ফাস্টফুডে খরচ করলেও বাঙালি পিঠা কিনতে আমরা ব্যয় করি না: ড. মাসউদ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মাসউদ ইমরান মান্নু বলেছেন, আমাদের বাঙালি আদি সংস্কৃতির সাথে বহু নতুন জিনিস ধারণ করেছি। আমরা ফাস্টফুড খেতে হাজার টাকা খরচ করি কিন্তু বাঙালি পিঠা কিনতে দুইশো টাকা খরচ করতে পারি না।
তিনি বলেন-আমরা আমাদের সন্তানদের শেকড়ের সংস্কৃতির থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছি। গরীবের পান্তা ভাত কে আমরা গরম ভাতে পানি দিয়ে খাওয়ার সংস্কৃতিতে পরিণত করেছি। বৈশাখ ছিলো আমাদের ব্যবসায়ীদের উৎসব। নবান্নই আমাদের মূল উৎসব। আমাদের বাঙালির আদি সংস্কৃতিকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে। পহেলা নববর্ষ হিসেবে পহেলা অগ্রহায়নকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
শনিবার (২ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে ‘পহেলা অগ্রহায়ণ বাংলার আদি নববর্ষের খোঁজ’ শিরোনামে আয়োজিত সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারটি আয়োজন করে বিপ্লবী সাংস্কৃতিক ঐক্য। এতে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদুল জাহীদ।
অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম এ রকম একটি ব্যতিক্রমি আয়োজনের জন্য বিপ্লবী সাংস্কৃতিক ঐক্যকে ধন্যবাদ জানান এবং পহেলা অগ্রহায়ন আদি নববর্ষের খোঁজ এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তর গবেষণার আহ্বান জানান।
সেমিনারে আবৃত্তি শিল্পী ও গবেষক নাসিম আহমেদ বলেন, পহেলা অগ্রহায়ন নতুন একটি উৎসব হিসেবে চালু হোক। বৈশাখ এখন আমাদের নগর জীবনের সংস্কৃতির উৎসব হিসেবে যোগ হয়েছে। ফলে এখানে যোগ হয়েছে বিভিন্ন সংস্কৃতির মিশ্রণ।
জানা যায়, বাংলার নববর্ষ ছিল পহেলা অগ্রহায়ণ। বাংলা বছরের পঞ্জিকায় যে ১২টি মাস আছে, তার মধ্যে ১১টিই নক্ষত্রের নামে। এ ক্ষেত্রে ‘বৈশাখ’ বিশাখা নক্ষত্রের নামে, ‘জ্যৈষ্ঠ’ জ্যাষ্ঠা নক্ষত্রের নামে, ‘আষাঢ়’ আষাঢ়ার নামে এবং এভাবে শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র যথাক্রমে শ্রবণা, পূর্বভাদ্রপদা, অশ্বিনী, কৃত্তিকা, পৌষী, মঘা, ফাল্গুনী ও চিত্রার নামে। যে মাসটি নক্ষত্রের নামের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, সেটি হচ্ছে অগ্রহায়ণ; আর এই নামটির সঙ্গেই মিশে আছে বাংলার কিছু ইতিহাস, কিছু স্মৃতি এবং কিছু বিস্মৃত হয়ে যাওয়া তথ্য। ফলে অগ্রহায়ণকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা।
আবৃত্তিশিল্পী সারমিন ইসলাম জুঁইয়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী সাংস্কৃতিক ঐক্যের সদস্য সচিব কল্লোল শরিফী। এছাড়া আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী সাংস্কৃতিক ঐক্যের আহ্বায়ক মৃন্ময় মিজান।