স্বাদে ও ঘ্রাণে অনন্য গুঠিয়ার সন্দেশ…

ছবি: সংগৃহীত

বরিশালের গুঠিয়ার দীর্ঘ ৬০ বছরের ঐতিহ্য গুঠিয়ার সন্দেশ স্বাদে ঘ্রাণে এক অনন্য ও দেশ জোড়া খ্যাতিতে আজ বিখ্যাত গুঠিয়া। এই সন্দেশে- উপরে কিশমিশ দেওয়া। দূর থেকে দেখলে মনে হয় ডালিতে ঝরা শিউলি ফুল সাজিয়ে রাখা। একটু কাছে এলে টাটকা গরুর দুধের ঘ্রাণ। অনন্য স্বাদের এই সন্দেশের নামকরণ এলাকার নামেই। দেশজোড়া সেই সন্দেশের খ্যাতি।

গুঠিয়ার সন্দেশ নামে পরিচিত এই সন্দেশ বরিশালের প্রায় ৬০ বছরের ঐতিহ্য। নাম শুনলেই সবার মাথায় চলে আসে খাঁটি ছানা দিয়ে তৈরি এই খাবারটির লোভনীয় স্বাদের কথা। অনেকের মতে গুঠিয়া ইউনিয়নটি আজ খ্যাতি লাভ করেছে এই সন্দেশের জন্যই। বরিশাল থেকে গুঠিয়া ইউনিয়নের দূরত্ব প্রায় ১৭ কিলোমিটার। দূরত্বের কথা ভুলে ভোজনবিলাসীরা ছুটে যান এই সন্দেশের স্বাদ নিতে। কারণ অত্যন্ত মুখরোচক এই সন্দেশে খাঁটি ছানা ও চিনি ছাড়া অন্য কিছুই ব্যবহার করা হয় না। এই সন্দেশের আরও বিশেষত্ব হলো এর থেকে গরুর টাটকা দুধের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার একটি ইউনিয়নের নাম গুঠিয়া। বেশ বছর কয়েক আগে এস সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টু’র প্রতিষ্ঠিত বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও কমপ্লেক্সের জন্য বাংলাদেশ সহ বিশ্বে আলোচনায় এসেছে এই এলাকাটি। কিন্তু গুঠিয়ার সুখ্যাতি সুস্বাদু এই সন্দেশের জন্য।

জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া থেকে সন্দেশ তৈরির কৌশল শিখে আসেন গুঠিয়া এলাকার সতীশ চন্দ্র দাস নামের এক ময়রা। সেই কৌশলের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে তিনি ১৯৬২ সালে তৈরি করেন এই সন্দেশ, যা এখন গুঠিয়ার সন্দেশ নামে পরিচিত। সতীশ চন্দ্র বহু বছর আগে কলকাতায় চলে যান এবং সেখানেই মারা যান। কিন্তু তার বিখ্যাত সন্দেশের ঐতিহ্য ধরে রাখেন এখানকার বেশ কয়েকজন ময়রা। বাদশা হাওলাদার ছিলেন তাদেরই একজন। সতীশের রেসিপিতে সন্দেশ তৈরি করে এর খ্যাতি দেশজুড়ে ছড়িয়ে দেন মূলত বাদশা হাওলাদার। পরে বাদশার ছেলে শাওন হাওলাদারের হাতে ব্যবসা ছেড়ে দেন। শাওন বাবার দেখানো পথে হেঁটেই ধরে রেখেছেন ঐতিহ্য। বাবার কাছ থেকে বিখ্যাত এই সন্দেশের প্রস্তুত প্রণালি শিখেছেন শাওন হাওলাদার।

এ প্রসঙ্গে শাওন হাওলাদার বলেন, পৌষ, মাঘ ও বৈশাখে সন্দেশের চাহিদা বাড়ে। ‘দুধ, চিনির দাম বেড়েছে। সন্দেশের কেজি বর্তমানে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। কেজিতে ২৫টির মতো সন্দেশ হয়। বেশি লাভ থাকে না। তবু ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে মানের সঙ্গে আপস করি না। কারণ, এর সঙ্গে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য মিশে আছে।’

শাওন জানালেন সন্দেশ তৈরির প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, সাধারণত ৬-৭ কেজি দুধে ১ কেজি ছানা পাওয়া যায়। সেই ছানার সঙ্গে ১ কেজি চিনি মিশিয়ে অল্প জাল দিতে হয়। ২০-৩০ মিনিট পর পাকিয়ে অল্প আঁচে ৫ মিনিট রাখলেই কাঁচামাল তৈরি। তা পরিমাণমতো নিয়ে কাঠের ওপরে রেখে সন্দেশের আকার দেওয়া হয়। সন্দেশ তৈরিতে পরিমাণমতো আঁচ ও পাকই হলো মূল। গুঠিয়া বাজারে মাত্র ৬-৭ জন এখনও এই সন্দেশের ঐতিহ্য আঁকড়ে আছেন। তাদের মধ্যে পরিমল চন্দ্র,অমল ময়রা, শ্যামল চন্দ্র ভদ্র,টিটুল হাওলাদার,জালাল হাওলাদার অন্যতম।

Nagad

এখানের ময়রারা বললেন, খাঁটি ছানা ও চিনি ছাড়া অন্য কিছু ব্যবহার না করায় এই সন্দেশ সুস্বাদু। বর্তমানে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন দোকানে এই গুঠিয়ার সন্দেশ পাওয়া গেলেও সেগুলো আসল কিনা তা নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন। ফলে সিংহভাগ ক্রেতাই আসল সন্দেশের খোঁজে বরিশাল শহর থেকে গুঠিয়া সেতু সংলগ্ন বাজারে ছুটে যান সন্দেশ কিনতে। পার্শ্ববর্তী বানারীপাড়া, বাবুগঞ্জ ও ঝালকাঠিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এখানে সন্দেশ ক্রয় করতে আসেন। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মরতরা গ্রামের বাড়িতে আসলে পরিবারের সদস্য ও শুভাকাক্ষীদের জন্য গুঠিয়ার সন্দেশ ক্রয় করে নিয়ে যান। দেশ থেকে স্বজনরা বিদেশেও প্রিয়জনের জন্য সন্দেশ পাঠান।