শেষ ২৬ মাসে ৫০০ কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাত ১১টায় রাজধানীর শ্যামলী সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপনের মধ্য দিয়ে এই মাইলফলক অর্জন করেন তিনি।

অধ্যাপক ডা. কামরুল বলেন, আল্লাহর কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা যে- আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে ১৫০০ কিডনি প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করতে পেরেছি। এই অর্জন আমার জন্য খুবই সম্মানের এবং গৌরবের। স্রষ্টার কাছে এর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কখনো শেষ হবে না। দোয়া করবেন যেন আমৃত্যু এই কাজটি করে যেতে পারি।

বিগত ১৬ বছর ধরে কিডনি প্রতিস্থাপন করে আসছেন মানবিক এই চিকিৎসক। তার প্রতিস্থাপনের সফলতার পরিমাণ ৯৫ শতাংশের বেশি। একসময় সরকারি চাকরি করলেও চিকিৎসার দীর্ঘসূত্রিতা ও স্বাধীনভাবে রোগী সেবার সুযোগ না থাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি প্রতিস্থাপন শুরু করেন।

কামরুল ইসলাম বলেন, যখন আমরা কাজটা প্রথম শুরু করি, তখন আমাদের জন্য খুবই কঠিন ছিল। আমরা তখন নিশ্চিতও ছিলাম না আমাদের পরিকল্পনাগুলো আলোর মুখ দেখবে কি-না। তখন আমাদের একটা কিডনি প্রতিস্থাপন করতে খুবই ভয় হতো। আমরা দুশ্চিন্তায় ভুগতাম যে, আমাদের কাজটা সফল হয় কি-না, কোন ধরনের জটিলতা তৈরি হয় কি-না। যে কারণে প্রথম দিকে আমাদের প্রতিস্থাপনের সংখ্যা এত বেশি ছিল না।

তিনি আরও বলেন, প্রথম দিকে এক মাস-দুই মাসে একটা প্রতিস্থাপন করতাম, এমনকি সেই রোগীকে দীর্ঘদিন হাসপাতালে আমার ফলোআপে রাখতাম, যাতে সে পূর্ণ সুস্থ হয়। পরবর্তীতে যখন দেখলাম ভালোই হচ্ছে এবং কমপ্লিকেশনগুলো ওভারকাম করতে পারছি, তখন আমাদের প্রতিস্থাপনের সংখ্যা বাড়তে থাকলো। পরবর্তীতে প্রতি মাসে দুইটা, এরপর প্রতি সপ্তাহে একটা, এবং এক পর্যায়ে সপ্তাহে একাধিক কিডনি প্রতিস্থাপন করতে থাকলাম।

Nagad

জানা গেছে, কিডনি প্রতিস্থাপনে অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হলেও গত এক যুগ ধরে দুই লাখের আশপাশেই ছিল অধ্যাপক কামরুল ইসলামের প্রতিষ্ঠিত সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের কিডনি প্রতিস্থাপন ব্যয়। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে ১৫শ প্রতিস্থাপনের একটিতেও তিনি ব্যক্তিগত কোনো পারিশ্রমিক নেননি। এমনকি প্রতিস্থাপন পরবর্তী ফলোআপ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায়ও আমৃত্যু রোগীর কাছে নেন না কোনো ফি।এভাবে নিজ পেশার মাধ্যমে সমাজের নিম্নআয়ের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রতি মানবিকতা ও দায়িত্বশীলতার অনন্য নজির স্থাপন করে চলেছেন এই অধ্যাপক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর চেয়ে কম খরচে দেশের বেসরকারি কোনো হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়। পাশের দেশ ভারতেও কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য খরচ হয় ১৫ লাখ টাকার বেশি। এ ছাড়া সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে আনুষঙ্গিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচও তুলনামূলক কম।