টিআইবির প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: বিআরটিএ চেয়ারম্যান

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৪:৫৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ৬, ২০২৪

‘টিআইবির প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ উল্লেখ করে বাস–মিনিবাসের মালিকদের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে টাকা আদায়–সংক্রান্ত সংস্থাটির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে বিআরটিএ।

বুধবার (৬ মার্চ) সকালে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে টিআইবির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার।

বিআরটিএ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলেন তিনি বলেন, এমন রিপোর্ট কাল্পনিক, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে চেয়ারম্যান বলেন, আইনের কিছু দুর্বলতার কারনে যথাযথ প্রয়োগ সম্ভব হচ্ছে না। তাই আইনের সংশোধন প্রয়োজন।

বিআরটিএ’র সেবা পেতে ঘুষ ও হয়রানির পাশাপাশি অতিরিক্ত সময় ব্যয়ের তথ্যকেও অসত্য হিসেবে দাবি করেন তিনি। বলেন, এমন রিপোর্টে মুখ্য তথ্যদাতা হিসেবে বিআরটিএর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যা অসত্য। বিষয়টি প্রকাশের জন্য এ বিষয়ে বিআরটিএ’কে অবহিত করা হয়নি বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

গতকাল মঙ্গলবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ‘ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবসায় শুদ্ধাচার’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গবেষণায় এসেছে, বাস-মিনিবাসের মালিকের কাছ থেকে বিআরটিএর কর্মকর্তা–কর্মচারীরা বছরে ৯০০ কোটি টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে আদায় করেন। সব মিলিয়ে বাস–মিনিবাসের মালিকেরা চাঁদা ও ঘুষ হিসেবে বিভিন্ন পক্ষকে বছরে প্রায় ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা দেয় বলে গবেষণায় উঠে আসে।

এ প্রতিবেদনের বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরতেই আজ সংবাদ সম্মেলন ডাকে পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ। সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির চেয়ারম্যান বলেন, বিআরটিএ কিংবা মন্ত্রণালয়ে কোনো মৌখিক, লিখিত অভিযোগসহ কোনো তথ্য না থাকা সত্ত্বেও টিআইবি কর্তৃক অসত্য প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। বিআরটিএর সেবাগুলো ডিজিটাল হয়ে যাওয়ায় সশরীর অফিসে যেতে হয় না। ফলে ঘুষ–দুর্নীতিও হয় না।

Nagad

টিআইবির প্রতিবেদন বিআরটিএসহ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে বলে মন্তব্য করেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের অনুমাননির্ভর তথ্য, যা জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টিসহ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে, তার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন প্রকাশে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। তবে টিআইবি যে গঠনমূলক ও বাস্তবধর্মী সুপারিশগুলো করেছে, তা আমলে নিয়ে কাজ করা হবে।

‘একদিনেই মিলছে ড্রাইভিং লাইসেন্স’

ড্রাইভিং লাইসেন্স এখন একদিনেই পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, গ্রাহক যেদিন গাড়ি চালানোর পরীক্ষায় পাস করেন, সেদিনই অনলাইনে ফি জমার মাধ্যমে ই-লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। সেটিই ড্রাইভিং লাইসেন্স।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, ই-লাইসেন্সটাই এখন ড্রাইভিং লাইসেন্স। হার্ড কপি পেতে ১৫/২০ দিন বা তারও বেশি সময় লাগলেও, গ্রাহক তার অনলাইনে প্রাপ্ত ই-লাইসেন্স দেখিয়ে রাস্তায় চলাচল করতে পারবেন।

নূর মোহাম্মদ বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তি নিয়ে হয়রানির কোনো সুযোগ নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশে এরচেয়ে আর কী সুবিধা দেওয়া সম্ভব। আমরা ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ড যেন ভবিষ্যতে না লাগে, সেই ব্যবস্থাও নিচ্ছি। যাতে গ্রাহকরা অনলাইনেই তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখিয়ে চলাচল করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা দেশের বাহিরেও স্মার্ট কার্ড যেন না নেয়া লাগে, সেই লক্ষ্যেও কাজ করছি। যাতে করে গ্রাহকরা তাদের অনলাইনে প্রাপ্ত লাইসেন্স দিয়েই কাজ করতে পারেন।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স এখন একদিনেই পাওয়া যায়। গ্রাহক যেদিন গাড়ি চালানোর পরীক্ষায় পাস করেন, সেদিনই অনলাইনে ফি জমার মাধ্যমে একটি ই-লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। সেটিই ড্রাইভিং লাইসেন্স।হার্ড কপি দেখাতে হবে না। অনলাইন কপিই মোবাইলে সংরক্ষণ করে দেখালেই, তা গ্রহণযোগ্য হবে।

এর আগে গতকাল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পরিবহন খাতের ঘুষের টাকা দিনশেষে বিভিন্ন মহলে ভাগাভাগি হচ্ছে। তাই কাঙ্ক্ষিত যাত্রী সেবা মিলছে না।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গণপরিবহনে ৩৫ শতাংশের বেশি নারী যৌন হেনস্তার শিকার হন। এই সেক্টরের নেতারা ক্ষমতাসীন দলের সাথে যোগসাজশে চলে। তাই প্রত্যাশিত মানের সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।

ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও বিআরটিএ সবার সমন্বয়ে দুর্নীতি চলছে বলেও অভিযোগ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো ও যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে ১৫ দফা সুপারিশও দেয় টিআইবি।