আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ব নির্বাচনকে বৈধতা দেয়নি, দাবি রিজভীর

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ২:৪৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশের অবৈধ, ডামি নির্বাচনকে বৈধতা দেয়নি। তারা তো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলেনি। রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক তো থাকতেই পারে।

‘রাশিয়ার সঙ্গে কী পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক নেই? চীনের সঙ্গে কী বাণিজ্যিক সম্পর্ক নেই?’ প্রশ্ন রেখে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আছে। গণতন্ত্রের প্রশ্নে আমেরিকা তাদের কমিটমেন্ট থেকে সরে আসেনি। বাংলাদেশ যে নির্বাচন পদ্ধতি, নির্বাচনী সহিংসতা সেটা নিয়ে তারা আগের অবস্থানে রয়েছে।

সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির এই নেতা।

এ সময় তিনি বলেন-দেশের মানুষের তিন বেলা খাওয়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছে সরকার। দেশের সমগ্র অর্থনীতিকে ভয়াবহ এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষ ফতুর হয়ে খেয়ে না–খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে।

রিজভী বলেন, গণতন্ত্রহীনতা, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, বিদেশে অর্থ পাচার, মূল্যস্ফীতি, নিম্নমুখী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, চলতি হিসাবের ঘাটতি, রাজস্ব ঘাটতি ও বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার নজিরবিহীন দরপতনে জনগণ আতঙ্কিত। বর্তমানে দেশের অর্থনীতির প্রতিটি প্রধান সূচকের অবস্থান এতটাই শোচনীয়, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে এক মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। দেশকে ঋণের ফাঁদে ডুবিয়ে দিয়েছে সরকার। অভ্যন্তরীণ ঋণ শোধ করতে ট্যাক্স–ভ্যাট–কর–খাজনার পরিধি–আওতা বাড়িয়ে জনগণের গলায় গামছা দিয়ে শ্বাস রোধ করার অবস্থায় নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশি–বিদেশি ঋণের পরিমাণ বাংলাদেশের দুটি অর্থবছরের বাজেটের বেশি। যে শিশু ভূমিষ্ঠ হচ্ছে আজ, তার মাথায়ও প্রায় লাখ টাকার বেশি ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে সরকার।

বিএনপির নেতা অভিযোগ করেন, ঋণের টাকায় কানাডার বেগমপাড়া, আমেরিকায় বিলাসবহুল বাড়ি–গাড়ি–ব্যবসা, দুবাই–সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগ, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমসহ তিন মহাদেশে সম্পদের পাহাড় গড়া হয়েছে। সুইস ব্যাংকে ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ কার কার নতুন অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হচ্ছে, সেটিও অজানা নয় অনেকের কাছে। আওয়ামী লুটেরাদের দেশে বহুতল বাড়ি, বিলাসী গাড়ি, ব্যবসা–বাণিজ্য, জীবনযাপনে জৌলুশ উপচে পড়ছে, আঙুল ফুলে বটগাছ হয়েছে।

Nagad

তিনি বলেন, গরিবের বাঁচা–মরার সঙ্গে জড়িত প্রতিটি জরুরি পণ্যের দাম উল্কার গতিতে বেড়েই চলেছে। সাধারণ মানুষের মাছ, মাংস, ডিম খাওয়া বন্ধ হয়েছে। নতুন করে গরিব হয়েছেন কয়েক কোটি মানুষ। অনাহার–অর্ধাহারের বৃত্তে আটকে আছে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। মানুষের সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে, এখন ঋণ করে খাচ্ছে। বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্র অকার্যকর হয়ে পড়েছে। লুটপাট আর দুঃশাসনের কারণে লাগামহীনভাবে বেড়েছে পণ্যের দাম। দেশে এখন সবচেয়ে নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি, আর সবচেয়ে মূল্যহীন গণতন্ত্রকামী জনগণের মতামত। গণতন্ত্রকামী জনগণের পেছনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি বিশেষ অংশকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। হামলা–মামলা, নির্যাতন–নিপীড়ন চালিয়ে, গুম–খুন–অপহরণ করে ভিন্ন দল ও মতের মানুষকে দমিয়ে রাখার অপচেষ্টার মাধ্যমে জনগণের সামনে ঝোলানো হয়েছে মৃত্যুর খাঁড়া।

তিনি বলেন, অনেক কর্তৃত্ববাদী দেশের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক রয়েছে। অর্থনীতি, বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে আরেকটি রাষ্ট্রের থাকে। তারা দেশের জনগণের সঙ্গে কাজ করার কথা বলেছে। আর দেশের জনগণ তো স্বাধীনতাকে জিম্মি করে নয়।

বাংলাদেশের ও মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে বাংলাদেশের সীমান্ত আজ অরক্ষিত।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, অধ্যাপক ডা. আবদুল কুদ্দুছ, শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, তারিকুল আলম তেনজিং, শাহ নেছারুল হক, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম প্রমুখ।