দেশে ইজতেমা একবারই হবে, দুবার নয়: মহাসম্মেলনে ইসলামি বক্তারা
সাদপন্থিদের আর গাজীপুরের টঙ্গীতে আলাদা ইজতেমার আয়োজন করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ইসলামি মহাসম্মেলনে অংশ নেওয়া এক মুসল্লি। বাংলাদেশে ইজতেমা একবারই হবে, দুবার নয় বলে ঘোষণা দিয়েছেন তাবলিগ ও কওমির শীর্ষ আলেমরা। তারা বলেছেন, গাজীপুরের টঙ্গীতে ইজতেমার মাঠ ও ঢাকার কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ জামাতের দিল্লির মাওলানা সাদপন্থীদের আর ঢুকতে দেওয়া হবে না।
এ সময় ভারতীয় আলেম মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়ে কওমি আলেমরা বলেন- মাওলানা সাদ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেন। যদি স্বঘোষিত আমির সাদকে বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হয়, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারকেই দেশ ছেড়ে পালাতে হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন তারা।


আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী মহাসম্মেলন থেকে এ হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।
এর আগে ভোর থেকেই ইসলামি মহাসম্মেলনে যোগ দিতে শুরু করেন কওমি আলেম ও তাদের ছাত্ররা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। সকাল ৯টা থেকে সম্মেলন শুরু হয় এবং বেলা সোয়া ১টার দিকে শেষ হয়।
সম্মেলনে শীর্ষ আলেমরা বলেন, মানুষ কখনো নকল জিনিস গ্রহণ করে না। নকল বন্ধ করা সরকারের দায়িত্ব। নকল ধারার তাবলিগ চলতে পারে না। ফ্যাসিবাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নকল তাবলিগ নানা সুবিধা নিয়েছে। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের আশপাশেও ঘুরঘুর করছে। তাদের প্রতিহত করতে হবে।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে স্বঘোষিত আমির সাদ ও তার অনুসারীরা বিশৃঙ্খলা করার পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা কোনোভাবেই সেটি হতে দেব না। তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্র যেকোনো মূল্যে আমরা ব্যর্থ করে দেব।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলব, আপনারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। আমরা আপনাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। আপনাদের মনে রাখতে হবে, ছাত্রজনতার আন্দোলনে অনেক ওলামায়ে কেরাম শাহাদাতবরণ করেছেন। আমরা শাপলা চত্বরে জীবন দিয়েছি। আওয়ামী জালিম সরকারের অনেক অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছি।
বিশিষ্ট এই ইসলামি ব্যক্তিত্ব আরও বলেন, বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে আজকের সম্মেলন থেকে ওলামায় কেরামের পক্ষ থেকে যে ঘোষণা দেওয়া হবে, সরকারকে সেই নির্দেশনা মানতে হবে। এর বাইরে কারও সিদ্ধান্ত তৌহিদী জনতা মেনে নেবে না।
এ সময় মাওলানা আব্দুল হামিদ (পীর মধুপুর) বলেন, বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে সরকার দুই পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে। আমি বলব- কিসের পরামর্শ, এই সম্মেলন থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সরকারকে এটাই বাস্তবায়ন করতে হবে। ভিন্ন কোনো চিন্তা করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারকে সহযোগিতা করব। সরকারকেও আলেমদের সহযোগিতা করতে হবে। নয়তো পূর্ববর্তী সরকারের মতোই তাদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে। স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যদি বেয়াদবকে বাংলাদেশে আসতে দেয়, তাহলে সরকারকেও পালিয়ে যেতে হবে।
এদিকে, ২০১৯ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রথম পর্বে শুরায়ি নেজামের অধীনে তাবলিগের সাথী, আলেম-উলামা ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন এবং দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সাদের অনুসারীরা অংশ নেন। তবে এবার মাওলানা সাদের অনুসারীরা দাবি করছেন, তারা প্রথম পর্বে ইজতেমা করতে চান। এই দাবি নিয়ে শুরায়ি নেজামের তাবলিগের সাথী, কওমি মাদরাসার আলেম-উলামা ও সাধারণ মানুষ বিরোধিতা করেন এবং তাদের পক্ষ থেকে ইসলামি মহাসম্মেলনের আয়োজন করা হয়।