জিআই স্বীকৃতি পেল কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী খাদি

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৬:৩৭ অপরাহ্ণ, মে ১, ২০২৫

কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী খাদিসহ আরও ২৪টি পণ্যকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) সনদ দিয়েছে সরকার। বুধবার ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস উপলক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব সনদ হস্তান্তর করা হয়।

অনুষ্ঠানে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, “জিআই পণ্যের ন্যায্য বাজার ও মূল্য নিশ্চিত করতে হবে, যাতে স্থানীয় উদ্যোক্তারা উপকৃত হন। জিআই স্বীকৃতি কেবল পণ্যের নয়, ইতিহাস ও ঐতিহ্যেরও স্বীকৃতি।”

এ নিয়ে দেশে মোট ৫৫টি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেল। কুমিল্লার খাদির (সনদ নম্বর ৪০) পাশাপাশি এবার সনদ পেয়েছে—নরসিংদীর লটকন, মধুপুরের আনারস, ভোলার কাঁচাদই, সিরাজগঞ্জের গামছা, সিলেটের মনিপুরি শাড়ি, মিরপুরের কাতান, ঢাকাই ফুটিকার্পাস তুলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি, গোপালগঞ্জের ব্রোঞ্জের গহনা, সুন্দরবনের মধু, গাজীপুরের কাঁঠাল, বরিশালের আমড়া, কুমারখালীর বেডশিট, মুন্সীগঞ্জের পাতক্ষীরসহ আরও বেশ কিছু পণ্য।

কুমিল্লা খাদিঘরের স্বত্বাধিকারী প্রদীপ কুমার রাহা বলেন, ‘খাদি হাতে তৈরি হওয়ায় এতে প্রাকৃতিক অনুভূতি পাওয়া যায়। বিদেশিরাও কুমিল্লায় এসে খাদির কাপড় কেনেন। জিআই সনদের মাধ্যমে খাদির বাজার ও রপ্তানি সম্ভাবনা আরও বাড়বে।’

জেলা প্রশাসক মো. আনিরুল কায়সার জানান, ‘এর আগে কুমিল্লার রসমালাই জিআই স্বীকৃতি পেয়েছিল। খাদিও সেই কাতারে যুক্ত হলো। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা আরও কিছু পরিকল্পনা নিচ্ছি।’

খাদি এক ধরনের হাতে বোনা কাপড়। এটি তুলা থেকে হাতে কাটা সুতা দিয়ে তৈরি হয় এবং মূলত মোটা ধরনের হয়। ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় খাদি জাতীয় প্রতীকে পরিণত হয়। খাদির উৎপত্তি নিয়ে দুটি মত রয়েছে—একটি মতে ‘খাদ’ (গর্ত) থেকে কাপড় তৈরি হতো বলে নাম হয় ‘খদ্দর’ বা খাদি, আরেকটি মতে এটি গুজরাটি শব্দ ‘খদ্দর’ থেকে এসেছে।

Nagad

বাংলাদেশে কুমিল্লাতেই প্রথম খাদিশিল্প গড়ে ওঠে। ভাষা আন্দোলনের পর অধ্যাপক আখতার হামিদ খান কুমিল্লায় দি খাদি কো-অপারেটিভ অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে এই শিল্পের হাল ধরেন শৈলেন গুহ, বিজন গুহ এবং অরুণ গুহ। ১৯৯৪ সালে কুমিল্লার খাদি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে।

জিআই স্বীকৃতির ফলে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী খাদি এখন জাতীয় গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রবেশের দ্বারপ্রান্তে। এটি কেবল এক টুকরো কাপড় নয়—এটি আমাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং আত্মপরিচয়ের প্রতীক।