বিবিসির অনুসন্ধান: কোটা আন্দোলনে গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা
২০২৪ সালের কোটা-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরাপত্তা বাহিনীকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ‘লিথাল ওয়েপন’ ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সম্প্রতি প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এমন একটি ফোনালাপ ফাঁস করেছে প্রতিষ্ঠানটি, যা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
ফাঁস হওয়া ওই ফোনালাপে শেখ হাসিনাকে একজন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে কথোপকথনে বলতে শোনা যায়, ‘আমার নির্দেশনা দেওয়া আছে। ওপেন নির্দেশনা দিয়ে দিছি। এখন লিথাল ওয়েপন ব্যবহার করবে। যেখানে পাবে, সেখানে গুলি করবে।’-খবর বিবিসির।


বিবিসি জানায়, অডিওটি ফরেনসিকভাবে পরীক্ষা করে ব্রিটিশ সংস্থা ইয়ারশট এবং বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডি। উভয় সংস্থাই নিশ্চিত করেছে যে রেকর্ডিংটি অবিকৃত এবং এতে কোনো জালিয়াতির প্রমাণ নেই।
ফাঁস হওয়া এই রেকর্ডটি এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান মামলার অন্যতম প্রধান প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মামলাটি পরিচালিত হচ্ছে অনুপস্থিতিতে, কারণ বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।
জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সংঘর্ষে প্রায় ১,৪০০ জন মানুষ নিহত হন। সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা ঘটে ৫ আগস্ট, যখন ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে অন্তত ৫২ জন নিহত হন।
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য সংরক্ষিত কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শুরু হয় দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন। কিছুদিনের মধ্যে তা এক গণআন্দোলনের রূপ নেয়, যার ফলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটে। ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে ২০২৪ সালের শেষ দিকে।
এই আন্দোলন দমনে সরকার কঠোর অবস্থান নেয় বলে অভিযোগ ওঠে, যার অংশ হিসেবেই শেখ হাসিনার ওই কথোপকথনকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো।