দেশে ২৩ ভোটকেন্দ্রে আগুন: ৩০৩ অগ্নিকাণ্ড, পুড়ল ৩০২ যানবাহন

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৯:৩২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৬, ২০২৪

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে সহিংসতা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২৩টি ভোটকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি উচ্চ বিদ্যালয়। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার (৬ জানুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

এদিকে ২৮ অক্টোবর সহিংসতার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল অবরোধে সারাদেশে ৭১ দিনে ৩০৩টি অগ্নিকাণ্ডে ৩০২টি যানবাহন ও ২৩টি স্থাপনা পুড়ে যায়। এসব ঘটনায় ৮ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ১৩৭টি, সারাদেশে ১৬৬টি, ৪৩ জেলা ও ৯০টি উপজেলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে ঘটে বেশি গাজীপুর জেলা ও সদর উপজেলায়।

শনিবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম এসব তথ্য জানান।

জানা যায়- চট্টগ্রাম নগরে কাছাকাছি সময়ে ৩টি ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গাজীপুর মহানগর ও জেলার তিনটি স্কুলে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের ৩টি ও শিকারপুর ইউনিয়নে মুন্ডপাশা ১টিসহ চারটি ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ময়মনসিংহের নান্দাইল ও গফরগাঁও উপজেলার দুই ভোটকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার ভোর ৪টার দিকে গফরগাঁও ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে পরশীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সকাল ৯টার দিকে উপজেলার নান্দাইল সিংরইল ইউনিয়নের হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

শেরপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার সকালে সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের মির্জাপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বরগুনার আমতলী উপজেলার আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ২টি ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। কেন্দ্র ২টি হলো- বালিয়াতলী চরকগাছিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও মধ্য আরপাঙ্গাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার গড়াকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার ভোরে মধ্যনগর উপজেলার ২ নম্বর বংশীকুণ্ডা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সাবিয়া গ্রামের ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাত মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের সাবিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে কেরোসিন ঢেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। একই রাতে কমলগঞ্জের মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সরিষকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

Nagad

হবিগঞ্জ-৪ আসনের চুনারুঘাট উপজেলায় একটি ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুড়ে গেছে স্কুলের আসবাবপত্র। শুক্রবার রাতে চুনারুঘাট পৌর এলাকার ধলাইরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

পটুয়াখালী পৌর শহরের শেরেবাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে।

টাঙ্গাইল পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কান্দিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রের পরিত্যক্ত ভবনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার সকাল ৬টার দিকে দেওয়া আগুনে ভবনের একটি দরজা পুরোপুরি ও অপর একটি দরজার আংশিক পুড়ে গেছে। স্থানীয়রা আগুন নিভিয়ে ফেলায় তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

খুলনার ডুমুরিয়ায় ভোটকেন্দ্র ভেবে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষের দরজা পুড়ে গেছে। অন্যদিকে, খুলনার রূপসায়ও একটি ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম গণমাধ্যমকে জানান-তিনি জানান, গত বছরের ২৮ অক্টোবর থেকে চলিত বছরের ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত (মোট ৭১ দিনে) দুর্বৃত্তদের দ্বারা সারাদেশে মোট ৩০৩টি আগুনের সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। এ অগ্নিকাণ্ডে ৩০২টি যানবাহন ও ২৩টি স্থাপনা পুড়ে যায়। এ ঘটনায় সারাদেশে ৫ জন (ফায়ার সার্ভিসের ২ জন ও ৩ জন সাধারণ মানুষ) আহত ও ৮ জন নিহত হয়। এসব অগ্নিকাণ্ড নির্বাপণ করতে সারাদেশে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর ৫৩৯টি ইউনিট ও ২ হাজার ৯৫৯ জন জনবল কাজ করে।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, যানবাহনের মধ্যে মোট বাস ১৭৬টি, ট্রাক ৪৯টি, কাভার্ডভ্যান ২৫টি, মোটরসাইকেল ২১টি, পিকআপ ১০টি, ট্রেন ৫টি, সিএনজি ৩টি, প্রাইভেটকার ৩টি, মাইক্রোবাস ৩টি, লেগুনা ৩টি, নছিমন ১টি, ফায়ার সার্ভিসের পানিবাহী গাড়ি ১টি, পুলিশের গাড়ি ১টি, অ্যাম্বুলেন্স ১টি।

অপরদিকে ২৩টি স্থাপনার মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৯টি, বিএনপি অফিস ৫টি, আওয়ামী লীগ অফিস ১টি, পুলিশ বক্স ১টি, কাউন্সিলর অফিস ১টি, বৌদ্ধ মন্দির ১টি, বিদ্যুৎ অফিস ২টি, বাস কাউন্টার ১টি, শোরুম ২টি রয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৭১ দিনের মধ্যে ৪৭ দিন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এছাড়া বাকি ২৪ দিন কোনো অগ্নিকাণ্ড ঘটেনি।

এছাড়া দেশের ৪৩টি জেলায় আগুনের ঘটনা ঘটে ও বাকি ২১টি জেলায় কোনো অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ ফায়ার সার্ভিস পায়নি।