বাজার সিণ্ডিকেটকারীরা ফৌজদারী অপরাধ সংঘটিত করেছে, বিচারের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৩:৫৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২

বাজার সিণ্ডিকেটকারীরা ফৌজদারী অপরাধ সংঘটিত করেছে। আর এ জন্য ,দ্রুত ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারকার্য পরিচালনার দাবি

মঙ্গলবার ( ২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১ ঘটিকায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ২য় তলার সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের উদ্যোগে “চাল, ডিম ও নিত্যপণ্যের বাজার সিণ্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে করণীয়” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সংগঠনের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম খোরশেদ আলম খান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার, ভোক্তা কন্ঠের সম্পাদক আব্দুল হান্নান, জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মো. সিরাজুজ্জামান, সারাবাংলাডটনেট এর সিনিয়র করসপন্ডেন্ট এমদাদুল হক তুহিন।

অতিথি বক্তব্যে সাইফুল হক বলেন, রাজনৈতিক দলগুলির নাগরিক বা ভোক্তা অধিকার নিয়ে সোচ্চার হতে দেখা যায় না। এ অভিযোগ সত্যি। আমরা দেখেছি ব্যবসায়ীদেরকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে দেয়া হয়েছে। ফলে এরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য বাণিজ্য নিজের সুবিধায় নিয়ে গেছে। দেশে এমন পরিস্থিতি যে যদি ৩০ মিনিট বৃষ্টি হয় তাহলে এর কারণে বাজারে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি হয়। খাদ্য মজুতের পরিমান যে কম তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকেই ব্যবসায়ীদের আগে ভাগে জানিয়ে দেওয়া হয়। তার মানে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং কর্মকর্তারা এই সিণ্ডিকেট বাণিজ্যের সাথে জড়িত তা প্রমাণিত।

গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, যে সরিষা দিয়ে ভুত তাড়ানো হবে সেই সরিষার মধ্যে ভুত রয়েছে। কতিপয় প্রতিষ্ঠান মিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ব্যবসায়ীরা মুনাফা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের নিয়ন্ত্রন করা সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অন্যতম দায়িত্ব। ভোটাধিকারের যেমন জবাবদিহীতা নাই তেমনিভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণেও সরকারের মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলির জবাবদিহীতা নাই। তিনি বলেন, খোরশেদ আলম খানের নেতৃত্বে অটো রাইস ওনার্স এসোসিয়েশনের পাশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় না দাঁড়িয়ে উল্টো তাকে সরিয়ে সিণ্ডিকেটকারীদের বসাতে চায় সরকার। তখন বুঝতে হবে সরকার নিজেই এই সিণ্ডিকেটকারীদের পৃষ্ঠপোষক।

তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্র যতক্ষণ না পর্যন্ত বাজারে নিজের সক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করবে ততক্ষণ পর্যন্ত বাজারের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

Nagad

অটো রাইস মিল ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি খোরশেদ আলম খান বলেন, অসৎ ব্যবসায়ীরা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, রশীদ গং বাজারে কারসাজি করেছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, মন্ত্রী যখন মন্ত্রণালয়ে রশিদ বিল্লালকে ডেকে বলেন চালের দাম বাড়লো কেন ? তখন তারা উত্তরে বলেন কাল থেকে ৫ টাকা কমবে। ঠিক পরেরদিন ২ টাকা করে বাজারে দাম কমলো। এতেই প্রমাণিত হয় কারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সোসিয়েশনকে দায়িত্ব দিয়ে জবাবদিহীতার আওতায় আনতে হবে।

ভোক্তাকন্ঠের সম্পাদক আব্দুল হান্নান বলেন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে গুরুতর অপরাধীকে লঘুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। এদেরকে শাস্তিমূলক কোন আইনের অধীনে এনে শাস্তি প্রদান করা হয়নি। বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার নিয়ন্ত্রণ নীতি উদাহরণ হিসেবে বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি সিরাজুজ্জামান বলেন, ভেজাল বিরোধী জরিমানার পরিমান আরো বৃদ্ধি করতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রীর বিতর্কিত ভূমিকা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টের পাশাপাশি জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলেছে। তিনি বাজার মনিটরিং জোরদার করার পাশাপাশি বিতর্কিত ব্যক্তিদের দায়িত্ব থেকে বাদ দিতে অনুরোধ করেন।
সারাবাংলা ডটনেটের সিনিয়র করসপনডেন্ট ইমদাদুল হক তুহিন বলেন, বাজার মনিটরিং এ দায়িত্বে কে আছে এই প্রশ্নটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবকে করেছিলাম। তিনি উত্তর দিতে পারে নাই। বাস্তবে বাজার মনিটরিং কে করছে তা কেউ জানে না। এককথায় এ কথা প্রমাণিত হয় বাণিজ্য, কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে।

পোল্ট্রি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, পোল্ট্রি ব্যবসা এখন নিয়ন্ত্রণ করে মুষ্টিমেয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এদের কারণেই ১ লাখ ৬০ হাজার পোল্ট্রির ফার্ম থেকে এখন ৬০ হাজারে পরিণত হয়েছে। এরা কথায় কথায় খাবার ও মুরগীর বাচ্চার দাম বাড়ায়। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা না করে কতিপয় শিল্পগোষ্ঠিকে সহায়তা করে। এর ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে আগামীদিনে দেশ থেকে পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। একটি ডিমের দাম দাঁড়াবে ২০ টাকা। তবু মানুষকে খেতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবত বাজারের সিণ্ডিকেট ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু বাজারে পণ্যের মূল্য না কমে দিনদিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজারে চাল, ডিম, টয়লেট্টিজ সামগ্রী, ভোজ্য তেলসহ এমন কোন পণ্য নাই যেখানে সিণ্ডিকেটের দৌরাত্ম নেই। আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে বাজার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, আরো মামলা চলমান রয়েছে। এর জন্য আমরা প্রতিযোগিতা কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি প্রতিযোগিতা কমিশনকে এসকল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।