বিশ্ব মা দিবস আজ

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ, মে ১২, ২০২৪

মাতৃত্ব অনন্য এক সত্তা। তাই তো আনুষ্ঠানিকভাবে মাতৃত্বের স্বীকৃতি দিতে চিরকালই অনুভব করেছে সমাজ। ফলে কালক্রমে একটি বিশেষ দিনে, একটু আয়োজন করে মাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানায় মানুষ। মা-ছোট্ট এ শব্দের অতলে লুকানো থাকে গভীর স্নেহ, মমতা আর পৃথিবীর সবচেয়ে অকৃত্রিম ভালোবাসা। শৈশব থেকে আনন্দ-বেদনা-ভয় কিংবা উদ্দীপনা- প্রতিটি মানবিক অনুভূতিতে জড়িয়ে থাকে মায়ের নাম। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের সবশেষ আশ্রয়স্থল মা নামের ওই মমতাময়ী নারীর আঁচল। সেই মা-কে একটু আয়োজন করে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানায় মানুষ। সেই দিবসটিই হচ্ছে মা দিবস।

আসলে মাকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাতে কোনো দিনক্ষণের প্রয়োজন হয় না। প্রতিটি মায়েরই সন্তানের ভালোবাসা প্রাপ্য প্রতিদিনই। তবুও দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করে যে মা সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখান, নিজের সব স্বাদ-আহ্লাদ সন্তানের নামে করে দেন যে মা, তার সম্মানে আলাদা করে একটু ভালোবাসা জানাতেই আজকের দিনটি।

প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার বিশ্বব্যাপী মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করতে দিবসটি উদযাপন করা হয়। পৃথিবীর অন্য সব দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে।

প্রাচীন মিসর, চীন ও ভারতেও সমবেত হয়ে মাতৃমূর্তির প্রতি সম্মান জানানোর ইতিহাস রয়েছে। পরবর্তী সময়ে ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে মা ও মাতৃত্বকে সম্মান জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রবিবারকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। ষোড়শ শতকে এটি ইংল্যান্ডে মাদারিং সানডে বলে পরিচিতি পায়। তবে আনুষ্ঠানিকতা পায় যুক্তরাষ্ট্রে। ইতিহাসবিদদের মতে, ১৮৭০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জুলিয়া ওয়ার্ড হোই রচিত ‘মাদার্স ডে প্রক্লামেশন’ বা

‘মা দিবসের ঘোষণাপত্র’ মা দিবস পালনের গোড়ার দিকের প্রচেষ্টাগুলোর মধ্যে অন্যতম। মার্কিন সমাজকর্মী আনা রিভিজ জার্ভিস গৃহযুদ্ধের পৈচাশিকতা বন্ধ করে শান্তির প্রত্যাশায় একটি ঘোষণাপত্র লেখেন। তার মৃত্যুর পর তার মেয়ে আনা মেরি জার্ভিস মায়ের সম্মানে সরকারিভাবে মা দিবস পালনের প্রচারণা চালান।

এর তিন বছর পর ১০ মে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার আন্দ্রেউজ মেথডিস্ট এপিসকোপাল চার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম মা দিবস পালন করা হয়। ১৯১২ সালে আনা মেরি স্থাপন করেন মাদার্স ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন। এ সময় দিবসটিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে ব্যাপক প্রচার চালানো হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯১৪ সালে তৎকালীন প্রেডিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস ও জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন।

Nagad

এরপর থেকে সারাবিশ্বে দিবসটি উদযাপন করা হয়ে আসছে। যদিও কেউ কেউ কটাক্ষ করে বলেন, মাকে ভালোবাসতে কোনো দিনক্ষণের প্রয়োজন নেই। প্রতিদিন প্রতিক্ষণই মাকে ভালোবাসা জানানো যায়। আবার উল্টো মতোও আছে, কর্মব্যস্ততায় আমরা অনেকে মাকে সময় দিতে পারি না। আবার অনভ্যাসে হয়তো মুখ ফুটে মাকে ভালোবাসার কথা বলাও হয় না। এই একটি দিনে না হয় আমরা একটা উপহার মায়ের হাতে তুলে দিয়ে বলতে পারি, মা তোমাকে ভালোবাসি!

পৃথিবীর সকল যুগের সকল ধর্মে মা সম্মান রাখা হয়েছে সবচেয়ে উঁচুতে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভধারণ করে। তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার শোকরিয়া ও তোমার মা-বাবার শোকরিয়া আদায় করো।’ (সুরা লোকমান, আয়াত: ১৪)।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষায় ‘মা’ ডাকের শব্দগুলোর মধ্যেও আছে উচ্চারণগত অদ্ভূত এক মিল। সবগুলো শব্দের শুরুই ‘এম’ অথবা ‘ম’বর্ণটি দিয়ে। জার্মান ভাষায় ‘মাট্টার’, ওলন্দাজ ভাষায় ‘ময়েদার’, ইতালিয়ান ভাষায় ‘মাদর’, চীনা ভাষায় ‘মামা’, প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় ‘মাত’, সোয়াহিলি ভাষায় ‘মামা’ এবং আফ্রিকান, হিন্দি ও বাংলা ভাষায় ‘মা’।

কীভাবে এই সাদৃশ্য ঘটল তা আজও এক বিরাট রহস্য।

বিশ্বের অন্য সব দেশের মতো এবার রোববার (১২ মে) আমাদের দেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে বিশ্ব মা দিবস। সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকেও বিশ্ব মা দিবস ২০২৪ উদযাপন করতে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

এতে জেলা পর্যায়ে উপপরিচালকদের জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, আবাসিক বা অনাবাসিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং ডে-কেয়ার কর্মকর্তাদেরও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে দিবসটি উদযাপন করতে কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া দিবসটি উদযাপন করতে জেলা, উপজেলা, আবাসিক ও অনাবাসিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ডে-কেয়ার সেন্টারে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে বাজেট পাঠানো হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।