এই গরমে ফুটপাতের শরবত খেলে ডায়রিয়াসহ নানা রোগের ঝুঁকি!

নিজস্ব প্রতিবেদক:নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ১২:৫০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৩, ২০২৪

দেশজুড়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ। রাজধানী সহ দেশের মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। কাজের প্রয়োজনে বাইরে গিয়ে কিংবা ঘরে থেকেও গরমে স্বস্তিতে নেই মানুষ। গরম থেকে আরামের জন্য মানুষ রাস্তাঘাটে বরফ দেওয়া শরবত খাচ্ছেন। বাইরের খোলা ফলমূলও খাচ্ছেন কেউ কেউ। এসব শরবত, লেবু পানি নিয়মিত খেলে হতে পারে বিপদ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়- সাধারণ মানুষ একটু স্বস্তি পেতে খাচ্ছেন ফুটপাতের শরবত। রাজধানীসহ সব বিভাগেই নগরীর প্রতিটি মোড়ে, ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে এসব শরবতসহ নানা পানীয়। তবে এই শরবতে হতে পারে ডায়রিয়াসহ পানি বাহিত নানা রোগ।

এ বিষয়ে-স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক-ফুটপাতে বিক্রি হওয়া খোলা শরবত কিছুতেই খাওয়া যাবে না। এসব শরবত খেলে ডায়রিয়াসহ নানা রোগের ঝুঁকি আছে।

রাজধানী রামপুরা, শাহজাদপুর, গুলিস্তানসহ এসব এলাকায় ভাসমান দোকানগুলোতে বিভিন্ন শরবত বিক্রি হচ্ছে। এখানে লেবুর শরবত, ইসবগুলের ভুসি, অরেঞ্জ পাউডার, অ্যালোভেরা শরবত ও আখের রস বিক্রি হচ্ছে। এসব শরবতের বেশিরভাগ ক্রেতাই রিকশাচালক, দিনমজুর, চালক, হেলপার ও পথচারীরা। অনেক ক্ষেত্রে সচেতন মানুষকেও খেতে দেখা গেছে।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানী মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআরবি) গিয়ে দেখা যায়, বাইরে প্রচুর রোগীদের ভিড়। একজন রোগীর সঙ্গে একজনের বেশি স্বজন ঢুকতে দিচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জরুরি বিভাগে রোগীদের প্রাথমিকভাবে ডায়রিয়ার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এরপর তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে, তাদের অবস্থা বিবেচনা করে স্যালাইন দেওয়া কিংবা ভর্তি করানো হচ্ছে।

Nagad

এ বিষয়ে আইসিসিডিআরবির গ্যাস্ট্রো অ্যান্ট্রোলজিস্ট ডা. নিগার সুলতানা গণমাধ্যমকে বলেন, স্বাভাবিক নিয়মে মে-জুন ও নভেম্বর-ডিসেম্বরে দেশে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বাড়ে। ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে সব বয়সের মানুষই ভর্তি হচ্ছে। তবে এ সময়ে শিশু ও বয়স্কদের ডায়রিয়া বেশি হচ্ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। এই গরমে মানুষ বাইরের খোলা শরবত খাচ্ছে। সেখানে যে বরফ থাকে, তাতে প্রচুর জীবাণু থাকতে পারে।

তিনি বলেন, বাইরে থেকে এসে কিংবা পায়খানা করে সঠিকভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছে না। গরমে মানুষের প্রচুর পরিমাণে ঘাম হচ্ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত পানি পান করছে না। প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। তাই সাধারণ মানুষকে মাথায় কাপড় বা টুপি দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। যাদের প্রয়োজন নেই, তাদের ঘর থেকে বের হওয়া উচিত নয়। এছাড়া যারা শ্রমজীবী তাদেরও এক টানা বেশিক্ষণ কাজে থাকা উচিত নয়।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, সড়কে-ফুটপাতে বিক্রি হওয়া শরবত কিছুতেই খাওয়া যাবে না। প্রথমতো এগুলো কতখানি স্বাস্থ্যসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি শরবত খেলে ডায়রিয়াসহ নানা রোগ হবে। এ ছাড়া এসব শরবত বরফ দিয়ে অতি ঠাণ্ডা করে রাখা হয়। তীব্র গরমে এসব ঠাণ্ডা শরবত খেলে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ নানা রোগ সৃষ্টি হবে।

ডায়রিয়ার সঙ্গে শিশুদের অন্য শারীরিক সমস্যা থাকলে কী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার জানতে চাইলে এই আইসিসিডিআরবির গ্যাস্ট্রো অ্যান্ট্রোলজিস্ট ডা. নিগার সুলতানা আরও বলেন, ডায়রিয়ার সঙ্গে অনেকের নিউমোনিয়া, কিডনি বা হার্টের সমস্যা থাকতে পারে। আমরা ডায়রিয়া পরীক্ষা করার পর তাদের সরকারি হাসপাতালগুলোতে রেফার করি, যাতে তাদের চিকিৎসায় কোনো ঘাটতি না হয়।