ডিজিটাল সুরক্ষা সম্মেলন করলো বিটিআরসি: সোশ্যাল মিডিয়া অপরিহার্য হাতিয়ার

তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক:তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৪:৩৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী বলেছেন, বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া শুধু বিনোদন বা নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক ক্ষমতায়ন ও নাগরিক সম্পৃক্ততার জন্য অপরিহার্য হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ডিজিটাল সুরক্ষা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বিটিআরসি ও টিকটকের যৌথ আয়োজনে হয় এই ডিজিটাল সম্মেলন।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে কমিশন। তবে সরকার সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে চায় না, বরং ব্যবহারকারীদের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে চায়, যেখানে তারা নিজেরাই ক্ষতিকর ও বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট সম্পর্কে সচেতন থাকবে।

তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা বৃদ্ধির অর্থ প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করা নয়। বরং, আমাদের লক্ষ্য এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন বিকশিত হবে এবং ব্যবহারকারীরা ক্ষতিকারক কনটেন্ট ও প্রতারণামূলক কার্যক্রম থেকে সুরক্ষিত থাকবে।

দিনব্যাপী এই সম্মেলনে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং ডিজিটাল ইনফ্লুয়েন্সাররা অংশ নেন। সম্মেলনে ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ, অনলাইন নিরাপত্তা, ডিজিটাল সাক্ষরতা, ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা এবং দায়িত্বশীল ডিজিটাল আচরণ নিয়ে আলোচনা করা হয়।

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী।

বক্তারা প্রোপাগান্ডার ফ্যাক্ট-চেকিং, ভুক্তভোগীদের স্ক্রিনশট সংরক্ষণ, লিংক রক্ষা এবং ঘৃণাসূচক বক্তব্য (হেট স্পিচ) প্রতিরোধে কন্টেন্ট নির্মাতাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেন।

Nagad

বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল উর রহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বিটিআরসি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে নিয়মিত আলোচনায় যুক্ত থাকে, যাতে তারা বাংলাদেশের ডেটা সুরক্ষা বিধি মেনে চলে। আমাদের মূল লক্ষ্য এমন একটি কাঠামো তৈরি করা, যেখানে ব্যবহারকারীর ডেটা দায়িত্বের সঙ্গে পরিচালিত হয় এবং সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়।

টিকটকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক হেড অব পাবলিক পলিসি অ্যান্ড গভর্নমেন্ট রিলেশনস ফেরদৌস আল মোত্তাকিন।

তিনি আরও বলেন, সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে মাল্টি-স্টেকহোল্ডার অ্যাপ্রোচ প্রয়োজন। এজন্য বিটিআরসি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এবং প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। পাশাপাশি, দেশব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

সম্মেলনে টিকটকের আউটরিচ অ্যান্ড পার্টনারশিপ ম্যানেজার সিদরা জলিল জানান, নীতিমালা লঙ্ঘনের কারণে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে আপলোড করা ১ কোটি ১৬ লাখ ভিডিও সরিয়েছে প্ল্যাটফর্মটি। এর মধ্যে ৯৯.৬% ভিডিও স্বয়ংক্রিয়ভাবে এবং ৯৬.৭% ভিডিও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুছে ফেলা হয়েছে।

টিকটকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক হেড অব পাবলিক পলিসি অ্যান্ড গভর্নমেন্ট রিলেশনস ফেরদৌস আল মোত্তাকিন বলেন, ব্যবহারকারীর নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে টিকটক।

স্ট্রাটেজম প্রিন্সিপাল আবু নাজাম মোহাম্মদ তানভির হোসেনের সঞ্চালনায় সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন— বাংলাদেশ পুলিশের সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন-এর পুলিশ সুপার খালেদা বেগম, ডিজিটাল রাইটস ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ চৌধুরী, সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর মাহিম আহমেদ।

এছাড়া, প্যানেল আলোচনায় সরকারি প্রতিষ্ঠান, প্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞ এবং ডিজিটাল ইনফ্লুরন্সাররা অনলাইন নিরাপত্তা, দায়িত্বশীল কনটেন্ট তৈরি এবং সাইবার হুমকি মোকাবিলার কৌশল সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ তুলে ধরেন। সামিটে টিকটকের সর্বশেষ নিরাপত্তা বা সেফটি ফিচার, শিক্ষামূলক উদ্যোগ এবং বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বিটিআরসি’র সাথে টিকটকের কার্যক্রমও তুলে ধরা হয়।