নানা সমস্যায় জর্জরিত বুড়িমারী স্থলবন্দর

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ৯:০৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ৪, ২০২৪

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে অবস্থিত স্থলবন্দরটি। আন্তর্জাতিক (চতুর্থ দেশীয়) বুড়িমারী স্থলবন্দর। বন্দরটি নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। ফলে আমদানি রপ্তানিকারকরা এই স্থলবন্দর দিয়ে ব্যবসা- বাণিজ্যের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এতে সরকারের শুল্ক দিন দিন কমে যাচ্ছে।

বন্দরের ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর স্থলবন্দর বুড়িমারী স্থলবন্দর। বন্দরটি চতুর্থ দেশীয় স্থলবন্দর। এই বন্দরের সাথে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপালসহ ৪টি দেশের বাণিজ্য। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ৬ ডিসেম্বর ভুটান বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই বন্ধুত্বের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ ভুটানকে শুল্কমুক্ত পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুবিধা দিয়ে থাকে। প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার পণ্য বোঝাই ট্রাক এই বন্দরে যাওয়া-আসা করে।

২০১০ সালের ৩০ মার্চ নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাহাজান খান এমপি বুড়িমারী স্থলবন্দরের কার্যক্রম ব্যাপক প্রসারের লক্ষ্যে বন্দর পরিদর্শন করেন। ফলে বন্দরের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি হয়। তবে বন্দরের কিছু সমস্যা সমাধানে প্রতিশ্রুতি দেন। দীর্ঘদিনেও সমস্যাগুলোর সমাধান হয়নি। বর্তমানে ব্যবসাবন্ধব সরকারের আমলে বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্দরের পরিধিও বৃদ্ধি পেয়ে ২৫ একরে উত্তীর্ণ হয়েছে।

বুড়িমারী স্থলবন্দরের সম্যাসাগুলোর মধ্যে ওয়্যার হাউজ নির্মাণ, বুড়িমারী স্থলবন্দর হতে ভারতের চ্যারাবান্ধা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রেললাইন সংস্কার ও পুনঃস্থাপন, পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা ফোর লেনে উন্নতিকরণ, যাত্রী পারাপারের সুবিধার্থে আন্তর্জাতিক মানের বাসটামিনাল নির্মাণ, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে জেনারেটর বা বিদ্যুৎ গ্রিড সাব স্টেশন নির্মাণ, বন্দরে ব্যাকিং সেবা দিতে বুথের ব্যবস্থাকরণ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

বুড়িমারী স্থলবন্দরে শ্রমিকদের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এই বন্দরে পাথর ভাঙার কাজ করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বুড়িমারী স্থলবন্দরে অবকাঠামোগত সুবিধার অযুহাত দেখিয়ে ইতোপূর্বে জাতীয় রাজস্ববোর্ড ১৮৩/২০০৭ স্মারকে এই বন্দর দিয়ে আমদানি যোগ্য ১৮টি পণ্য সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া পণ্যগুলো হচ্ছে ডুপ্লেক্স বোর্ড, নিউজ পেপার, সুতা, রেডিও পার্টস, টিভি পার্টস, সাইকেল পার্টস, মিক্সড ফেবিক্স, ফেবিক্স, ফরমিকা সিট, সিরামিক ওয়ার, স্যানেটারি ওয়ার, স্টেইনসেল শিট ওয়ার, মার্বেল পাথর, শুটকি মাছ প্রভৃতি।

বর্তমানে ব্যবসায়ীরা ১৮টি আমদানি পণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার দাবি করেছে। এখন বন্দরে শেড অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্ল্যান্ট কোয়ারেন টাইন, প্রাণিসম্পদ কোয়ার টাইনসহ ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। গত কিছুদিন আগে বুড়িমারী বন্দরের অবকাঠামো সুবিধা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধি দলসহ পরিদর্শন করেন।

Nagad

বুড়িমারী স্থলবন্দরের নানা সমস্যা নিয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর আমদানি রপ্তানিকারক নাহিদুল হক জয় বলেন, দ্রুত বন্দর সম্প্রসারণ করে ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত করার দাবি করেন তিনি।

সমিতির সভাপতি পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল জানান, বুড়িমারী স্থলবন্দরের সমস্যাগুলো চিহ্নিত হয়েছে। দ্রুত সমস্যাগুলোর সমাধান ও ১৮টি পণ্য আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে বুড়িমারী স্থলবন্দরের রাজস্ব আয় প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। বন্দরে শতশত লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই বন্দর ব্যবসা-বাণিজ্যের হারিয়ে যাওয়া গৌরব ফিরে আসবে।