স্বস্তি ফিরছে জনমনে, রাস্তায় চলছে গণপরিবহন, আছে ভোগান্তি

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১:৪৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৪, ২০২৪

ছবি: শাহজালাল রোহান

ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ খুলেছে সব ধরনের অফিস। রাস্তায় চলছে গণপরিবহন। সব মিলিয়ে এতদিনের ভোগান্তি শেষে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে জনমনে। নির্ভয়ে ঘর থেকে বের হয়ে অফিসে যাচ্ছেন নগরবাসী। দোকানপাট খোলা থাকাা-কিনে নিচ্ছেন প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র। গত কয়েকদিনের বন্দিদশা থেকে বের হয়ে কাজে যোগ দিতে পারায় জনমনে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। তবে-কর্মস্থলে যেতে পরিবহণের কিছুটা সংকট থাকায়-ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

সাধারণ মানুষ বলছে, আন্দোলনের মধ্যে গত কয়েকদিন রাজধানীতে যে দৃশ্য সৃষ্টি হয়েছিল তা ছিল ভয়ঙ্কর। মানুষ ঘর থেকে রাস্তায় বের হতে ভয় পাচ্ছিল। দুষ্কৃতিকারীরা যেভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে, তা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। সরকার পরিস্থিতি বিবেচনায় কারফিউ জারি করার মাধ্যমে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

বুধবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, নতুনবাজার, নদ্দা, বসুন্ধরা ও গুলশান এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এ ছাড়া সকাল থেকেই রাজধানীর মিরপুর, আগারগাঁও, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, শাহবাগ, পল্টন ও উত্তরা এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের খবর পাওয়া গেছে। তবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা অনেকটাই কম।

মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলসহ উত্তরবঙ্গগামী রুটের দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হয়েছে। অন্য টার্মিনালগুলো থেকেও দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে বাস।

এদিকে অফিসগামী মানুষ হাতে একটু সময় নিয়েই আজ রাস্তায় বের হচ্ছেন। রাস্তায় গণপরিবহন ও মানুষের চলাচল বাড়ায় সবার মধ্যেই স্বস্তি বিরাজ করছে।

রাজধানীর শনির আখড়া থেকে অফিসের উদ্দেশে মঞ্জিল পরিবহনে ওঠেন আয়মান আদিব। তিনি বলেন, অফিস তো ১১টায় শুরু। ভাবলাম রাস্তায় বাস পাব কি না, সেজন্য দুই ঘণ্টা আগেই বাসা থেকে বেরিয়েছি। রাস্তায় আসতেই বাস পেয়ে গেছি। কিছুটা ভয় কাজ করলেও গণপরিবহন চলায় খুশি তিনি।

Nagad

এদিকে এর আগে শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের মধ্যে গত বুধবার দুর্বৃত্তদের তাণ্ডবে রাজধানীজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়। রাতে দুষ্কৃতিকারীরা হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজা পুড়িয়ে দেয়। রাতভর যাত্রাবাড়ী এলাকায় চলে সংঘর্ষ। বৃহস্পতিবারও টোলপ্লাজায় আগুন দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে চালানো হয় তাণ্ডব। আগুন দেওয়া হয় একাধিক পুলিশ বক্সে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে একপর্যায়ে কারফিউ জারি করে সরকার। সেই সঙ্গে নামানো হয় সেনাবাহিনী। এতে অনেকটাই ঘরবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে খুব একটা বের হননি। তবে সেনাবাহিনী রাস্তায় নামার পর অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। ফলে শিথিল করা হয়েছে কারফিউ।

তিন কার্যদিবস অফিস বন্ধ থাকার পর বুধবার আবারও খুলেছে অফিস। ব্যাংকে চলছে লেনদেন। শেয়ারবাজারেও লেনদেন শুরু হয়েছে। খুলেছে বিমার অফিস। সচিবালয়েও চলছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। রাস্তায় গণপরিবহনও চলাচল করছে। গণপরিবহনের চাপে কোথাও কোথাও যানজটও সৃষ্টি হচ্ছে।

এদিকে কারফিউ জারি হওয়ায় গত রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। ফলে টানা তিন কার্যদিবস অফিস বন্ধ থাকে। কারফিউ শিথিল করে বুধবার (২৪ জুলাই) থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিস সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হয়েছে। আজ ও আগামীকাল (২৫ জুলাই) সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিসের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত।

জরুরি পরিষেবা যেমন বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস ও বন্দরগুলোর কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ডাকসেবা এবং এ-সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা এ সময়সূচির আওতার বাইরে থাকবেন। এ ছাড়া হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এ সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মী, চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মী, ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম বহনকারী যানবাহন ও কর্মীরাও এ সময়সূচির আওতার বাইরে থাকবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা অনুযায়ী, যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সব ব্যাংকের কিছু শাখা বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে ও সীমিত আকারে সেবা দেবে। বুধ ও বৃহস্পতিবারের জন্য এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোন কোন শাখা খোলা থাকবে তা নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলো নিজেরাই।

ব্যাংক খোলা থাকায় শেয়ারবাজারেও লেনদেন চালু করা হয়েছে। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শেয়ারবাজারে লেনদেন চলবে। অর্থাৎ শেয়ারবাজারে লেনদেন হবে ৩ ঘণ্টা।