আশুলিয়ায় নারী ভিক্ষুককে চোর ভেবে মধ্যযুগীয় নির্যাতন

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি:সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ১০:০০ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২

সাভারের আশুলিয়ায় চোর সন্দেহে ভিক্ষুক নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে ফেসবুকে ছবি ছড়িয়ে দিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। বিএনপি নেতার দাবি ওই নারীর কাছ থেকে একগুচ্ছ চাবি পাওয়ায় তাকে চোর বলে মনে হয়েছে।

শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬ টার দিকে ‘ধামসোনা ইউনিয়ন বিএনপি‌’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে পিছনে হাত বাধা অবস্থায় ওই নারীর তিনটি ছবি পোস্ট করা হয়। যেখানে কমেন্ট করে অনেকেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

এর আগে শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ওই নারীকে মারধর করা হয় বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী ওই নারীকে হাত বেধে মারধর করার পর ছেড়ে দেওয়ায় তার কোন পরিচয় পাওয়া যায় নাই। এমনকি অনেক খোঁজ করে সন্ধান না পাওয়ায় তার কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি।

নির্যাতনকারী ওই বিএনপি নেতা আশুলিয়ার বুড়িরবাজার এলাকার আমিরুল হক খানের ছেলে। তিনি আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক।

অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মাজহারুল ইসলাম খান বলেন, আমি মসজিদ কমিটির সভাপতি। দুপুরে মসজিদ থেকে বের হয়ে ওই নারীকে দেখতে পাই। সে সময় তাকে আমি দশ টাকা দিয়ে বাসায় চলে আসি। বাসায় আসার পরে আমার স্ত্রী গেটের সামনে এক নারীকে দেখতে পেয়ে আমাকে জানায়। আমি নিচে যাওয়া মাত্র ওই নারী ভিতরে চলে আসেন এবং ভিক্ষা চায়। পরে দশ থেকে বিশ টাকা আমার স্ত্রীকে দিতে বলি। এর পর আমার মনে পড়ে তাকে মসজিদের সামনে দেখেছি। আমার স্ত্রী টাকা আনতে গেলে দরজা খোলা পেয়ে আমার ভাড়াটিয়ার ঘর থেকে ব্যাগ নিয়ে দৌড় দেয়। পরে আমি ওই নারীকে ধরে ভাড়াটিয়াদের ডেকে হাত বাঁধতে বলি।

Nagad

এসময় তাকে তল্লাশি করে এক গুচ্ছ চাবি পাওয়া যায়। এছাড়া ওই নারীকে দেখে নেশাখোর মনে হয়েছে। তার কাছে একটি গুলে কৌটা পাওয়া গেছে।

এসময় পোলাপানদের তার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দিতে বলি। তাকে দেখে আমার খুব মায়া লাগায় পুলিশে না দিয়ে ছেড়ে দেই।

তবে তিনি নারীকে চোরের অপবাদ দিয়ে হাত বেধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করতে পারেন কি না এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেন নি।

এব্যাপারে ব্যারিস্টার হাসান ইমাম বলেন, যদি ওই নারী অপরাধ করেও থাকেন তাহলে প্রশাসনকে অবিহিত করতে হবে। প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। যেহেতু ৯৯৯ এ এখন সহযোগিতা চাওয়া যায় সেহেতু সহজেই মানুষ এখন সেবা পাবেন। এছাড়া কোন অপরাধী যদি নারী কিংবা শিশু হয় তাহলে তার নাম পরিচয় এবং ছবি কোন অবস্থাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না। আর ওই নারীর কোন অপরাধ প্রমাণ হয় নি। চাইলেই ভুক্তভোগী নারী মামলা করতে পারবেন।

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম বলেন, বিষয়টি দৃষ্টিগোচরে এসেছে। এব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।