নারী নিরাপত্তা ও উগ্রবাদ মোকাবিলায় সরকারের সতর্কতা জরুরি: তারেক রহমান

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২০, ২০২৫

গণতান্ত্রিক সরকার গঠনে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনকেই সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেবে—এমন জনপ্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বুধবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে এক ইফতার মাহফিলে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেন, একটি রাষ্ট্রে একটি সরকারের মেয়াদ নির্দিষ্ট। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক নীতি ও ব্যবস্থাপনা দীর্ঘমেয়াদি। সুতরাং রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী ও টেকসই কার্যকর রাখতে জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ দেড় দশক ধরে জনগণ ক্ষমতাহীন। এবার তারা নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে প্রস্তুত। গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনকেই সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেবে—এটাই গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রত্যাশা।

তারেক রহমান বলেন, একটি বৈষম্যহীন ও নিরাপদ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি নির্বাচিত জাতীয় সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও রাজনীতি মেরামতের কাজ করবে। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে, যা অতীতেও আমরা জাতির সামনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।

তিনি নেতা-কর্মী ও গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনতার গণঅভ্যুত্থানে যে রাজপথ গড়ে উঠেছে, সেটির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। স্বাধীনতা-প্রিয় জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না ইনশাআল্লাহ।

নারী ও শিশু নির্যাতনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তারেক রহমান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নারী ও শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে দেশকে এগিয়ে নেওয়া অসম্ভব। সরকার, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরির দিকে বেশি মনোযোগী থাকার কারণে মা-বোনদের নিরাপত্তা সংকটে পড়ছে কি না, সেটি গভীরভাবে ভাবার প্রয়োজন আছে।

Nagad

তিনি আরও বলেন, ধর্মীয় উগ্রবাদীদের অপতৎপরতা ও চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে উগ্রবাদী গোষ্ঠী ও ফ্যাসিবাদী অপশক্তি গণতন্ত্রের কবর রচনা করবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ইমেজ সংকটে পড়তে পারে।

‘গণতন্ত্র ছাড়া বিকল্প নেই’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়েছে। সংস্কার প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে গেছে। সবাই এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতীয় ঐক্য বজায় রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।

‘ভারতের দালালি করে লাভ নেই’
এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমেদ বলেন, দেশটা আমাদের। ভারতের দালালি করে কোনো লাভ হবে না। আমাদের নিজেদের স্বার্থেই জাতীয় ঐক্য দরকার।

‘৪ দফায় ঐক্য চাই’
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের জন্য জাতীয় ঐক্যই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। আমাদের চারটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে—গণতন্ত্র, সুশাসন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জাতীয় নিরাপত্তা।

‘ফ্যাসিবাদী সরকার আর দেখতে চাই না’
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ফ্যাসিবাদী শক্তির দোসররা এখনো সমাজের নানা জায়গায় রয়ে গেছে। আমাদের রাজনৈতিক ঐক্য অটুট রাখতে হবে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় এই আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বক্তব্য রাখেন।

ইফতারে সিপিবির মোহাম্মদ শাহ আলম, রুহিন হোসেন প্রিন্স, খেলাফত মজলিশের আমির আল্লামা মামুনুল হক, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বহ্নিশিখা জামালী, বাংলাদেশ জাসদের শরীফ নুরুল আম্বিয়া, নাজমুল হক প্রধান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, গণ দলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মওলা চৌধুরী, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামী ঐক্যজোটের আব্দুর রকিব, বিকল্পধারা বাংলাদেশ নুরুল আমিন ব্যাপারী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, জাগপার খন্দকার লুৎফুর রহমান, রাশেদ প্রধান, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এসসিপি) সারজিস আলমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দীন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মীর নাসির, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, আবদুস সালাম পিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, আফরোজা খান রীতা, জহির উদ্দিন স্বপন, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, হাবিবুর রহমান হাবিবসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা ছিলেন